স্বীকৃতি পেয়েছি, অধিকার পাইনি: হিজড়া কাজল
মধ্য বাড্ডার একটি তিনতলা বাড়ির দোতলায় থাকেন কাজল সিকদার। সরু গলি পেরিয়ে যেতে হয় সেখানে। বাবা-মা, দুই ভাই ও দুইবোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। তবে কাজল নিজের সংসারে একাই। আর তাই নিজের ঘরটিকে সাজিয়ে রেখেছেন ছিমছাম নিজের মতো করে। দৃশ্যত কাজল ‘নারী’ হলেও তিনি মূলত তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া)। ৩০ বছর বয়েসী এ মানুষটি ‘হিজড়া পেশার’ পাশাপাশি সংখ্যালঘু এ সম্প্রদায়ের অধিকার নিয়েও কাজ করছেন। যেমন ভালো নাচতে পারেন, তেমন পারদর্শী অভিনয়েও। আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেলের ফ্যাশন শোসহ তিনটি জাতীয় ফ্যাশন শোতে অংশ নিয়েছেন। অভিনয় করেছেন ১৫টির মতো পথ নাটকে। হিজড়াদের নিয়ে গঠিত ‘সম্পর্কের নয়া সেতু’ নামক সংগঠনের তিনি অর্থ বিষয়ক সম্পাদক। নিউজবাংলাদেশের কাছে কাজল তুলে ধরেছেন জীবনের নানা গল্প। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার মুনিফ আম্মার। ছবি তুলেছেন আতিকুর রহমান জনি।
কখন, কীভাবে বুঝতে পেরেছেন আপনি একজন হিজড়া?
দিনক্ষণ স্পষ্ট মনে নেই। আমি তখন ছোট। সবে মাত্র বুঝতে শুরু করেছি। সে সময়ে আমার একটা ভিন্নতা টের পাচ্ছিলাম। বাসায় আমাকে ছেলে হিসেবে দেখা হলেও আমার চিন্তা, মন মানসিকতা আর আচরণ ছিলো মেয়েদের মতো। একটু যখন বড় হচ্ছিলাম, তখন লুকিয়ে লুকিয়ে মায়ের শাড়ি পড়তাম। মেয়েদের মতো সাজতাম। আর অন্যসব আচরণেও মেয়েলি বিষয়টা প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। তখন থেকেই আমি বুঝতে শুরু করেছি, আমি আর সবার মতো না। আমি ভিন্ন কেউ। এভাবেই একসময় নিজেকে হিজড়া হিসেবে আবিষ্কার করেছি।
আপনার সঙ্গে পরিবারের আচরণ তখন কেমন ছিলো?
কাজল: আমি হিজড়া, বিষয়টি পরিবার কোনভাবেই মানতে পারছিলো না। আমার অস্বাভাবিক আচরণ শোধরাতে তারা নিয়মিত বকাঝকা করতো। আমি আমার মতো বাসা থেকে বেরিয়ে অন্য হিজড়াদের সঙ্গে মিশতাম। বাসায় বিষয়টা টের পেয়ে আমাকে চিকিৎসা করালো। কতো ডাক্তার, সাইকিয়াটিস্ট দেখালো! কিন্তু কিছুতেই কোনো কাজ হলো না। একদিন বড় ভাই রাগ হয়ে খুব মেরেছিলো। আমার পা ভেঙে গিয়েছিলো। আমাকে ফেরানোর অনেক চেষ্টা তারা করেছে। কিন্তু আমি কী করবো? আমার জন্মতো ওভাবেই হয়েছে। একসময় যখন বুঝতে পেরেছে আমি এমনই, তখন আমাকে আমার মতো ছেড়ে দিয়েছে। সেই থেকে অন্য হিজড়াদের সঙ্গে আমি চলতে শুরু করেছি।

হিজড়া সমাজে ঢুকলেন কী করে?
আমার বাবা হোটেল ব্যবসা করতেন। বাবার হোটেলে টাকা তুলতে আসা হিজড়াদের সঙ্গে পরিচয় হয়। আমাকে দেখে তারা বুঝতে পেরেছে আমিও হিজড়া। তাদেরকেও আমার ভালো লাগতো। একসময় ওদের সঙ্গে সখ্য হলো। তাদেরকেই আপন মনে হতে লাগলো। তাদের একজনের হাত ধরে আমি হিজড়া সমাজে প্রবেশ করি। নিয়ম অনুযায়ী একজন গুরুর হাত ধরে তার শিষ্য হতে হয়। আমার গুরুর নাম শামীমা। নিয়ম অনুযায়ী তিনি আমার মাথার ওপর তার শাড়ির আঁচল রেখে আমাকে শিষ্য বানিয়ে নিয়েছেন। গুরুর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক মা- মেয়ের। তার হাত ধরেই এই সমাজে আমি আছি।
প্রথমদিকে আপনার কাজ কী ছিলো?
