News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২০:০৩, ৩০ জুলাই ২০২৫

চামড়াশিল্পে ‘অপরাধ’ স্বীকার করলেন প্রধান উপদেষ্টা

চামড়াশিল্পে ‘অপরাধ’ স্বীকার করলেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় শিল্পখাতগুলোর মধ্যে অন্যতম চামড়াশিল্প নিয়ে দীর্ঘদিনের রাষ্ট্রীয় অবহেলার দায় স্বীকার করেছেন দেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। 

এ শিল্পের উপযুক্ত মূল্যায়ন না করাকে তিনি ‘অপরাধ’ হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, এই খাত থেকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকলেও আমরা তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছি। 

তিনি চামড়াশিল্পের দীর্ঘস্থায়ী সংকট নিরসনে অবিলম্বে একটি পৃথক ও বিশেষায়িত বৈঠক আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছেন।

বুধবার (৩০ জুলাই) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আয়োজিত একটি উচ্চপর্যায়ের পর্যালোচনা সভায় এই বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। 

সভাটি ছিল স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের প্রস্তুতি বিষয়ে। সভায় দেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারি দপ্তরসমূহের মাধ্যমে নেওয়া ১৬টি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়।

সভায় অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমাদের নিজেদের স্বার্থে, নিজেদের অর্থনীতির স্বার্থে এই কাজগুলো করে যেতে হবে। যেসব নীতিমালা-আইন কোনো কাজে আসছে না, সেগুলো পরিবর্তন করে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার পথ বের করতে হবে। এগুলো মৌলিক বিষয়। নিজেদের উত্তরণের জন্যই এ কাজগুলো আমাদের করে যেতে হবে। 

তিনি এলডিসি থেকে উত্তরণসংক্রান্ত কার্যক্রমকে গতিশীল রাখতে আগামী দুই মাসের মধ্যে আরেকটি পর্যালোচনা সভা আয়োজনের নির্দেশ দেন।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, এই সভায় ১৬টি সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনার মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চারটি, শিল্প মন্ত্রণালয় তিনটি, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) দুটি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তিনটি এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় চারটি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অগ্রগতি দেখিয়েছে।

আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে পাল্টা শুল্ক কমানোর ইঙ্গিত পেল বাংলাদেশ

সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান জানান, এনবিআর বর্তমানে ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো (NSW) বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে এবং এ প্রকল্পে ইতিমধ্যে ১৯টি সরকারি সংস্থা যুক্ত হয়েছে। আরও সংস্থাকে এই প্ল্যাটফর্মে সংযুক্ত করার উদ্যোগ চলছে। 

এছাড়া তিনি জানান, ২০২৩ সালে প্রণীত ট্যারিফ পলিসি বাস্তবায়নের জন্য একটি সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে এবং বাস্তবায়নের বিভিন্ন ধাপে অগ্রগতি হচ্ছে।

অন্যদিকে, সভায় তৈরি পোশাক শিল্প ছাড়া অন্যান্য রপ্তানিমুখী খাতে প্রণোদনা এবং ম্যানমেইড ফাইবার নির্ভর কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও আলোচনা হয়। এই খাতগুলোকে বৈচিত্র্যময় ও টেকসই রপ্তানির ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সরকার ও বেসরকারি খাতের মধ্যে আরও সমন্বয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়।

সভায় আরও আলোচনা হয় শিল্প অবকাঠামোর বিষয়েও। বিশেষভাবে আলোচনায় উঠে আসে সাভারের ট্যানারি ভিলেজে স্থাপিত ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) পূর্ণমাত্রায় চালু করার উদ্যোগ এবং মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় বাস্তবায়নাধীন এপিআই (অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট) পার্ক কার্যকরভাবে চালু করার অগ্রগতি। একই সঙ্গে ২০২২ সালে প্রণীত জাতীয় শিল্প নীতিমালা হালনাগাদে গৃহীত পদক্ষেপগুলো নিয়েও আলাপ হয়।

সভায় উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশিদ, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খানসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।

প্রধান উপদেষ্টার দিকনির্দেশনায় স্পষ্ট যে, বাংলাদেশ এখন আর চামড়াশিল্পসহ গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে অনিয়ম, নীতিহীনতা ও দূরদর্শিতার অভাব সহ্য করবে না। রাষ্ট্রের করণীয় নির্ধারণে তিনি যে স্বচ্ছ ও বাস্তববাদী ভাষা প্রয়োগ করেছেন, তা আগামীর নীতিনির্ধারণের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়