News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১০:৩৫, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

টেকসই উন্নয়নে বিশ্ব নেতাদের প্রতি ড. ইউনূসের আহ্বান

টেকসই উন্নয়নে বিশ্ব নেতাদের প্রতি ড. ইউনূসের আহ্বান

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্ব নেতাদের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে আরও কার্যকর অর্থায়নের আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। 

তিনি বলেন, চলুন আমরা এমন একটি মর্যাদা, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার অর্থনীতি গড়ে তুলি, যেখানে কেউ পিছিয়ে থাকবে না।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই আহ্বান জানান জাতিসংঘ সদর দফতরে বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত ‘টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্থিতিশীল বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রথম দ্বিবার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন: টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে অর্থায়নের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে। তিনি অনুষ্ঠানে পাঁচটি অগ্রাধিকার তুলে ধরেন, যা কার্যকর করা হলে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য, বৈষম্য ও আর্থিক অস্থিরতার সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর শোনার জন্য আমাদের প্রস্তুত হতে হবে। বাংলাদেশে আমরা বিশ্বাস করি, দারিদ্র্য একজনের স্বপ্নের পথে বাধা হতে পারে না। 

তিনি আরও উল্লেখ করেন, এই সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়া তার জন্য গর্বের বিষয়, যেখানে সম্ভাবনা ও দায়িত্ব একসঙ্গে রয়েছে।

ড. ইউনূস বলেন, চতুর্থ আন্তর্জাতিক অর্থায়ন সম্মেলনে নেওয়া অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য বছরে চার ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ ঘাটতি পূরণ করা চ্যালেঞ্জিং হলেও অপরিহার্য। 

তিনি বলেন, আমরা আমাদের ওপর নির্ভরশীল মানুষের কণ্ঠস্বর শোনার দায়িত্ব নিচ্ছি। বাংলাদেশে আমরা বিশ্বাস করি, দারিদ্র্য একজনের স্বপ্নের পথে বাধা হতে পারে না।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও সম্পদের ন্যায্য প্রবেশাধিকার হলো ন্যায়বিচারের মূল। একজন নারী যখন ব্যবসা শুরু করে, যুবসমাজ যখন সৌর শক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তি পায়, বস্তিবাসী শিশু যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায় এবং পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসেবা পায়— তখন পরিবর্তন বাস্তব ও টেকসই হয়।

আরও পড়ুন: এলডিসি থেকে উত্তরণের পথে ডব্লিউটিও’র সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানান, সেভিলে অঙ্গীকার একটি নতুন কাঠামো প্রদান করে, যা জোরদার করে দেশীয় সম্পদ উত্তোলন, অবৈধ অর্থ প্রবাহ প্রতিরোধ, উন্নয়ন ব্যাংকগুলোর ক্ষমতায়ন এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে। 

তিনি উল্লেখ করেন, সেভিলে অঙ্গীকার আমাদের পথপ্রদর্শক; মানবতা আমাদের সেই পথে যাত্রা করার আহ্বান জানায়।

তিনি পাঁচটি অগ্রাধিকার তুলে ধরেন, যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্থায়নকে শক্তিশালী করবে:

১. ন্যায্যভাবে দেশীয় সম্পদ উত্তোলন: আন্তর্জাতিক সহায়তার সমর্থন থাকা প্রয়োজন। কর ব্যবস্থা প্রগতিশীল, স্বচ্ছ এবং বহুজাতিক করপোরেশনগুলোর ন্যায্য অংশ নিশ্চিত করতে হবে। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক কর সহযোগিতা কাঠামোর আলোচনায় এই বৈষম্য দূর করতে হবে।

২. নবীন অর্থায়ন ও সামাজিক ব্যবসা: যৌক্তিক অর্থায়ন এবং এমন উদ্যোগে বিনিয়োগ করতে হবে, যারা লাভ পুনরায় সমস্যার সমাধানে বিনিয়োগ করে, যা চাকরি, অন্তর্ভুক্তি ও মর্যাদা নিশ্চিত করে।

৩. বিশ্ব আর্থিক কাঠামো ও ঋণ শাসন সংস্কার: উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আরও শক্তিশালী কণ্ঠস্বর দিতে হবে। ঋণকে কঠোরতার হাতিয়ার না করে, সেটিকে স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের উপায় হিসেবে রূপান্তর করতে হবে।

৪. স্বচ্ছতা, অবৈধ অর্থায়ন প্রতিরোধ ও নাগরিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা: জনগণ, বিশেষ করে যুবসমাজকে জানতে হবে কীভাবে সম্পদ ব্যবহার হচ্ছে, এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

৫. সবচেয়ে দুর্বলদের জন্য বিনিয়োগ ত্বরান্বিতকরণ: স্থিতিশীল বাসস্থান, জলবায়ু-বান্ধব কৃষি, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধান নিশ্চিত করতে হবে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই আহ্বান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দারিদ্র্য, বৈষম্য ও আর্থিক অস্থিরতার বিরুদ্ধে যৌক্তিক ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য উদ্দীপ্ত করার দিকে লক্ষ্য রাখে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়