প্রথম ওয়ানডেতে আফগান চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ

ছবি: সংগৃহীত
আবুধাবি থেকেই এশিয়া কাপের সুপার ফোরে পৌঁছেছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে দুবাই ও শারজাহ ঘুরে আবারও ফিরেছে পরিচিত আবুধাবিতে—আর সেই পরিচিত প্রতিপক্ষ আফগানিস্তানের বিরুদ্ধেই আজ মাঠে নামছে টাইগাররা। শুরু হচ্ছে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচ।
বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টায় আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে গড়াবে ম্যাচটি। এই মাঠে আগেও সাফল্যের দেখা পেয়েছে জাকের আলীর দল। টানা চারটি টি২০ ম্যাচে আফগানদের হারিয়ে এখন আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ দল।
বাংলাদেশ দলে সবচেয়ে বড় সংযোজন ওপেনার সাইফ হাসান। টেস্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করা এই ক্রিকেটার এখন টি২০ দলে আস্থার প্রতীক। এবার তারই ওডিআই অভিষেক হতে যাচ্ছে আজ। টিম ম্যানেজমেন্ট আশা করছে, টি২০–এর ধারাবাহিক পারফরম্যান্স ওয়ানডেতেও বজায় রাখবেন তিনি।
১৪৫টি লিস্ট–এ ম্যাচ খেলার পর এই ফরম্যাটে প্রথমবার আন্তর্জাতিক মঞ্চে নামছেন সাইফ। চার বছর আগে রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকে শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন তিনি। ২০২১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি২০ অভিষেকও ছিল হতাশাজনক—৮ বলে ১ রান। এবার ওয়ানডে অভিষেককে রাঙাতে চান এই ডানহাতি ব্যাটার।
লিটন দাস না থাকায় ওপেনিংয়ে তানজিদ হাসানের সঙ্গী হিসেবে তাকেই দেখা যেতে পারে। তবে দল চাইলে পারভেজ হোসেন ইমনকেও ওপেনিংয়ে রেখে সাইফকে তিন নম্বরে নামাতে পারে।
বাংলাদেশ দলের ওপেনিং পজিশনে নিয়মিত ছিলেন পারভেজ ইমন ও তানজিদ হাসান তামিম। সাইফ হাসানের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে এখন সেখানে বাড়তি প্রতিযোগিতা। যদি সাইফ ওপেনিংয়ে সুযোগ পান, তবে ইমনকে বিশ্রাম দেওয়া হতে পারে।
মিডল অর্ডারে লড়াই হবে তাওহিদ হৃদয়, জাকের আলী অনিক, শামীম হোসেন পাটোয়ারী ও নুরুল হাসান সোহানের মধ্যে। হৃদয় সর্বশেষ দুই ওয়ানডেতেই ফিফটি করেছেন, আর জাকের শেষ ছয় ওয়ানডেতে করেছেন ছয়টি ফিফটি। ফলে এই দুজনকে বাদ দেওয়া কঠিন। মিরাজ জানিয়েছেন, কিপার হিসেবে সোহান এগিয়ে আছেন। তাই একাদশে টি২০ অধিনায়ক জাকেরের জায়গায় সোহানও থাকতে পারেন।
আরও পড়ুন: সিরিয়াকে হারিয়ে দুর্দান্ত শুরু বাংলাদেশের
বাংলাদেশ তিন মাস পর ওয়ানডে খেলছে, তবে আফগানিস্তানের অবস্থা আরও কঠিন। তারা সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেছে গত বছরের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে—প্রায় আট মাস আগে। এবারের সিরিজের সব ম্যাচই হবে আবুধাবিতে, তাই কন্ডিশনের সঙ্গে নতুন করে মানিয়ে নেওয়ার তেমন প্রয়োজন নেই কোনো দলের।
তবে ওয়ানডে স্কোয়াডে থাকা মেহেদী হাসান মিরাজ, নাজমুল হোসেন শান্ত, তানভীর ইসলামদের জন্য কিছুটা সময় লাগতে পারে ছন্দে ফিরতে।
২০২৭ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে দুই দলই স্কোয়াডে পরিবর্তন এনেছে। আফগানিস্তান দলে বাদ পড়েছেন ফজলহক ফারুকি, গুলবাদিন নায়েব ও মোহাম্মদ নুর। স্পিন আক্রমণে ভরসা রাখছে তারা রশিদ খান ও মোহাম্মদ নবির ওপর। তাদের সঙ্গে থাকতে পারেন নবাগত পেসার বশির আহমেদ ও আব্দুল্লাহ আহমেদজাই—যারা টি২০ সিরিজেই অভিষেক পেয়েছেন।
বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণে তানভীর ইসলামের থাকার সম্ভাবনাই বেশি। গত শ্রীলঙ্কা সিরিজে সাত উইকেট নিয়েছিলেন তিনি, শেষ ম্যাচে পাঁচ উইকেট। ফলে রিশাদ হোসেনকে বাহিরে থাকতে হতে পারে।
পেস আক্রমণে তাসকিন আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমান নিশ্চিতভাবেই থাকছেন। তৃতীয় পেসার হিসেবে সম্ভাবনা বেশি তানজিম হাসান সাকিবের। তবে কারও বিশ্রাম দরকার হলে হাসান মাহমুদ বা নাহিদ রানার সুযোগ আসতে পারে।
এক সময় আফগানিস্তানকে নিয়ে বাংলাদেশ শিবিরে ছিল অজানা আতঙ্ক। কিন্তু এখন সেই ভয় অনেকটাই কেটে গেছে। টানা চারটি টি২০ জয়ের পর মিরাজরা এবার ওয়ানডেতেও হোয়াইটওয়াশের লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামছে।
এখন পর্যন্ত দুই দলের চারটি দ্বিপক্ষীয় সিরিজে ফলাফল ২–২ সমতায়। সব মিলিয়ে ওয়ানডেতে মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ—১১ জয়ে, যেখানে আফগানিস্তান জিতেছে ৮ ম্যাচে।
বাংলাদেশ:
তানজিদ হাসান, সাইফ হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহিদ হৃদয়, মেহেদী হাসান মিরাজ (অধিনায়ক), জাকের আলী অনিক/নুরুল হাসান সোহান (উইকেটরক্ষক), শামীম হোসেন পাটোয়ারী, তানজিম হাসান সাকিব, তানভীর ইসলাম, তাসকিন আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমান।
আফগানিস্তান:
রহমানউল্লাহ গুরবাজ, ইব্রাহিম জাদরান, সেদিকুল্লাহ আতাল, রহমত শাহ, হাসমতউল্লাহ শহিদি (অধিনায়ক), ডারউশ রাসুলি, আজমতউল্লাহ ওমরজাই, মোহাম্মদ নবি, রশিদ খান, নানগেয়েলিয়া খারোত ও বশির আহমাদ।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ছয় ওয়ানডেতে জয় মাত্র একটি। সেই প্রেক্ষাপটে এই সিরিজ বাংলাদেশের জন্য বড় সুযোগ নিজেদের ফর্মে ফেরার। টি২০ সিরিজে হোয়াইটওয়াশের পর আত্মবিশ্বাসের ঢেউয়ে ভাসছে দলটি। আজকের ম্যাচেই হয়তো জানা যাবে—এই আত্মবিশ্বাস ওয়ানডেতেও জয় এনে দিতে পারে কিনা।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি