ভূমিকম্পের শক্তি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের ভয়াবহ তথ্য
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে অনুভূত শক্তিশালী ভূমিকম্পটিকে বিশেষজ্ঞরা গত তিন দশকের মধ্যে বাংলাদেশের ভেতর ঘটিত সবচেয়ে শক্তিশালী কম্পন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
নরসিংদীর মাধবদী এলাকায় উৎপত্তি হওয়া এই ভূমিকম্পের মাত্রা উৎপত্তিস্থলে ছিল রিখটার স্কেলে ৫.৭—যা দেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে তীব্র ঝাঁকুনি তৈরি করেছে বলে গবেষকেরা জানিয়েছেন।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুবায়েত কবির জানান, এই ভূমিকম্পে নিঃসৃত শক্তি তুলনীয় ঐতিহাসিক হিরোসিমা–নাগাসাকিতে নিক্ষিপ্ত একটি পারমাণবিক বোমার শক্তির সাথে।
তার ভাষায়, গত ৩০ বছরে দেশের ভেতর এমন শক্তিশালী ভূমিকম্প আর হয়নি।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা ও আশপাশ অঞ্চলে এ মাত্রার ভূমিকম্প তার দুই দশকের পেশাগত জীবনে কখনও দেখা যায়নি। মধুপুর ফল্টসহ দেশের বিভিন্ন সক্রিয় ভূগর্ভস্থ ফাটলে দীর্ঘদিন ধরে বড় ধরনের ভূমিকম্প না হওয়ায়—বিশেষজ্ঞদের মতে—ঝুঁকি আরও বাড়ছে।
ভূমিকম্পের পর পরিস্থিতি মূল্যায়নে তৎক্ষণাৎ নির্দেশনা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এক বিবৃতিতে তিনি জানান, সার্বিক অবস্থা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং মাঠপর্যায়ে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে অবিলম্বে কাজে নেমে পড়তে বলা হয়েছে।
কম্পন শুরু হতেই রাজধানীজুড়ে বহুতল ভবন দুলতে থাকলে আতঙ্কে ঘর-বাড়ি ও অফিস থেকে রাস্তায় বেরিয়ে আসে হাজারো মানুষ। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও একই ধরনের তীব্র ঝাঁকুনি অনুভূত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির সর্বশেষ তথ্য জানালো ফায়ার সার্ভিস
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির গভীরতা ছিল প্রায় ১০ কিলোমিটার, যা তুলনামূলক অগভীর হওয়ায় ঝাঁকুনি বেশি অনুভূত হয়েছে।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সারাদেশে ৪ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ঢাকার কসাইতলী এলাকায় পাঁচ তলা ভবনের রেলিং ভেঙে নিচে পড়ে তিন পথচারী নিহত হন। নিহতদের মরদেহ সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে রাখা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে, দেয়াল ধসে ফাতেমা নামের এক নবজাতক মারা যায়। আহত হয়েছেন নবজাতকের মা কুলসুম বেগম ও প্রতিবেশী জেসমিন বেগম।
ভূমিকম্পের স্থায়িত্ব ছিল প্রায় ২০ সেকেন্ড, যা সাম্প্রতিককালের তুলনায় অস্বাভাবিক দীর্ঘ বলে জানিয়েছেন বুয়েটের পূরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদি আহমেদ আনসারী।
দেশীয় গবেষকেরা জানান, চলতি বছর দেশের ভেতর উৎপত্তি হওয়া সব ভূমিকম্পের তুলনায় আজকের কম্পন ছিল সবচেয়ে বড়। এর আগে ২০২৩ সালের ২ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে ৫.৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, আমাদের স্মৃতিতে দেশের ভেতর হওয়া এরকম তীব্র কাঁপুনি কখনো অনুভব করিনি।
তিনি আরও জানান, ভূমিকম্পটি সংঘটিত হয়েছে ভারতীয় ও বার্মা প্লেটের সংযোগস্থলে—যা সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, হাওর অঞ্চল হয়ে মেঘনা নদী পেরিয়ে বঙ্গোপসাগরে নেমে গেছে। এই অঞ্চলটিই দেশে বড় ভূমিকম্পের সম্ভাব্য ‘সাবডাকশন জোন’।
অধ্যাপক আনসারীর জরুরি সতর্কবার্তা অনুযায়ী, ঢাকার আশপাশে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ১ থেকে ৩ লাখ মানুষ হতাহত হতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত বা ধসে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে শহরের এক-তৃতীয়াংশ ভবন।
তিনি অবিলম্বে পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো জরিপ করে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








