জলবায়ু-সহনশীল আবাসনে আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের আবাসন সংস্থা ইউএন-হ্যাবিট্যাটকে বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারণের আহ্বান জানিয়েছেন। 

শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তিনি এই আহ্বান জানান।

ড. ইউনূস ইউএন-হ্যাবিট্যাটের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ও নির্বাহী পরিচালক আনাক্লাউদিয়া রসব্যাকের সঙ্গে বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। বৈঠকে নগরায়িত এলাকায় সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ক্ষুদ্রঋণভিত্তিক আবাসন উদ্যোগ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর বৈশ্বিক প্রভাব নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, প্রতি বছর বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও নদী ভাঙনের ফলে হাজার হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়। এসব মানুষের জন্য টেকসই ও সাশ্রয়ী আবাসন সমাধান এখন অত্যন্ত জরুরি। 

তিনি দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় বারবার ক্ষতির শিকার জনগোষ্ঠীর জন্য বহুমুখী ও প্রেক্ষিতভিত্তিক আবাসন মডেল তৈরির প্রস্তাব দেন। 

উদ্ভাবনী নকশার উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ছাদের নকশা এমনভাবে করুন, যাতে তা বন্যার সময় নৌকার মতো ব্যবহার করা যায়।

ড. ইউনূস নাইরোবিভিত্তিক ইউএন-হ্যাবিট্যাটকে সারা বিশ্বের বস্তি, ফাভেলা ও অনানুষ্ঠানিক বসতিতে আবাসন, স্যানিটেশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সমন্বিত সমাধান খুঁজে দেখার আহ্বান জানান। 

পাশাপাশি তিনি নারীবান্ধব আবাসনের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, আমাদের আবাসন নকশায় অবশ্যই নারীদের চাহিদার দিকে নজর দিতে হবে এবং তাদের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করতে হবে।

আরও পড়ুন: দেশ গঠনে প্রবাসীদের সক্রিয় অংশ নেওয়ার আহ্বান ড. ইউনূসের

বৈঠকে বাংলাদেশের প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য টেকসই আবাসনের জরুরি প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা হয়। এ প্রসঙ্গে ড. ইউনূস নিউইয়র্কে আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠিতব্য উচ্চ পর্যায়ের জাতিসংঘ রোহিঙ্গা সম্মেলনে ইউএন-হ্যাবিট্যাটকে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানান।

তিনি আরও প্রস্তাব দেন যে, ইউএন-হ্যাবিট্যাটের ওয়ার্ল্ড আরবান ফোরামের মাধ্যমে প্রতি বছর জলবায়ু-সহনশীল ও সাশ্রয়ী আবাসন নকশা প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হোক। এই প্রস্তাবকে নির্বাহী পরিচালক রসব্যাক স্বাগত জানান।

রসব্যাক জানান, তিনি রোহিঙ্গা সম্মেলনে যোগ দিতে আগ্রহী এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের আমন্ত্রণে আগামী মাসগুলোতে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। 

তিনি বলেন, জলবায়ু সংকটে সামনের সারিতে অবস্থান করা বাংলাদেশের জন্য ইউএন-হ্যাবিট্যাটের শক্তিশালী উপস্থিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

রসব্যাক বাংলাদেশকে আগামী ১৭–১৯ অক্টোবর ইস্তানবুলে ‘জিরো ওয়েস্ট ফোরাম’ এবং আজারবাইজানের বাকুতে অনুষ্ঠিত পরবর্তী ওয়ার্ল্ড আরবান ফোরামে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানান।

বৈঠকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। জাতিসংঘ মহাসচিবের জিরো ওয়েস্ট উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে অধ্যাপক ইউনূস শহর ও বস্তিতে টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রযুক্তির প্রয়োগের ওপর জোর দেন।

নির্বাহী পরিচালক রসব্যাক ক্রমান্বয়ে আবাসন উন্নয়ন, উন্নত নগর পরিকল্পনা এবং আবাসন উদ্যোগে ক্ষুদ্রঋণের সংযোজনের গুরুত্বও উল্লেখ করেন।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আবাসন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ।