চীনের এআই চ্যাটবট ডিপসিকের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী শেয়ারবাজারে ধস

ফাইল ছবি
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসংক্রান্ত (এআই) চীনা কোম্পানি ডিপসিকের চ্যাটবট জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে চালু হয়। অল্প সময়ের মধ্যেই অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরে সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড হওয়া ফ্রি অ্যাপ হিসেবে শীর্ষে উঠে আসে অ্যাপটি।
ডিপসিকের তৈরি নতুন প্রযুক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে উল্লেখ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে চীনা কোম্পানিগুলোর অপেক্ষাকৃত সস্তা ও দ্রুতগতির এআই পদ্ধতি তৈরির উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন তিনি।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) ফ্লোরিডায় ট্রাম্প বলেন, চীনা কোম্পানির তৈরি করা ডিপসিক এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) চালু হওয়ার বিষয়টি আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমন একটি সতর্কবার্তা দিচ্ছে যে প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়াকে মনোযোগের কেন্দ্রে রাখতে হবে আমাদের।
ডিপসিকের এই অ্যাপের আকস্মিক জনপ্রিয়তা এবং মার্কিন এআই কোম্পানিগুলোর তুলনায় এর উল্লেখযোগ্য কম ব্যয় শেয়ারবাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছে।
সিলিকন ভ্যালির ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট মার্ক আন্দ্রেসেন এটিকে ‘এআই খাতে অন্যতম অসাধারণ এবং চমকপ্রদ সাফল্য’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
ডিপসিক দাবি করেছে, তাদের সর্বশেষ এআই মডেল মার্কিন শীর্ষ মডেল যেমন চ্যাটজিপিটির সমকক্ষ, তবে ব্যয়ের দিক থেকে অনেক সাশ্রয়ী।
গবেষকরা জানিয়েছেন, এই মডেল তৈরি করতে মাত্র ৬ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে, যা মার্কিন এআই কোম্পানিগুলোর বিলিয়ন ডলারের ব্যয়ের তুলনায় অনেক কম।
সোমবার বিনিয়োগকারীরা বিশ্বজুড়ে তাদের প্রযুক্তির শেয়ার বিক্রি করেছে। কম খরচের চীনা বুদ্ধিমত্তার মডেলটির উত্থানের কারণে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এআই প্রযুক্তির আধিপত্য হুমকিতে পড়বে বলে আশঙ্কা তাদের। চীনের স্বল্প খরচের ডিপসিকের কারণে নিউইয়র্কের পুঁজিবাজার ওয়ালস্ট্রিটে টালমাটাল অবস্থা। চিপ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এনবিডিয়ার শেয়ারমূল্য পাঁচ হাজার কোটি মার্কিন ডলার কমেছে। অন্যান্য মার্কিন প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দরও নিম্নমুখী।
ট্রাম্প বলেন, আমি চীন ও কিছু চীনা কোম্পানি সম্পর্কে পড়ছি। বিশেষ করে একটি কোম্পানি অপেক্ষাকৃত দ্রুতগতির এবং অনেক কম খরচের এআই পদ্ধতি নিয়ে আসছে। আর এটা ভালো। কারণ, আপনাদের অনেক বেশি অর্থ খরচ করতে হবে না। আমি এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখি, সম্পদ হিসেবে দেখি।
কেন এটাকে ইতিবাচক ভাবছেন, সে ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, আমি এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। কারণ, আপনারাও কাজটি করবেন। আশা করি, আপনাদের বেশি খরচ করতে হবে না, কিন্তু একই ফল পাবেন।
ট্রাম্পের দাবি, চীনা নেতারা তাকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বের সবচেয়ে মেধাবী বিজ্ঞানীরা আছেন। ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো যদি অপেক্ষাকৃত কম খরচের এআই প্রযুক্তি নিয়ে আসে, তবে মার্কিন কোম্পানিগুলো তা ব্যবহার করবে।
ট্রাম্প বলেন, আমাদের আইডিয়া তো সব সময়ই আছে। এ ক্ষেত্রে আমরা সব সময়ই প্রথম। তাই আমি বলব অত্যন্ত ইতিবাচক কিছু তৈরি হওয়ার বিষয়টিও ইতিবাচক। সুতরাং কোটি কোটি অর্থ খরচ না করে আপনারা যদি কম খরচ করেন, তাহলে একই সমাধান পাবেন বলে আশা করি।
ডিপসিক কী?
