অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে: এমএসএফ
 
									ছবি: সংগৃহীত
চলতি অক্টোবর মাসে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার এবং কারা হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা সেপ্টেম্বরের তুলনায় বেড়েছে। মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) প্রকাশিত অক্টোবর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) গণমাধ্যমে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব ঘটনায় জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতা স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে এমএসএফের মতে, অজ্ঞাতনামা লাশ ও হেফাজতে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ তৈরি করেছে।
অক্টোবর মাসে মোট ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে এই সংখ্যা ছিল ৫২।
এমএসএফ জানায়, এসব লাশের বেশির ভাগ উদ্ধার হয়েছে নদী, ডোবা, মহাসড়ক, সেতুর নিচ, রেললাইন, ফসলি জমি ও পরিত্যক্ত স্থান থেকে। কিছু মৃতদেহ ছিল গলাকাটা, বস্তাবন্দি, রক্তাক্ত বা আঘাতচিহ্নযুক্ত।
সংগঠনটির তথ্যানুসারে, উদ্ধার লাশগুলোর মধ্যে ১ শিশু, ১ কিশোর, ১১ নারী ও ৫৩ পুরুষ। এর মধ্যে ৭ বছর বয়সী শিশু, ১৫ বছর বয়সী কিশোর, ২০–৩০ বছর বয়সী ১৫ পুরুষ ও ২ নারী, ৩১–৪০ বছর বয়সী ১৯ পুরুষ ও ৬ নারী, ৪১–৫০ বছর বয়সী ১ নারী ও ৫ পুরুষ এবং ৫০ বছরের বেশি বয়সী ১১ পুরুষ ও ১ নারী। তিনজনের বয়স শনাক্ত করা যায়নি।
এমএসএফ বলেছে, অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের মধ্যেই দায়িত্ব শেষ হয় না; বরং তাদের পরিচয় নির্ধারণ, মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটন ও আত্মীয়-পরিজনের কাছে লাশ হস্তান্তর রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনাসহ ২৬১ পলাতকদের তালিকা প্রকাশ করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি
অক্টোবর মাসে কারা হেফাজতে ১৩ জন বন্দির মৃত্যু ঘটেছে। এর মধ্যে ৬ জন কয়েদি ও ৭ জন হাজতি। সেপ্টেম্বর মাসে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৮।
কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চারজন কয়েদি ও দুজন হাজতি, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন কয়েদি এবং শেরপুর জেলা কারাগারে একজন কয়েদি মারা যান। এছাড়া খুলনা, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে একজন করে হাজতির মৃত্যু হয়েছে। সব বন্দির মৃত্যু ঘটেছে কারাগারের বাইরে হাসপাতালে।
এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, কারা হেফাজতে মৃত্যু ও অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতি নির্দেশ করে। পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট বাহিনী লাশ উদ্ধার করেই দায়িত্ব শেষ করছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়।
তিনি আরও বলেন, অজ্ঞাতনামা লাশ ও হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা বৃদ্ধি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর জনআস্থা নষ্ট করছে।
অক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। এতে ৫৪৯ জন আহত ও ২ জন নিহত হয়েছেন। নিহত দুজনই বিএনপির কর্মী–সমর্থক। আহতদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ। সেপ্টেম্বর মাসে এমন ঘটনা ছিল ৩৮টি।
সহিংসতার ১১টি ঘটনায় পার্টি অফিস, বসতবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, অগ্নিকাণ্ড ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
অক্টোবরে গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। সেপ্টেম্বর মাসে এ সংখ্যা ছিল ৪৩। চলতি মাসে গণপিটুনিতে ১২ জন নিহত, আগের মাসে নিহত হন ২৪ জন।
এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার, হেফাজতে মৃত্যু, রাজনৈতিক সহিংসতা ও গণপিটুনির ঘটনা দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি এবং নাগরিক নিরাপত্তাহীনতার ইঙ্গিত বহন করছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি






































