জেনেভা ক্যাম্পে সংঘর্ষ, নেপথ্যে ‘ইয়াবা’
ঢাকা: মোহাম্মাদপুর জেনেভা ক্যাম্পে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় বেশ ক’দিন আগেই। কথা কাটাকাটি থেকে শুরু হওয়া এ গোলযোগ শেষ পর্যন্ত রূপ নেয় রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষে। আর এ সব কিছুর নেপথ্যে কারণ ছিল ‘ইয়াবা ব্যবসার’ নিয়ন্ত্রণ।
সোমবার দুপুরে সংঘর্ষ চলাকালে সরেজমিনে জেনেভা ক্যাম্প ঘুরে দেখা যায়, বাঁশের লাঠি, রড এমনকি দা হাতেও অনেকেই অবস্থান নিয়েছে ক্যাম্পের প্রধান ফটকের সামনে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক দফা লাঠি চার্য করে পুলিশ। রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত সেখানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) আধুনিক জল কামানের অবস্থান দেখা যায়।
সংঘর্ষ চলাকালে ক্যাম্পের বেশ কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানে প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকার ইয়াবা বিকিকিনি হয়। এর নির্দিষ্ট একটি ভাগ তাদের প্রতিনিধির হাত ঘুরে চলে যায় স্থানীয় রাজনৈতিক ও পুলিশের হাতে। মূলতঃ এই প্রতিনিধিত্ব দেয়াকে কেন্দ্র করেই গত সপ্তাহের বুধবার থেকে আনোয়ার ওরফে ছান্নু গ্রুপ ও নাদিম ওরফে পচিশ গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনার শুরু। বৃহস্পতিবারে তা রূপ নেয় হাতাহাতিতে। এরপর শুক্র ও শনিবার চলে দফায় দফায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ। সবশেষে রোববার এ সংঘর্ষ রূপ নেয় স্বশস্ত্র রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষে। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার দুপুরে জেনেভা ক্যাম্পের সামনে অবস্থান নেয় ছান্নু গ্রুপ ও নাদিম গ্রুপ।
স্থানীয় বেশ কয়েক জন ইয়াবা ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এতোদিন সেখানে ইয়াবা ব্যবসায়ের প্রতিনিধিত্ব করতো নাদিম গ্রুপ। এই গ্রুপের অন্যতম সক্রিয় সদস্য ইসতিয়াক প্রতিদিন ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদার টাকা সংগ্রহ করে স্থানীয় রাজনৈতিক ও পুলিশের কর্তাব্যক্তিদের কাছে পৌঁছে দিতেন। কিন্তু গত সপ্তাহ থেকে ক্যাম্পে সক্রিয় হতে শুরু করে ছান্নু গ্রুপ। এই গ্রুপের সক্রিয় সদস্য শান্তি সব ইয়াবা ব্যবসায়ীকে জানায়, এখন থেকে চাঁদার টাকা তাকে দিতে হবে। এই বিরোধ থেকেই শুরু হয় রক্তক্ষয়ি এ সংঘর্ষ।
গত দুদিনে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন, আটক করা হয়েছে শতাধীক কিশোর ও যুবককে। পরবর্তিতে আটকদের নামে রাষ্ট্র্রদ্রোহ মামলা দিয়ে আদালতে চালান দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।
ক্যাম্পের বাসিন্দা বেবী দাবি করেন, শনিবার পুলিশ তার ভায়ের ছেলে আরিফকে (১৮) বাসা থেকে ডেকে আটক করে নিয়ে যায়। পরে আরিফের রিমান্ড ঠেকানো জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় ১৫ হাজার টাকা দেয়া হয়। কিন্তু তারপরেও তারা আরিফকে না ছেড়ে বেধড়ক পিটিয়েছে। তাছাড়াও জুম্মন নামের আরো একযুবক পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় মারা গেছেন বলেও দাবী করেন স্থানীয়রা।
অবশ্য এসব অভিযোগকে একদমই ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে মোহাম্মাদপুর থানার ডিউটি অফিসার এসআই মাসুদ। তিনি নিউজবাংলাদেশকে বলেন, ‘আহত বা নিহত হওয়ার খবরটি নিছক বানোয়াট। তবে আটকের বিষয়টি সত্য। গত কদিন ধরেই সেখানে চরম বিশৃঙ্খলতা চলছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতেই সেখান থেকে কিছু লোক আটক করা হয়। পরবর্তীতে তাদের রাষ্ট্রে শান্তি ও শৃঙ্খলা নষ্টের দায়ে রাষ্ট্রদোহী মামলা দিয়ে আদালতে হস্তান্তর করা হয়।’
এদিকে ক্যাম্পের বাসিন্দা মাহতাব ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সমস্যাটা আমাদের নিজেদের মধ্যে। তাই আমরাও চেয়েছিলাম আমাদের চেয়ারম্যানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এসে সমস্যার সমাধান করবে। কিন্তু তারা গত কদিনের একদিনও এলো না। আর সে কারণেই এখন সামান্য কথা কাটাকাটি রূপ নিয়েছে সংঘর্ষে।’
নিউজবাংলাদেশ.কম/এনএইচ/এএইচকে
নিউজবাংলাদেশ.কম








