রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার স্পষ্ট বার্তা
ছবি: সংগৃহীত
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বুধবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের তারিখ ও পরিবেশ নিয়ে সুস্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন এবং নির্বাচনের সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর আয়োজন নিশ্চিত করতে সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে অন্য দেশের থাবা মারার কোনো সুযোগ যেন না থাকে। এ জন্য নির্বাচন আয়োজনে সবার সর্বাত্মক সহযোগিতা চেয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আনন্দ ও উৎসবমুখর পরিবেশে এবারের নির্বাচন হবে। জীবনে কখনো ভোট দিতে পারেননি তাদের জন্যও ভালো অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে হবে। কেউ যেন বলতে না পারে যে আমাকে ভোট দিতে দেওয়া হয়নি।
প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, যারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নির্বাচন পর্যন্ত পৌঁছাতে দিতে চায় না, তারা যত রকমভাবে পারে বাধা দেবে। বাংলাদেশের সত্তাকে গড়ে তুলতে তারা বাধা দেবে। আমাদের চেষ্টা থাকবে নির্বাচন নিশ্চিত করার এবং ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই তা অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি আরও বলেছেন, নির্বাচিত সরকারের হাতে আমরা ক্ষমতা হস্তান্তর করব। এবারের নির্বাচন অনন্য হবে। এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্বাচন নয়, এটি দেশের সকল মানুষের ও রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচন। এই নির্বাচনের আকাঙ্ক্ষা হলো ভবিষ্যতের বাংলাদেশ নির্মাণ।
প্রেস সচিব শফিকুল আলম উল্লেখ করেছেন, প্রধান উপদেষ্টা আবার বলেছেন, প্রতি পদে পদে বাধা আসবে, সবার মনে দ্বন্দ্ব তৈরি করার চেষ্টা হবে। আমরা যেন সঠিক থাকি এবং সবাই একসঙ্গে সহযোগিতা করি।
দুর্গাপূজা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সবার দায়িত্ব হলো শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করা। গণ্ডগোল করতে চাইবে অনেকে, তারা সবরকম চেষ্টা করবে। এবারও সারাদেশে উৎসবমুখর দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
আরও পড়ুন: “নুরের ওপর হামলার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে”
মঙ্গলবার (০২ সেপ্টেম্বর) ৭টি রাজনৈতিক দল ও একটি সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
এর আগে রবিবার তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছেন তিনি। বৈঠকগুলোতে প্রধান উপদেষ্টা স্পষ্ট করেছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হবে। নির্বাচন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
বৈঠকগুলোতে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। তবে সব বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সব উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন না।
বিএনপির প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে প্রবেশ করে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা।
এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে তিনি জানান, প্রধান উপদেষ্টা নিশ্চিত করেছেন, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন হবে। বিএনপি আশা রাখে, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বিএনপি জানিয়েছে, লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপির প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, যা সম্পূর্ণ বৈধ এবং ব্যক্তিগত ব্যাপার। এছাড়া, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের ওপর হামলার বিষয়ে বিএনপি প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্বেগ জানিয়েছে এবং দ্রুত তদন্তের দাবি করেছে।
জামায়াতের প্রতিনিধিদল বিকাল সোয়া ৪টায় বৈঠকে অংশ নেন। ১ ঘণ্টার বৈঠক শেষে সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অবাধ নির্বাচন নিশ্চিত করেছেন। তবে কার্যকারিতার বিষয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন। লন্ডনে নির্বাচনের সময় ঘোষণা নিয়ে নিরপেক্ষতার প্রশ্ন তুলেছেন।
তিনি বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সময় নিয়ে দ্বিমত নেই, তবে জুলাই চার্টারের পূর্ণ বাস্তবায়ন প্রয়োজন। সরকারের উচিত এই চার্টারের ভিত্তিতে নির্বাচন আয়োজন করা। এছাড়া, প্রশাসনের বিভিন্ন স্থানে এখনও থাকা ফ্যাসিবাদী এবং সিভিলিয়ান, পুলিশ সদস্যদের সরানো এবং নিরপেক্ষ প্রশাসন গঠন জরুরি।
এনসিপির চার সদস্যের প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বলেন, আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে গণপরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত। এটি দীর্ঘদিনের একক ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবের সমাধান হিসেবে বিবেচিত হবে এবং নতুন সংবিধান প্রণয়নে সহায়ক হবে।
এনসিপি প্রধান উপদেষ্টাকে শহীদ ও আহতদের পুনর্বাসন, নিরাপত্তা এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে আটক ব্যক্তিদের দেশে ফেরত আনার জন্য সহযোগিতা চেয়েছে। এছাড়া, গুম কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
এনসিপি প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করারও অনুরোধ জানিয়েছে। এছাড়া, জাতীয় পার্টির কার্যক্রম স্থগিত করার পক্ষে মত প্রকাশ করা হয়েছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