তখন ১৯৯৭ কিংবা ৯৮ হবে। আমি নতুন হিজড়া সমাজে ঢুকেছি। প্রথমদিকে আমি সাধারণত বিয়ে বাড়িতে নাচতাম। কারও সন্তান হলে সেখানে দলবেঁধে গিয়ে টাকা তুলতাম। এর বাইরে কাজ ছিলো গুরুর সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো। দলবেঁধে ঘুরতে যেতাম। সিনেমা দেখতাম। প্রথমদিকে এইসব করেই দিন পার হতো আমার।
পরিবার থেকে একবারে কখন বেরিয়েছেন?
অন্য সব হিজড়াদের মতো আমার পরিবার পুরোপুরি ছাড়তে হয়নি। বাসায় থেকে আমি অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছি। এরমধ্যে হিজড়াদের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া আসা করতাম। তারপর পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়ে তাদের সঙ্গে ছয়মাস গিয়ে থেকেছি। তবে এর মধ্যেও প্রায়ই বাসায় যেতাম। মা-বাবার সঙ্গে দেখা হতো। তারা তখন আর কিছু নিষেধ করতো না। তারা ধরেই নিয়েছি, আমি এমনই। পরে একসময় বাসা থেকে বললো- তুমি বাইরে যা করার করো, কিন্তু বাসায় ফিরে এসো। তারপর আবারও বাসায় থাকা হলো। এখন তো বেশ বড় হয়েছি। এখন নিজের মতো বাসা নিয়ে থাকি। তবে পরিবার বিচ্ছিন্ন নই আমি। আমার বাসায় আমার পরিবারের সবাই আসেন। আমিও বাবার বাসায় যাই। এভাবেই চলছে।

বর্তমানে আপনার পেশা কী?
সত্যি বলতে কি, আমি এখন ‘হিজড়াগিরি’ করি। এটাকে ‘ছল্লা’ বলে। এটা হিজড়াদের ঐতিহ্যবাহী পেশা। তবে আগে আমি এনজিওতে কাজ করেছি। আইসিডিডিআরবিতে একটা প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম অনেকদিন। এছাড়া এনজিওদের সঙ্গে হিজড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন ও যৌন সচেতনতামূলক কাজ করেছি। পাশাপাশি আমি সচেতনতামূলক নাটকে অভিনয়ও করেছি। নাচও করতাম। এখন ওসব করা হয় না। তবে আমার বয়ফ্রেন্ড আমাকে একটা ব্যবসা করতে বলছে। ভবিষ্যতে হয়তো সেটাই করবো।
আপনার বয়ফ্রেন্ডও আছে?
হুম, আছে। অনেকদিন ধরে আমি তার সঙ্গে প্রেম করি। তার সঙ্গে আমার পরিচয় খুব নাটকীয়ভাবে। আমরা হিজড়ারা যখন বের হতাম, তখন সে প্রতিদিন আমাকে ফলো করতো। আমরা যেখানে থাকতাম, ওখানে এসে দাঁড়িয়ে থাকতো। একদিন ডেকে কথা বলে জানা গেলো, সে আমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকে। আমাকে পছন্দ করে। তারপর একদিন দুইদিন করে একসময় ওর সঙ্গে গভীর প্রেমে জড়িয়ে গেলাম। একসঙ্গে ছিলামও অনেক দিন। এখন সে মালয়েশিয়াতে থাকে। কয়েকদিন পরেই ফিরবে।
আপনার প্রেমের ভবিষ্যৎ কী?
