অন্তর্বর্তী সরকার কোনো মিডিয়া বন্ধ করবে না: তথ্য উপদেষ্টা

ফাইল ছবি
অন্তর্বর্তী সরকারের নীতি কোনো গণমাধ্যম বন্ধ করা হবে না বলে জানিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, যেহেতু কোনো মিডিয়া বন্ধ হচ্ছে না, তাই নতুন গণমাধ্যমের অনুমতি দেওয়া হবে। তবে এটি পূর্ববর্তী নিয়মনীতি অনুযায়ী পরিচালিত হবে।
বুধবার (৮ অক্টোবর) বিকেলে সচিবালয়ে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মালিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স (অ্যাটকো)-এর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মাহফুজ আলম এসব তথ্য জানান।
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, গত ১৫ বছরে টেলিভিশন চ্যানেল রাজনৈতিকভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সেখানে পক্ষপাত লক্ষ্য করা গেছে। এই সরকারের নীতি হলো কোনো মিডিয়া বন্ধ করা হবে না। তাই নতুন মিডিয়াকে অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও যোগ করেন, আমরা চাই, বহু স্বর আসুক। যেহেতু কোনো মিডিয়া বন্ধ করব না, সেহেতু ফ্যাসিবাদবিরোধী যারা আছে তাদের মিডিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
মাহফুজ আলম সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও স্বার্থক প্রচারের জন্য সাংবাদিক সুরক্ষা আইন প্রণয়নকে সরকারের প্রথম অগ্রাধিকার হিসেবে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, সবার মতামতের ভিত্তিতে গণমাধ্যম কমিশন এবং সাংবাদিক সুরক্ষা আইন করতে চাই। নির্বাচন সামনে রেখে সাংবাদিকদের সুরক্ষা জরুরি।
সংবাদ প্রকাশের স্বাধীনতা ও স্বাস্থ্যকর মিডিয়া পরিবেশ নিশ্চিত করতে মিডিয়া মালিকদেরও নির্দেশ দেন তিনি।
মাহফুজ আলম বলেন, মিডিয়া মালিকরা কর রেয়াতসহ যেসব সুবিধা সরকার থেকে পাবেন, সেভাবে যেন তাদের কর্মীদেরও সুবিধা দেয়া হয়।
আরও পড়ুন: নতুন দুই টিভি’র লাইসেন্স পেলেন যারা
তিনি আরও জানান, সরকার মিডিয়া শিল্পে একটি ভালো পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে। মন্ত্রণালয় হস্তক্ষেপ না করে সেলফ রেগুলেশন কার্যকর করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করবে।
বর্তমানে দেশে অনুমোদিত ৫০টি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল রয়েছে। এর মধ্যে পূর্ণ সম্প্রচারে রয়েছে ৩৬টি, বাকি ১৪টি সম্প্রচারের অপেক্ষায় আছে। এছাড়া অনুমোদিত ১৫টি আইপি টিভি (ইন্টারনেট প্রটোকল টেলিভিশন) রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার একই প্রক্রিয়ায় নতুন দুটি টেলিভিশন চ্যানেল অনুমোদন দিয়েছে। অনুমোদিত চ্যানেল দুটি হলো:
নেক্সট টিভি: অনুমোদন পেয়েছে ২৪ জুন, প্রতিষ্ঠান ৩৬ মিডিয়া লিমিটেড এর নামে। ঠিকানা: পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার করাতিটোলা লেন। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক মো. আরিফুর রহমান তুহিন। পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন বগুড়ার বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম হাফিজুর রহমানের ছেলে এ কে এম গোলাম হাসনাইন, যিনি সৌদি প্রবাসী এবং সৌদি বিএনপির (পূর্বাঞ্চল) সভাপতি।
লাইভ টিভি: অনুমোদন পেয়েছে ১৪ জুলাই, মালিক: মিনার্ভা মিডিয়া লিমিটেড। মালিক আরিফুর রহমান, যিনি পূর্বে এনসিপির সদস্য ছিলেন তবে যোগ দেননি। ঠিকানা: ১৪৩ নম্বর সড়ক, গুলশান-১।
মাহফুজ আলম বলেন, আমাদের ৫২টি চ্যানেল আছে, যার মধ্যে সচল আছে ৩৪টি। যেসব নতুন গণমাধ্যমের আবেদন এসেছে, তারা মূলত নিউজ চ্যানেল চাইছে। আমি বলেছি, শিশুদের জন্য একটি চ্যানেল বা খেলার চ্যানেলের আবেদন করতে পারেন।
বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিক বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল অনুমোদনের জন্য আবেদন করতে পারেন। আবেদনপত্রের সঙ্গে যে কাগজপত্র জমা দিতে হয়: জাতীয় পরিচয়পত্র, আর্টিকেল অব মেমোরেন্ডাম, সার্টিফিকেট অব ইনকরপোরেশন, ট্রেড লাইসেন্স, আয়কর সনদ, ব্যাংক সলভেন্সি সনদ, প্রকল্প প্রস্তাব এবং চ্যানেল চালানোর সামর্থ্য রয়েছে এমন মর্মে ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারনামা।
আবেদন জমা হলে তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যাচাই করা হয়। লাইসেন্স পাওয়ার পর বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) থেকে ‘ফ্রিকোয়েন্সি ক্লিয়ারেন্স’ নিতে হয়। মূলত সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের ‘সবুজ সংকেত’ থাকলেই তরঙ্গ পাওয়া যায়।
তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম মন্তব্য করেন, নতুন গণমাধ্যম এলে প্রতিযোগিতা বাড়বে। সরকার চাই মিডিয়া শিল্পে একটি স্বাস্থ্যকর, স্বাধীন এবং বহুস্বরবাহী পরিবেশ গড়ে উঠুক।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি