News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২১:৩৮, ৩ অক্টোবর ২০২৫

জাতিসংঘে বাংলাদেশের ছয় সাফল্য: প্রেস সচিব

জাতিসংঘে বাংলাদেশের ছয় সাফল্য: প্রেস সচিব

ফাইল ছবি

নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৮০তম উচ্চপর্যায়ের অধিবেশনে অংশগ্রহণ শেষে দেশে ফিরেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই সফরে তিনি বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের ছয়জন নেতাসহ বাংলাদেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। 

সফর শেষে শুক্রবার (৩ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি স্ট্যাটাসে এই সফরের ছয়টি উল্লেখযোগ্য সাফল্য তুলে ধরেন।

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেন, বৈশ্বিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবিক নেতৃত্ব ও ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক সহযোগিতার ভিশন তুলে ধরেন। প্রেস সচিবের ভাষ্যমতে, এই সফর বাংলাদেশের দায়িত্বশীল বৈশ্বিক ভূমিকাকে আরও সুদৃঢ় করেছে।

১. গণতান্ত্রিক প্রতিশ্রুতির বার্তা
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা ও অংশগ্রহণমূলক শাসনব্যবস্থার প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতে সরকার প্রস্তুত রয়েছে। এই বার্তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষার অঙ্গীকার হিসেবে প্রতিফলিত হয়।

প্রতিনিধি দলে ছয়টি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা অংশ নেন, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এমন একটি সম্মিলিত সফর। তারা কূটনীতিক, প্রবাসী নেতৃবৃন্দ এবং ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এই উদ্যোগ বিশ্বকে বার্তা দিয়েছে যে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে ঐক্যবদ্ধভাবে এগোচ্ছে।

২. বৈশ্বিক নেতাদের সঙ্গে কৌশলগত সংলাপ
সফরকালে অধ্যাপক ইউনূস ইতালি, ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, আলবেনিয়া, কসোভো ও ভুটানের নেতাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল গণতান্ত্রিক শাসন, বাণিজ্য, জলবায়ু সহনশীলতা ও মানব উন্নয়ন।

তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস, শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্দি, ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল, জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল রাবাব ফাতিমা, বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা, নেদারল্যান্ডসের রানি ম্যাক্সিমা এবং আইএমএফ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার সঙ্গে বৈঠক করেন।

এছাড়া তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আয়োজিত এক নৈশভোজে অংশগ্রহণ করেন, যেখানে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূতের সঙ্গেও তার গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়, যা আঞ্চলিক সহযোগিতা ও বহুপাক্ষিক কূটনীতিতে বাংলাদেশের ভূমিকার গুরুত্ব তুলে ধরে।

আরও পড়ুন: নির্বাচন বানচালের কৌশল নিয়েছে পতিত স্বৈরাচার: প্রেস সচিব

৩. রোহিঙ্গা সংকটে মানবিক নেতৃত্ব
প্রধান উপদেষ্টার সফরের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু ছিল রোহিঙ্গা সংকট। তিনি এক মিলিয়নেরও বেশি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা প্রদানে বাংলাদেশের নেতৃত্বের ভূমিকা তুলে ধরেন।

জাতিসংঘ ও দাতা দেশগুলোর সঙ্গে বৈঠকে তিনি মিয়ানমারে নিরাপদ, স্বেচ্ছায় ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের জন্য নতুন বৈশ্বিক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। এ সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সহায়তা আদায় করতে সক্ষম হন।

৪. এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রস্তুতিতে জাতিসংঘের স্বাধীন মূল্যায়ন আমন্ত্রণ
বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এবং অগ্রগতির স্বচ্ছতা প্রদর্শনে অধ্যাপক ইউনূস জাতিসংঘকে বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি বিষয়ে একটি স্বাধীন মূল্যায়ন পরিচালনার আমন্ত্রণ জানান। এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাসী অর্থনৈতিক যাত্রাপথ ও আন্তর্জাতিক মূল্যায়নের প্রতি উন্মুক্ততার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।

৫. নতুন অর্থনৈতিক কাঠামো ও কর্মসংস্থানের সুযোগ
সফরে বিদেশে কর্মসংস্থান ও শ্রম অভিবাসনের নতুন সম্ভাবনার দুয়ারও উন্মোচিত হয়। অধ্যাপক ইউনূস কসোভো, আলবেনিয়া ও ইউরোপের অন্যান্য দেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশি শ্রমশক্তির চাহিদা নিয়ে আলোচনা করেন। এই উদ্যোগ ভবিষ্যতে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন অংশীদার দেশের সঙ্গে জনসম্পর্ক মজবুত করবে।

৬. সহযোগিতামূলক ভবিষ্যতের ভিশন
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে অধ্যাপক ইউনূসের অংশগ্রহণ বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করেছে। তিনি তুলে ধরেন যে বাংলাদেশ একটি দায়িত্বশীল বৈশ্বিক অংশীদার, যা গণতান্ত্রিক শাসন, মানবিক সংহতি ও গঠনমূলক আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

এই সফরকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অবস্থান, কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং মানবিক নেতৃত্বের বার্তা বিশ্বমঞ্চে আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। প্রেস সচিব শফিকুল আলমের ভাষ্যমতে, এই সফর বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়