ডিপসিক একটি চীনা এআই কোম্পানি, যা দক্ষিণ-পূর্ব চীনের হাংজু শহরে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে প্রতিষ্ঠিত হয়। তাদের জনপ্রিয় এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাপটি ২০২৪ সালের ১০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে চালু হয়।
ডিপসিকের প্রতিষ্ঠাতা
ডিপসিকের প্রতিষ্ঠাতা লিয়াং ওয়েনফেং আংশিকভাবে তার নিজস্ব হেজ ফান্ড থেকে অর্থায়নের মাধ্যমে কোম্পানিটি চালু করেন।
৪০ বছর বয়সী লিয়াং ওয়েনফেং এনভিডিয়ার এ১০০ চিপ নিষিদ্ধ হওয়ার আগে সংগ্রহ করেছিলেন। ধারণা করা হয়, তিনি ৫০ হাজার চিপ সংগ্রহ করে এগুলো তুলনামূলক সস্তা চিপের সঙ্গে জুড়ে ডিপসিক তৈরি করেন।
আরও পড়ুন: পরীক্ষামূলকভাবে চালু হল স্টারলিংকের স্যাটেলাইট-টু-সেলফোন সেবা
কারা এটি ব্যবহার করছে?
ডিপসিকের এআই অ্যাপ অ্যাপলের অ্যাপ স্টোর এবং কোম্পানির ওয়েবসাইটে ডাউনলোডের জন্য বিনামূল্যে পাওয়া যাচ্ছে। এটি অ্যাপ স্টোরে দ্রুত শীর্ষ রেটিং অর্জন করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষস্থানীয় ফ্রি অ্যাপ হিসেবে স্থান পেয়েছে।
তবে কিছু ব্যবহারকারী সাইন-আপ নিয়ে সমস্যা হওয়ার কথা জানিয়েছেন।
ডিপসিক অ্যাপ কী করে?
ডিপসিকের শক্তিশালী এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে এবং জীবনকে আরও কার্যকর করতে সক্ষম। এটি চ্যাটজিপিটির মতো কাজ করে, তবে ব্যবহারকারীরা মন্তব্য করেছেন, এটি লেখায় আরও "ব্যক্তিত্ব" যোগ করে।
তবে, রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যায় ডিপসিক। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৮৯ সালের ৪ জুন তিয়ানআনমেন স্কোয়ারের ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে অ্যাপটি জানায়, "আমি দুঃখিত, আমি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারি না। আমি একটি সহায়ক এবং নিরাপদ এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট।"
মার্কিন কোম্পানিগুলোর ওপর প্রভাব
ডিপসিকের তুলনামূলক সাশ্রয়ী মডেল মার্কিন এআই কোম্পানিগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। ২৭ জানুয়ারি এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর, শেয়ারবাজারে বড় ধরনের ধস নামে।
নাসডাক সূচক ৩.১ শতাংশ হ্রাস পায়, যেখানে এনভিডিয়ার শেয়ার ১৭ শতাংশ পড়ে যায়। এর ফলে এনভিডিয়ার বাজারমূল্য থেকে প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলার হারিয়ে যায়, যা মার্কিন ইতিহাসে কোনো কোম্পানির একদিনে সর্বোচ্চ ক্ষতি।
এনভিডিয়ার উচ্চমানের চিপের প্রয়োজন কমিয়ে দিয়ে ডিপসিক প্রমাণ করেছে যে বড় বাজেট বা শীর্ষমানের চিপ ছাড়াও এআই খাতে সাফল্য সম্ভব।
বিশ্লেষকদের মতে, ডিপসিকের সাফল্য এআই প্রযুক্তি এবং বাজারে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি