‘সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নতুন পে-স্কেল, স্বস্তিতে অর্থনীতি’

ছবি: সংগৃহীত
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নতুন পে-স্কেল, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, খাদ্য নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব তথ্য জানান।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়নের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা সরাসরি কোনো তারিখ ঘোষণা না করলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন, এটি ২০২৬ সালের শুরু থেকেই কার্যকর হতে পারে। জাতীয় বেতন কমিশন আগামী ছয় মাসের মধ্যে নতুন বেতন কাঠামোর সুপারিশ দেবে। কমিশন বর্তমানে সাধারণ নাগরিক, সরকারি কর্মচারী, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের কাছ থেকে মতামত নিচ্ছে।
কমিশনের এক সদস্য জানিয়েছেন, মূল্যস্ফীতির বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় মূল বেতন দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নতুন কাঠামোতে ১ম গ্রেডে সর্বোচ্চ বেতন হতে পারে ১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা এবং ২০তম গ্রেডে সর্বনিম্ন বেতন ১৬ হাজার ৫০০ টাকা। বর্তমানে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত প্রায় ১০:১, যা নতুন কাঠামোতে ৮:১ থেকে ১০:১-এর মধ্যে রাখা হবে।
সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কিছু আর্থিক সুবিধা বাড়ানো হচ্ছে বলে জানান ড. সালেহউদ্দিন। এর পাশাপাশি বকেয়া ভর্তুকির অর্থও পরিশোধ করছে সরকার। তবে রাজস্ব আয়ে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি না থাকায় বাড়তি ব্যয়ের অর্থসংস্থান নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত কিছু খবরকে তিনি “ঠিক নয়” বলে মন্তব্য করেন।
অর্থ উপদেষ্টা জানান, মূল্যস্ফীতি আগের তুলনায় নিয়ন্ত্রণে এসেছে। খাদ্যমূল্যস্ফীতি কমাতে সরকার সচেষ্ট। তবে বাসভাড়া, পরিবহন ও জ্বালানি খাতে ব্যয় নিয়ন্ত্রণ কিছুটা কঠিন বলে স্বীকার করেন তিনি।
তার ভাষায়, বেজটা যখন বড় হয় ১১-১৪ ছিল, তারপরে নামিয়ে আটে এনেছি। ওটা যদি সাতে থাকতো, ওখানে যদি চারে নামিয়ে আনতে পারতাম, সবাই মহানন্দ হতো।
আসন্ন বোরো মৌসুমে ধান সংগ্রহ ব্যাহত হলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম ও ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি করবে। গম যুক্তরাষ্ট্র থেকে এবং নন-বাসমতি চাল ভারত থেকে আনা হবে।
আরও পড়ুন: চ্যালেঞ্জের মুখে অর্থনীতি, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, চালের কোনো সংকট নেই। তবে সরকারি গুদামে পর্যাপ্ত মজুদ রাখাটা সুবিধাজনক।
তিনি আরও জানান, খোলাবাজারে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম (ওএমএস) পুনরায় শুরু হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টে দারিদ্র্য বৃদ্ধির তথ্য তুলে ধরলে অর্থ উপদেষ্টা তার নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
তিনি বলেন, আমি তাত্ত্বিক দিকে এখন যাবো না। বাস্তবতায় দারিদ্র্য আছে, তবে সেটি নির্ধারণের পদ্ধতি অনুযায়ী ভিন্ন মাত্রায় দেখা যায়।
অমর্ত্য সেনের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, দরিদ্র লোক দেখলেই তার চেহারা ও আচরণে তাকে চিনতে পারবেন। তাই দারিদ্র্য মাপার জন্য জটিল গবেষণার প্রয়োজন নেই।
আসন্ন ওয়াশিংটন সফর প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা জানান, এটি মূলত একটি ফলো-আপ বৈঠক। আইএমএফের পাইপলাইনে আরও অর্থ রয়েছে এবং এডিবি, এআইডিবি, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সঙ্গে চলমান চুক্তিগুলোর অগ্রগতি নিয়েই আলোচনা হবে।
তিনি বলেন, নতুন সরকারই মেজর সিদ্ধান্ত নেবে।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা জানান, চীন থেকে ২.২ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ২০টি ফাইটার জাহাজ কেনার বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করবেন না। নির্বাচনের জন্য ৪২০ কোটি টাকায় বডি ক্যামেরা কেনা অপচয় কিনা—এ বিষয়ে তিনি বলেন, আপনার সেটা পরে বুঝতে পারবেন।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ তার বক্তব্যে দেশের অর্থনীতিকে “স্বস্তিপূর্ণ” হিসেবে উল্লেখ করলেও দারিদ্র্য বিমোচনসহ কিছু ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান থাকার কথা স্বীকার করেছেন। নতুন পে-স্কেল ও অর্থনৈতিক উদ্যোগের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য ভবিষ্যতে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি