সাত দশকের নিষেধাজ্ঞা ভেঙে সৌদিতে প্রকাশ্যে মদ বিক্রি শুরু
ছবি: সংগৃহীত
সৌদি আরবে আইনগতভাবে এখনও মদ্যপান ও মদের বাণিজ্য নিষিদ্ধ হলেও সাম্প্রতিক বছরের সংস্কার উদ্যোগের অংশ হিসেবে রাজতন্ত্র ধীরে ধীরে বিধিনিষেধ শিথিল করছে। প্রায় সাত দশক পর এবার প্রথমবারের মতো অমুসলিম ও উচ্চআয়সম্পন্ন বিদেশিদের জন্য সীমিত পরিসরে মদ কেনার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
রাজধানী রিয়াদের কূটনৈতিক এলাকায় অবস্থিত দেশটির একমাত্র অনুমোদিত লিকার শপে এখন ধনী বিদেশি বাসিন্দাদেরও প্রবেশাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
কয়েক বছর আগে রিয়াদের ডিপ্লোম্যাটিক কোয়ার্টারে শুধুমাত্র অমুসলিম কূটনীতিকদের জন্য মদ বিক্রির উদ্দেশ্যে দোকানটি চালু করা হয়। শুরুতে প্রবেশাধিকার ছিল কূটনীতিকদের জন্য সংরক্ষিত; তবে গত প্রায় এক মাসে বিশেষ মর্যাদাধারী বা ‘প্রিমিয়াম রেসিডেন্সি’প্রাপ্ত বিদেশিদের জন্যও এটি উন্মুক্ত করা হয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমস ও এএফপি জানায়, এ ক্যাটাগরির বিদেশির সংখ্যা বর্তমানে ১২ হাজার ৫০০–র বেশি।
দোকানটির সামনে প্রতিদিনই বিলাসবহুল গাড়ির সারি দেখা যাচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। ক্রেতাদের অনেকে প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারেননি যে দেশে মদ কেনার সুযোগ তৈরি হয়েছে। প্রাথমিক যাচাই–বাছাই শেষে তারা মদ কিনতে পারছেন বলে কয়েকজন বিদেশি ক্রেতার উদ্ধৃতি দিয়েছে এএফপি।
আরও পড়ুন: থাই সেনাবাহিনীর হামলায় কম্বোডিয়ায় ৬ জন নিহত
সৌদি কর্তৃপক্ষ কিছু নির্দিষ্ট শর্ত আরোপ করেছে:
- ক্রেতাকে অবশ্যই অমুসলিম ও বিদেশি নাগরিক হতে হবে।
- মাসিক আয় কমপক্ষে ৫০ হাজার সৌদি রিয়াল (প্রায় ১৩,৩০০ মার্কিন ডলার) হতে হবে।
- দোকানে কেবল পণ্য কেনা যায়; পান করার ব্যবস্থা নেই।
নিউইয়র্ক পোস্টের তথ্যমতে, দোকানে প্রবেশের আগে উচ্চআয় নিশ্চিত করতে বেতন সনদ দেখাতে হচ্ছে ক্রেতাদের। একই দোকানে কূটনীতিক ও প্রিমিয়াম রেসিডেন্সিধারীদের জন্য আলাদা মূল্য তালিকাও ব্যবহৃত হচ্ছে। স্থানীয় দর থেকে দাম অনেক বেশি—যেমন একটি সাধারণ মানের সাদা ওয়াইনের বোতল এখানেই প্রায় ৮৫ ডলারে বিক্রি হচ্ছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের দামের পাঁচ গুণ।
১৯৫২ সালে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পর সৌদিতে সম্পূর্ণভাবে মদ নিষিদ্ধ করা হয়। তবে ২০১৭ সালে মোহাম্মদ বিন সালমান ক্রাউন প্রিন্স হওয়ার পর রাজ্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের ধারায় দৃশ্যপট দ্রুত বদলাতে থাকে।
তেলের ওপর নির্ভরতা কমানো, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ, দক্ষ পেশাজীবীদের টানা এবং বড় আন্তর্জাতিক ইভেন্ট আয়োজন—এই লক্ষ্যগুলো অর্জনের প্রেক্ষাপটেই মদের নিষেধাজ্ঞায় আংশিক শিথিলতার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।
নিউইয়র্ক টাইমস উল্লেখ করেছে, কঠোর রক্ষণশীল কাঠামোর মধ্য থেকেও ‘ভিশন ২০৩০’র কেন্দ্রীয় লক্ষ্য অর্জনে সৌদি আরব এখন আরও উদার নীতি প্রয়োগে আগ্রহী হচ্ছে।
একজন সৌদি সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের মধ্যে জেদ্দা ও দাহরানেও আরও দুটি অনুমোদিত মদের দোকান খোলার পরিকল্পনা রয়েছে। এগুলোও রিয়াদের দোকানের মতো নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে পরিচালিত হবে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








