News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৮:১৯, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

৩ দশক পর জাকসু ভোট, আট প্যানেলের লড়াই

৩ দশক পর জাকসু ভোট, আট প্যানেলের লড়াই

ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘ ৩৩ বছর পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। 

বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি আবাসিক হলে ২২৪টি বুথে ভোটগ্রহণ চলবে। 

এবারের নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৭৭ জন প্রার্থী। প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

আটটি প্যানেলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা

এবারের নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ ও আংশিক মিলিয়ে মোট আটটি প্যানেল অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে—ছাত্রদল সমর্থিত পূর্ণাঙ্গ প্যানেল, ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’, বাগছাস সমর্থিত ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’, বামপন্থীদের তিনটি প্যানেল (‘সম্প্রীতির ঐক্য’, ‘সংশপ্তক পর্ষদ’ ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আংশিক প্যানেল) এবং দুটি স্বতন্ত্র প্যানেল (‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’ ও ‘স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ’)।

ছাত্রশিবির সমর্থিত জোট

প্রথম পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছিল ইসলামী ছাত্রশিবির। তাদের ভিপি প্রার্থী আরিফুল্লাহ আদিব এবং জিএস পদে রয়েছেন মাজহারুল ইসলাম। এজিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ফেরদৌস আল হাসান ও আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা। এই প্যানেলে ছয়জন নারী প্রার্থীসহ জাবিতে অধ্যয়নরত এক দম্পতি এবং জুলাই আন্দোলনে আহত কয়েকজন শিক্ষার্থীও রয়েছেন।

বাগছাসের ঐক্য ফোরাম

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) ২৩ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিয়েছে। ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’ নামের এ প্যানেলে ভিপি পদে আছেন আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল ও জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আবু তৌহিদ মো. সিয়াম। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন মালিহা নামলাহ (নারী) ও জিয়া উদ্দিন আয়ান (পুরুষ)।

ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল

ছাত্রদলও পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিয়েছে। তাদের ভিপি প্রার্থী শেখ সাদী হাসান এবং জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এবারের একমাত্র নারী প্রার্থী তানজিলা হোসাইন বৈশাখী। এ ছাড়া এজিএস পদে রয়েছেন সাজ্জাদুল ইসলাম (পুরুষ) ও আঞ্জুমান আরা ইকরা (নারী)।

বামপন্থীদের বিভক্ত প্যানেল

বাম সংগঠনগুলো তিনটি আলাদা প্যানেলে নির্বাচন করছে।

‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেলটি ছাত্র ইউনিয়নের (অদ্রি-অর্ক) একাংশের সমর্থিত। ভিপি পদ শূন্য রেখে তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এখানে রয়েছে সর্বোচ্চ ১১ জন নারী প্রার্থী, পাশাপাশি আদিবাসী, সনাতন, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রার্থী। জিএস পদে রয়েছেন শরন এহসান।

‘সংশপ্তক পর্ষদ’ গঠন করেছে ছাত্র ইউনিয়নের (ইমন-তানজিম) অংশ ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের একাংশ। পাঁচ সদস্যের এ আংশিক প্যানেলে জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাহিদুল ইসলাম ইমন।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আংশিক প্যানেলে রয়েছে তিনজন প্রার্থী—সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে মো. সজিব আহম্মদ জেনিচ, কার্যকরী সদস্য (নারী) পদে রোকেয়া আমিন অনুসূয়া এবং কার্যকরী সদস্য (পুরুষ) পদে সুমন হোসেন।

আরও পড়ুন: সেনা-পুলিশের তত্ত্বাবধানে জাকসু নির্বাচন

স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অংশগ্রহণ

দুটি স্বতন্ত্র প্যানেলও অংশ নিচ্ছে নির্বাচনে।

‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু, জিএস পদে শাকিল আলী এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে তৌহিদুল ইসলাম নিবিড় ভূঁঞা।

‘স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ’ গঠিত হয়েছে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিক্ষার্থীদের নিয়ে। এ প্যানেলে ভিপি পদে রয়েছেন মাহফুজুল ইসলাম মেঘ এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মো. নাজমুল ইসলাম।

আলোচনায় থাকা প্রার্থীরা

ভিপি পদে আলোচনায় রয়েছেন আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল (বাগছাস), আবদুর রশিদ জিতু (স্বতন্ত্র), শেখ সাদী হাসান (ছাত্রদল) ও আরিফ উল্লাহ (শিবির সমর্থিত)। অন্যদিকে জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এগিয়ে আছেন মাজহারুল ইসলাম (শিবির), তানজিলা হোসাইন বৈশাখী (ছাত্রদল) ও তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম (বাগছাস)।

প্রচারণা ও প্রশাসনিক প্রস্তুতি

জাকসু নির্বাচন কমিশন ২৮ আগস্ট থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রচারণার সময় নির্ধারণ করে দিয়েছিল। প্রচারণায় স্বতন্ত্র ও দলীয়ভাবে সক্রিয় ছিলেন প্রার্থীরা। নির্বাচনে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রশাসন ক্যাম্পাসে মোতায়েন করেছে প্রায় দেড় হাজার পুলিশ সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মী এবং দায়িত্বে রয়েছেন দুইজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

ভোটার ও ভোট গণনা

এবারের নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ১১ হাজার ৮৯৭ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ৫,৭২৮ জন ও ছাত্র ৬,১১৫ জন। শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ হলে ভোট প্রদান করছেন। ভোট শেষে বিশেষ ওএমআর মেশিনের মাধ্যমে গণনা করা হবে, যাতে ফলাফল দ্রুত ও স্বচ্ছভাবে প্রকাশ করা যায়।

ঐতিহাসিক গুরুত্ব

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এটি হবে দশম জাকসু নির্বাচন। দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশি সময় পর অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক অনুশীলন হিসেবে দেখছেন।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়