News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১০:১৭, ১৫ আগস্ট ২০১৫
আপডেট: ০৯:৫৯, ১ মার্চ ২০২০

৫ম শ্রেণির ছাত্রী হলেন কুমারী মা

৫ম শ্রেণির ছাত্রী হলেন কুমারী মা

কুড়িগ্রাম: শিশুটির বয়স বার তের বছর। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। বাবা রিকশা চালক। সকালে বের হয়ে বাড়ি থেকে ফেরেন মধ্যরাতে। মা মানসিক ভারসাম্যহীন। এ সুযোগে প্রতিবেশী জাকরুল (২০) শিশুটিকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এ ঘটনা বহুবার ঘটায় জাকরুল। এতে শিশুটি গর্ভবতী হয়ে পড়ে। এবং শিশুটির একটি সন্তান প্রসব হয়।

গরিব পিতা লিভারের চিকিৎসা করতে এলাকার লোকজনের কাছে আর্থিক সাহায্য নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলে রিপোর্টে জানা যায়, সে গর্ভবতী। পড়ে ঘটনা খুলে বলে শিশুটি। পরে এলাকার মাতব্বরদের কাছে বিচার দেয় ধর্ষিত শিশুটির পিতা। কিন্তু বিচারের নামে টালবাহানা করে মাতব্বরেরা। পরে নাগেশ্বরী থানায় মামলা করেন শিশুটির পিতা। ঘটনাটি ঘটেছে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার হাসনাবাদ ইউনিয়নের খেওনীটারী গ্রামে।  

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, নাগেশ্বরীর হাসনাবাদ ইউনিয়নের খেওনীটারী খামার হাসনাবাদ গ্রামের রিকশাচালক শাহ আলমের মেয়ে গোবর্ধন কুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীকে প্রতিবেশী মৃত আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে জাকিরুল ইসলাম ওরফে জাকরুল দীর্ঘদিন ধরে ধর্ষণ করে আসছিল। জন্মনিবন্ধনে শিশুটির জন্ম তারিখ ২৩/১২/২০০২।

ধর্ষিতার পিতা শাহ আলম জানায়, পরিবারে ৬ সন্তান নিয়ে ৮ সদস্য। বাড়িতে তার স্ত্রী দীর্ঘ ৫ বছর যাবত মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগছে। অভাবী সংসার আর এলাকায় কাজ না থাকায় সে ঢাকায় রিকশা চালানোর কাজ নেয়। চলতি বছরের মে মাসে বাড়িতে এসে তিনি ঘটনাটি জানতে পান। পরে স্থানীয় গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা করানো হয়। এতেও ভালো না হলে এলাকাবাসীর কাছ থেকে চাঁদা তুলে পরে উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে জানা যায়, সে গর্ভবতী। পরে শিশুটি জানায়, জাকরুল এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

পরে জাকরুলের বড়ভাই দুলু এবং এলাকার  মাতব্বরদের কাছে বিষয়টি জানায় শাহ আলম। সে সময় জাকরুলের পরিবার তাকে বিষয়টি আর কাউকে বলতে বারণ করে এবং দুলাখ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে টালবাহনা করে তারা। পরে তিনি নাগেশ্বরী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলা করায় আসামির পরিবারের লোকজন বিভিন্নভাবে হুমকি দিলে বাড়ি থেকে পালিয়ে গোপনে পার্শ্ববর্তী গোবর্ধনের কুটি গ্রামে অবস্থান করে শিশুটিসহ। মঙ্গলবার রাতে মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়লে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। বুধবার সকালে একটি ছেলে সন্তান জন্ম দেয়। এখন মা এবং নবজাতক শিশু দুজনেই অসুস্থ। বুকের দুধ পাচ্ছে না শিশুটি।

কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. নজরুল ইসলাম জানান, মায়ের বয়স খুব কম। এখনও সে শিশু। দুজনই অপুষ্টিতে ভুগছে।

পরে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান বিষয়টি মীমাংসার জন্য বসতে চাইলেও তা সম্ভব হয়নি।  হাসনাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান সরকার জানান, শাহ আলম আমার নিকট এসেছিল আমি বিচারের আশ্বাস দিলে পরে তারা আর আমার নিকট আসেনি। এখন পরবর্তীতে বিষয়টি কী হয়েছে, আমি জানি না। শুনেছি, গত ১২ আগস্ট কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে শিশুটি বাচ্চা প্রসব করেছে। এখন মামলা হয়ে আইনি সমাধান হবে।

এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নাগেশ্বরী থানার ওসি (তদন্ত) খান মো. শাহরিয়ার জানান, মামলার পর থেকে আসামি জাকরুল পলাতক রয়েছে। সোর্সের তথ্য অনুযায়ী পার্শ্ববর্তী জেলাতেও আমরা অভিযান চালিয়েছি। তাতেও তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। যেহেতু ধর্ষিতা সন্তান প্রসব করেছে। আমরা তাদের ডিএনএ টেস্টের আবেদন জানিয়েছি এবং মা ও সন্তানকে সরকারি কেয়ারে রাখার আবেদন জানিয়েছি। তবে খুব দ্রুত আসামিকে গ্রেফতার করা হবে আশ্বস্ত করেন তিনি।

নিউজবাংলাদেশ.কম/কেজেএইচ

নিউজবাংলাদেশ.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়