News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৭:৪৩, ৩১ অক্টোবর ২০২৫

কলেরায় বিপর্যস্ত আফ্রিকা: মৃত্যু ৬,৮৫৪

কলেরায় বিপর্যস্ত আফ্রিকা: মৃত্যু ৬,৮৫৪

ছবি: সংগৃহীত

আফ্রিকার ২৩টি দেশে চলতি বছরের ভয়াবহ কলেরার প্রাদুর্ভাবে এ পর্যন্ত ছয় হাজার ৮০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। আক্রান্তের সংখ্যা দুই লাখ ৯৭ হাজার ৩৯৪ জনে পৌঁছায় পরিস্থিতি ক্রমেই উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। 

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) এই তথ্য প্রকাশ করেছে আফ্রিকা সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (আফ্রিকা সিডিসি)।

সংস্থাটির সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মহাদেশজুড়ে কলেরার বর্তমান মৃত্যুহার ২.৩ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছর প্রায় ৫০ হাজার বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে।

নামিবিয়া থেকে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে আফ্রিকা সিডিসির ডেপুটি ইনসিডেন্ট ম্যানেজার ইয়াপ বোম বলেন, মৌসুমী বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পেলে সংক্রমণের পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। যদি সময়মতো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, বছরের বাকি সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোতে সংক্রমণ আরও বেড়ে যেতে পারে।

আফ্রিকা সিডিসির সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মহাদেশজুড়ে মোট দুই লাখ ৯৭ হাজার ৩৯৪ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। 

সংস্থাটি জানিয়েছে, অ্যাঙ্গোলা ও বুরুন্ডিতে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এবং অ্যাঙ্গোলায় ইতোমধ্যে দ্বিতীয় ধাক্কা শুরু হয়েছে। অপর্যাপ্ত স্যানিটেশন অবকাঠামো ও বিশুদ্ধ পানির অভাবকে প্রাদুর্ভাবের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দক্ষিণ সুদান, সুদান এবং গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে সংক্রমণ কিছুটা কমার ইঙ্গিত পাওয়া গেলেও এসব দেশ এখনও সংক্রমণের প্রভাব মোকাবিলায় বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।

কলেরা একটি মারাত্মক জলবাহিত রোগ, যা দূষিত পানি বা খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে ছড়ায়। সময়মতো চিকিৎসা না পেলে এটি দ্রুত পানিশূন্যতা ও মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞরা বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিতকরণ, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং দ্রুত শনাক্তকরণের ওপর জোর দিতে বলেছেন।

আরও পড়ুন: সুদানে ভয়াবহ গণহত্যা, ৩ দিনে নিহত দেড় হাজার

উন্নত পানি ও স্যানিটেশন সুবিধা থাকলে এই রোগ প্রায় বিলুপ্ত হলেও, দারিদ্র্য, বৈষম্য, সংঘাত, বাস্তুচ্যুতি ও জলবায়ু দুর্যোগে আক্রান্ত অঞ্চলগুলোতে এটি এখনও ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি থাকলেও, কলেরা প্রতিরোধে রাজনৈতিক অগ্রাধিকার এবং প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের অভাবই এই রোগকে এখনও মানব সম্প্রদায়ের জন্য হুমকি বানিয়ে রেখেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং আফ্রিকা সিডিসি চলতি বছর মহাদেশজুড়ে কলেরা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি ইমার্জেন্সি রেসপন্স প্ল্যান চালু করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বে ৫০টিরও বেশি সংস্থা গঠিত গ্লোবাল টাস্ক ফোর্স অন কলেরা কন্ট্রোল (Global Task Force on Cholera Control) এই মহাদেশব্যাপী প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় কাজ করছে।

কলেরার প্রতিকার ও প্রতিরোধে কার্যকর টিকা রয়েছে। উনিশ শতকের শেষভাগে প্রথম ইনজেকশন টিকা আবিষ্কৃত হয়, যা ১৯৮০-এর দশকে মুখে খাওয়ার টিকায় রূপান্তরিত হয়। তবে বাজারে এর চাহিদা সীমিত হওয়ায় বড় উৎপাদনকারী খুব কম। বর্তমানে শুধুমাত্র দক্ষিণ কোরিয়ার EUBiologics প্রতিষ্ঠানই একমাত্র সংস্থা, যারা বড় পরিসরে কলেরা টিকা উৎপাদন করতে সক্ষম।

২০১৩ সালে ডব্লিউএইচও ও অন্যান্য অংশীদাররা আন্তর্জাতিক টিকা সমন্বয় গ্রুপের (ICG) অধীনে একটি বৈশ্বিক কলেরা টিকা মজুদ গড়ে তোলে, যাতে জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত ও সমতাভিত্তিক টিকা সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়। এ পর্যন্ত ৩৪টি দেশে প্রায় ২৫৫ মিলিয়ন ডোজ বিতরণ করা হয়েছে, যার ৭৫ শতাংশই ২০২১ সালের পর থেকে সরবরাহ করা হয়েছে।

চলতি বছরেই ৪৯ মিলিয়নের বেশি ডোজ বিতরণ করা হয়েছে, যা এক বছরে সর্বোচ্চ সরবরাহের রেকর্ড। তবে চাহিদা এতটাই বেশি যে, প্রতি সপ্তাহে মজুদ পূরণ করা হলেও তা ৫ মিলিয়ন ডোজের সুপারিশকৃত সীমার নিচেই থাকে। ফলে ২০২২ সালে ICG দুই ডোজের পরিবর্তে এক ডোজের টিকা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়, যদিও এক ডোজের কার্যকারিতা দ্রুত হ্রাস পায়।

২০২৪ সালের অক্টোবরে জাম্বিয়া ও চীনের জিজিয়া মেডিকেল টেকনোলজি কম্পানি একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে, যার মাধ্যমে লুসাকায় কলেরা টিকা উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত টিকা ব্যবহারের আগে মান নিয়ন্ত্রণ ও ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মাধ্যমে নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হবে।

জাম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট এবং গ্লোবাল টাস্ক ফোর্স অন কলেরা কন্ট্রোল-এর নিয়ন্ত্রণ চ্যাম্পিয়ন হাকাইন্ডে হিচিলেমা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, কলেরা এমন একটি রোগ যা সম্পূর্ণভাবে প্রতিরোধযোগ্য। এটি কোনো বৈজ্ঞানিক বা চিকিৎসাগত চ্যালেঞ্জ নয়, বরং এটি একটি রাজনৈতিক সংকট। কলেরা টিকে আছে কারণ দারিদ্র্য, বৈষম্য, সংঘাত ও বাস্তুচ্যুতি টিকে আছে।

বিশ্বজুড়ে কলেরা নির্মূলে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থায় বিনিয়োগের ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়