এই প্রেমের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। আমি চাই না, আমার জন্য ওর জীবন নষ্ট হোক। এইবার ফিরে এলে আমি ওকে বিয়ে করাবো। একটা সুন্দরী মেয়েকে ওর বউ করে আনবো। এতে আমার কষ্ট হবে ঠিক। কিন্তু আমি যেহেতু ওকে সত্যিকারের ভালোবাসি, এ ছাড়া আর কী করতে পারি। আমাদের জীবন তো এভাবেই কেটে যাবে। ও বিয়ে করলেও আমি ওকে ভালোবেসে যাবো। একটা কথা বলে রাখি, ওর সঙ্গে আমার প্রেমের কথা ওর পরিবারও জানতো। এজন্য ওকে পরিবারে অনেক কথা শুনতে হয়েছে। কিন্তু ও আমাকে এতোই ভালোবাসে যে, কিছুতেই আমাকে ছাড়তে রাজি না। পরিবারের লোকজন ভেবেছিলো তাকে বিদেশে পাঠিয়ে দিলে হয়তো আমার প্রতি টান কমে আসবে। কিন্তু অনেকদিন হলো সে বিদেশে। কোনোভাবেই আমাদের প্রেমে এতটুকু ঘাটতি হয়নি। মাঝে একবার দেশে এসেছিলো। তখনও আমরা একসঙ্গে ছিলাম। ও যদি কাউকে বিয়েও করে, তাহলেও আমাদের প্রেম থাকবে।
অন্য হিজড়ারাও কি প্রেম করে?
অনেক হিজড়াই করে। তারা তো মেয়েদের মতোই। ছেলেদের প্রতি তাদের ভালোলাগা, ভালোবাসা কাজ করে। হ্যাপি নামে আমার একটা হিজড়া বান্ধবী এক ছেলের এতোটাই প্রেমে পড়েছিলো যে, ছেলেটা তাকে ছেড়ে যাওয়ার পরে হ্যাপি তার শরীর কেটে ফেলেছিলো। পরে সে আরেক ছেলের প্রেমে পড়েছিলো। সে ছেলের সঙ্গে যখন ব্রেকআপ হয়ে যায়, তখন হ্যাপি তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এমন আরও অনেক প্রেমের গল্প আছে। তবে এটা সত্যি, অনেক ছেলেরাই হিজড়াদের সঙ্গে সাময়িক প্রেম করে। কেউ স্থায়ী প্রেম করে না। এতে হিজড়ারা অনেক কষ্ট পায়। অনেক ছেলে তো টাকা পয়সাও হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। এমন ঘটনা প্রচুর আছে।

আপনার প্রেমিক বিয়ে করলে আপনার কষ্ট হবে না?
কষ্ট তো হবেই। আমাদের জীবনই তো কষ্টের। এখনওতো কতো কষ্ট হয়। প্রায় রাতে যখন একা একা ঘুমাতে যাই, তখন ভাবি আমি তো আসলেই একা। এই সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন। সবাই আমাদেরকে অন্যভাবে দেখে। জানালা দিয়ে বাইরে তাকালে দেখি চারপাশের সব বাড়িতে সুন্দর সংসার পাতানো আছে। কিন্তু আমার কোনোদিন সংসার হবে না। আমাকে একাই থাকতে হবে সবসময়। এটাই আমার নিয়তি।
এছাড়া পথে ঘাটে প্রায়ই আমাকে বিব্রত হতে হয়। আমি উত্তরায় একটা চাকরি করতাম। আর সব মেয়েদের মতোই সুন্দরভাবে অফিস করতে যেতাম। কিন্তু আসা যাওয়ার পথে মানুষের বিকৃত দৃষ্টি আমাকে কষ্ট দিতো। বাসে মহিলাদের সিটে বসলে পাশের মহিলারা অন্য চোখে তাকাতো। এতেও তো কম কষ্ট পেতাম না। কষ্ট নিয়েই বেঁচে আছি, বেঁচে থাকতে হবে।
আজকাল নাকি অনেক ছেলে ‘নকল হিজড়া’ সেজে চাঁদাবাজি করে। এটা কতটুকু সত্য?
এটা কতোখানি সত্যি আমার জানা নেই। কারণ আমরা যারা সত্যিকারের হিজড়া তারা বুঝি আমাদের কতো কষ্ট। এই কষ্টের পথে কোনো ছেলে স্বেচ্ছায় আসবে না। আপনাকে লাখ টাকা দিলেও তো কেউ শাড়ি পরিয়ে রাস্তায় নামাতে পারবে না। তেমনি নকল হিজড়া সেজে অভিনয় করা অতো সহজ ব্যাপার না। হিজড়ারা সবাই আসল হিজড়া। তবে এক দুইজন নকল থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু না। আমরা জানি, শারিরীক গঠনে জন্মগত হিজড়ার সংখ্যা ২০ ভাগ। বাকি ৮০ ভাগ অনেকটা ছেলেদের মতো জন্ম নিলেও মানসিকতায় পুরোপুরি মেয়ে। তারা অবশ্য পরে মেয়েদের মতো করে শরীর তৈরি নেয়।
হিজড়াদের নিয়ে অন্যদের ধারণা খুব খারাপ। এটা কেন, পরিবর্তনের উপায় কী?
