News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৩:২০, ৩০ অক্টোবর ২০২৫

সুদানে ভয়াবহ গণহত্যা, ৩ দিনে নিহত দেড় হাজার

সুদানে ভয়াবহ গণহত্যা, ৩ দিনে নিহত দেড় হাজার

ছবি: সংগৃহীত

সুদানের পশ্চিমাঞ্চলের এল-ফাশার শহরে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে দেশটির আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)। 

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা ও সুদান ডক্টর নেটওয়ার্কের রিপোর্ট অনুযায়ী, মাত্র তিন দিনের মধ্যে শহর দখল করতে গিয়ে অন্তত দেড় হাজার মানুষ নিহত হয়েছে।

সুদানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরএসএফের দ্বন্দ্ব দীর্ঘ দুই বছর ধরে চলছিল। এই সংঘাতের কারণে দেশটি স্মরণকালের এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়েছে। এল-ফাশার ছিল দারফুরের রাজধানীর শেষ শহর, যা সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল। ১৭ মাসের অবরোধের পর গত রোববার আরএসএফ শহরটি দখল করে।

সুদান ডক্টর নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, আরএসএফের দখলের পর বেসামরিক মানুষ পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের ওপর ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। সংগঠনটি একে ‘সত্যিকারের গণহত্যা’ বলে আখ্যায়িত করেছে।

সংস্থাটি জানিয়েছে, আজ বিশ্বের সামনে যে হত্যাযজ্ঞ দেখা যাচ্ছে, তা আসলে সেই হত্যার ধারাবাহিকতা যা দেড় বছর আগে এল-ফাশারে ঘটেছিল। তখন বোমাবর্ষণ, অনাহার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যার মাধ্যমে ১৪ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল।

এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ইউনিভার্সিটির হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব প্রকাশ করেছে, আরএসএফ দখলের পর স্যাটেলাইট চিত্রে মৃতদেহের আকারের সঙ্গে মিল রয়েছে এমন বহু বস্তু দেখা গেছে। মাটিতে বড় বড় লালচে দাগও ধরা পড়েছে, যা ব্যাপক রক্তপাতের ইঙ্গিত দেয়।

সুদানের সরকার জানিয়েছে, রবিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত শহরে অন্তত দুই হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। সাহায্য সংস্থাগুলোও স্বতন্ত্র সূত্র থেকে নিশ্চিত করেছে যে, শহরে গণহত্যা, পালিয়ে যাওয়া বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা এবং ঘরে-ঘরে ঢুকে হত্যার নৃশংসতা চলছে।

আরও পড়ুন: অস্ত্রবিরতির মধ্যেই গাজায় নতুন ইসরায়েলি হামলা

সদর দফতরের মানবিক সহায়তা কর্মকর্তা মোনা নুর আল-দাইম বলেন, মিলিশিয়ারা এল-ফাশারে প্রবেশের সময় দুই হাজারেরও বেশি বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে। এর মধ্যে অনেকে ছিলেন মসজিদে আশ্রয় নেওয়া স্বেচ্ছাসেবক ও রেড ক্রিসেন্টের সদস্য।

এল-ফাশারের বিভিন্ন হাসপাতালেও হামলা চালানো হয়েছে। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-এর মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম ঘেব্রেইসাস জানান, শুধু সৌদি ম্যাটারনিটি হাসপাতালেই ৪৬০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। বেঁচে ফেরা প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হাসপাতালটিতে অন্তত ৫০০ মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরাও নিহতের মধ্যে রয়েছেন।

সুদান ডক্টর নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, মঙ্গলবার আরএসএফ যোদ্ধারা সৌদি হাসপাতালের ভেতরে যাকে পেয়েছে তাকেই ঠান্ডা মাথায় হত্যা করেছে—রোগী, তাদের স্বজন, এমনকি হাসপাতালে উপস্থিত অন্য সবাইকে।

খার্তুম থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক হিবা মর্গান জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া আরএসএফের ভিডিওতে দেখা গেছে, তাদের যোদ্ধারা পালিয়ে যাওয়া বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছে। 

তিনি বলেন, সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি হলো—আরএসএফ যোদ্ধারা হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে রোগীদের হত্যা করছে।

এল-ফাশারের দখলের মধ্য দিয়ে দারফুরের প্রায় সব অঞ্চল আরএসএফের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। এছাড়া, নারী ও কিশোরদের ওপর ব্যাপক যৌন সহিংসতার খবরও পাওয়া গেছে। এ পরিস্থিতি এক দশকেরও বেশি আগে দক্ষিণ সুদানের মতো সুদানকে আবারও বিভক্ত করার আশঙ্কা সৃষ্টি করছে।

সারসংক্ষেপে, ২০২৩ সাল থেকে আরএসএফ ও সুদানি সেনাবাহিনীর মধ্যে চলা রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন এবং ১ কোটি ২০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এল-ফাশারের ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ এই সংঘাতের নতুন ধাপ হিসেবে বিশ্ববাসীর সামনে এসেছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়