রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘে ৭ দফা প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার
ছবি: সংগৃহীত
দীর্ঘস্থায়ী রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র শান্তিপূর্ণ সমাধান হলো তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন—এ কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সংকট নিরসনে সাত দফা প্রস্তাব পেশ করেছেন।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি’ বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে তিনি এ প্রস্তাব তুলে ধরেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, গণহত্যা শুরুর আট বছর পরও রোহিঙ্গাদের দুর্দশা অব্যাহত রয়েছে, অথচ কার্যকর উদ্যোগের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক অর্থায়নও মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে।
তিনি বলেন, “রোহিঙ্গা সংকটের উৎপত্তি মিয়ানমারে এবং সমাধানও সেখানেই নিহিত। রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন বন্ধ এবং দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরু করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মির ওপর কার্যকর চাপ প্রয়োগ করতে হবে।”
প্রধান উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনই সংকটের একমাত্র টেকসই সমাধান। তিনি উল্লেখ করেন, আন্তর্জাতিক সুরক্ষা অব্যাহত রাখার তুলনায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় অনেক কম সম্পদের প্রয়োজন হবে এবং রোহিঙ্গারা সবসময়ই নিজ মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে আগ্রহী।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সংঘাত থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফেরত পাঠাতে হবে। বাংলাদেশ এই সংকটে সামাজিক, পরিবেশগত ও আর্থিকভাবে বিপুল চাপের মুখে রয়েছে।
অধ্যাপক ইউনূস আরও জানান, রোহিঙ্গা শিবির থেকে মাদক পাচারসহ নানা অপরাধমূলক কার্যক্রম বাংলাদেশের সামাজিক কাঠামোর জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। দেশের উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ—যেমন বেকারত্ব ও দারিদ্র্য—বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়া সম্ভব নয়।
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে প্রধান উপদেষ্টার সাত দফা প্রস্তাব:
রাখাইন অঞ্চলে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য একটি বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ প্রণয়ন।
মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মির ওপর চাপ সৃষ্টি করে রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা বন্ধ এবং সম্প্রতি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ও অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের টেকসই প্রত্যাবাসন শুরু।
রাখাইনে স্থিতিশীলতা আনতে আন্তর্জাতিক সহায়তা জোগাড় এবং তা পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক বেসামরিক উপস্থিতি নিশ্চিত করা।
রোহিঙ্গাদের রাখাইন সমাজ ও শাসন ব্যবস্থায় স্থায়ী অন্তর্ভুক্তির জন্য আস্থা গড়ে তোলা।
যৌথ প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনায় (Joint Response Plan) অর্থদাতাদের পূর্ণ সহায়তা নিশ্চিত করা।
জবাবদিহি ও পুনর্বাসনমূলক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
মাদক অর্থনীতি ভেঙে দেওয়া এবং আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমন।
আরও পড়ুন: “দুষ্কৃতকারীদের চেষ্টা ব্যর্থ করে শান্তিপূর্ণ হচ্ছে দুর্গাপূজা”
প্রধান উপদেষ্টা আহ্বান জানিয়ে বলেন, “বিশ্ব আর রোহিঙ্গাদের নিজ মাতৃভূমিতে ফেরার জন্য অপেক্ষায় রাখার সামর্থ্য রাখে না। আজই সংকট সমাধানে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করতে হবে।”
তিনি আশ্বস্ত করেন, বাংলাদেশ এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এসবি








