ক্রসফায়ার ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ডিআইজি এহসান নিখোঁজ
 
									ছবি: সংগৃহীত
রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমি থেকে রহস্যজনকভাবে পলাতক হয়েছেন পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এহসানউল্লাহ, যিনি একাডেমির সাপ্লাই বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) সকাল থেকে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন পুলিশ একাডেমির পুলিশ সুপার (প্রশাসন) সাইফুল ইসলাম।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ক্রসফায়ার ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বরিশালের সাবেক পুলিশ সুপার এহসানউল্লাহকে গ্রেফতারে বুধবার ভোর ৬টায় পুলিশের একটি বিশেষ দল সারদা একাডেমিতে অভিযান চালায়। অভিযানের সময় তিনি মোটরসাইকেলযোগে একাডেমি থেকে পালিয়ে যান। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি রাজধানীমুখি হয়েছেন।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার (প্রশাসন) সাইফুল ইসলাম বলেন, ডিআইজি এহসান বুধবার সকাল থেকে অফিসে অনুপস্থিত। ঢাকা থেকে একটি টিম তাকে আটক করতে এসেছিল বলে জেনেছি। বর্তমানে তিনি নিখোঁজ, এবং তার অবস্থান সম্পর্কে খোঁজ নেয়া হচ্ছে।
পালিয়ে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে রাজশাহীজুড়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ডিআইজি এহসানউল্লাহ আগেই জানতে পেরেছিলেন যে তাকে গ্রেপ্তার করতে একটি টিম সারদায় যাচ্ছে। সেই তথ্য পেয়েই তিনি সরে পড়েন।
এহসানউল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি বরিশালে পুলিশ সুপার থাকাকালে নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্যসহ নানা অপরাধে জড়িত ছিলেন। ২০১৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর নবীনগর এলাকা থেকে ছাত্রদল নেতা কবির হোসেন রনিকে গ্রেফতার করে নির্মমভাবে নির্যাতনের পর ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে আগৈলঝাড়া উপজেলার বাইপাস ব্রিজের পাশে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনাটি ‘ক্রসফায়ার’ বলে প্রচার করা হয়।
রনির ছেলে আশিকুর রহমান আসিফ ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বরিশালের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয় বরিশাল-১ আসনের সাবেক সাংসদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, বরিশাল রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি মো. হুমায়ুন কবির, অতিরিক্ত ডিআইজি আকরাম হোসেন, এসপি এহসানউল্লাহ, সহকারী পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর মল্লিক, আগৈলঝাড়া থানার ওসি মনিরুল ইসলামসহ স্থানীয় অর্ধশতাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে পুলিশবাহী বাস দুর্ঘটনা, আহত ২০
৮ অক্টোবর আদালত মামলাটি গ্রহণ করে এবং আগৈলঝাড়া থানা পুলিশকে রুজু করার নির্দেশ দেয়। তবে এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও কোনো পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।
রনির পরিবার এহসানউল্লাহর পলায়নের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
রনির ছেলে সিয়াম বলেন, আমার বাবা বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় তাকে খুন করা হয়েছে। তখন আসামিদের ভয়ে মামলা করতে পারিনি। এখন আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। মামলার আসামি এহসানউল্লাহর পালিয়ে যাওয়া হতাশাজনক এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য লজ্জাজনক।
এদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একটি প্রতিনিধিদলও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ডিআইজি এহসানউল্লাহকে গ্রেফতারে সারদা একাডেমিতে যায়। কিন্তু তিনি আগেই খবর পেয়ে পালিয়ে যান। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। অনেকের অভিযোগ, পুলিশ একাডেমির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তাকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছেন।
সারদা পুলিশ একাডেমির প্রিন্সিপাল অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক তৌফিক মাহবুব চৌধুরীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য দেননি।
পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র ও সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) এ এইচ এম শাহাদাত হোসাইন বলেন, ডিআইজি এহসানউল্লাহ সারদা একাডেমিতে তার কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন।
এদিকে একই মামলায় র্যাবের আলোচিত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিনের সহযোগী সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মশিউর রহমানকে সিআইডি ঢাকা মেট্রো অফিস থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উত্তরা গণহত্যায় জড়িত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক এডিসি সালাউদ্দিনকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
আগৈলঝাড়া থানার ওসি মো. অলিউল ইসলাম বলেন, বাদী মামলাটি পরিচালনা করতে চাননি। নির্বাহী আদেশে তদন্ত শেষে আদালতে একটি রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে। এখানে থানা পুলিশের গাফিলতির সুযোগ নেই।
ডিআইজি এহসানউল্লাহর পলায়ন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে তার সংশ্লিষ্টতা নিয়ে তদন্ত চলছে। পুলিশ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, তাকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি






