আমি মনে করি, এজন্য হিজড়ারাও দায়ী। আমরা যেখানে সেখানে পুরুষদের ভয়ভীতি দেখাই। তাদের জড়িয়ে ধরি, কাপড় ধরে টান দেই। এটা ঠিক না। এ কারণেই আমাদের প্রতি সবার ধারণা খারাপ। স্বাভাবিকভাবেও তো মানুষের কাছ থেকে টাকা তোলা যায়। তাহলে এমন খারাপ ধারণা তৈরি হতো না। এজন্য আগে আমাদেরকে সংশোধন হতে হবে। কারও প্রতি ভীতি সৃষ্টি করা যাবে না। তাহলে একসময় সবাই আমাদের প্রতি ভালো ধারণা পোষণ করবে।

হিজড়াদের তো তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। অধিকার কতোটুকু পেলেন?
স্বীকৃতিতেই সীমাবদ্ধ সব। স্বীকৃতি পেয়েছি কিন্তু অধিকার পাইনি। আমাদের জীবনমানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। মৌলিক অধিকারগুলো থেকে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছি। শিক্ষার সুযোগ তৈরি হয়নি। কর্মসংস্থানও হয়নি। তাহলে এমন স্বীকৃতি পেয়ে তো মূলত আমাদের কোনো লাভ হয়নি। যেদিন অধিকার পাবো, সেদিন এই স্বীকৃতি পূর্ণাঙ্গতা পাবে।
সরকার ট্রাফিক সার্জেন্ট হিসেবে হিজড়া নিয়োগের পরিকল্পনা করেছে। কর্মসংস্থান তো তৈরি হচ্ছে...
আমি ব্যক্তিগতভাবে এমন সিদ্ধান্তের পক্ষে না। আগে আমাদের দেশের মানুষের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। না হয় সার্জেন্ট হিসেবে হিজড়ারা ভালো কিছু করার চাইতে উল্টো বিপাকেই পড়বে। যেখানে পুরুষ সার্জেন্টরা সড়ক নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে হিজড়াদের দিয়ে কতোখানি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে, সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে।
তাহলে কী ধরণের কর্মসংস্থান প্রয়োজন বলে মনে করছেন?
আসলে কর্মসংস্থানের আগে শিক্ষা ব্যবস্থা প্রয়োজন। ভারতে মানবী নামে এক হিজড়া কলেজের অধ্যক্ষ হয়েছেন। আমাদের দেশেও এমন হওয়ার সুযোগ আছে। তবে আগে তাকে তৈরি করে নিতে হবে। ব্যাংককে হিজড়া বিমানবালা আছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে হিজড়ারা আরও অনেক ভালো ভালো কাজে যুক্ত। হিজড়ারা ভালো নাচতে পারে। নাচের প্রশিক্ষক হিসেবেও নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। প্রথমে সাধারণ কাজে হিজড়া নিয়োগ দিয়ে পরবর্তীতে কঠিন কাজে নামানো যেতে পারে। তাহলে মানুষের ধারণাও পরিবর্তন হবে, কাজও আদায় হবে।
আপনার পরিকল্পনা কী?
আমি আসলে নিজে ব্যবসার চিন্তা করছি। বিউটিশিয়ানের প্রশিক্ষণ নিয়েছি দুইবার। টেইলরিং প্রশিক্ষণও আমার আছে। এখনও মাঝে মাঝে বিয়ের কনে সাজাই। আনুষ্ঠানিকভাবে একটা পার্লার ও একটা টেইলর দিয়ে পুরোদমে ব্যবসায় নামার ইচ্ছা আমার আছে। স্বতন্ত্র ব্যবসা করে জীবনটাকে সাজিয়ে তুলতে চাই। সর্বোপরি একজন ভালো মানুষ হিসেবে সবার কাছে সমাদৃত হতে যা প্রয়োজন আমি তা-ই করবো।
আপনার জন্য শুভকামনা। সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
আপনাকেও ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন আপনিও।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এজে
নিউজবাংলাদেশ.কম








