উয়েফা সুপার কাপের মাঠে শিশুহত্যা বন্ধের বার্তা
ছবি: সংগৃহীত
উয়েফা সুপার কাপের ফাইনাল মঞ্চ এবার শুধু ফুটবলীয় লড়াইয়ের সাক্ষী ছিল না, একই সঙ্গে তা হয়ে উঠেছিল যুদ্ধ ও শিশু হত্যার বিরুদ্ধে এক জোরালো প্রতিবাদের প্রতীক।
বুধবার (১৩ আগস্ট) রাতে ইতালির উদিনে ব্লুনার্জি স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ী পিএসজি এবং ইউরোপা লিগের চ্যাম্পিয়ন টটেনহ্যামের মধ্যকার ম্যাচ শুরুর আগে ‘শিশু হত্যা বন্ধ করো, বেসামরিক মানুষ হত্যা বন্ধ করো’ লেখা একটি ব্যানার প্রদর্শন করে উয়েফা।
ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, ইউক্রেন ও ইরাকের নয়জন শরণার্থী শিশু এই ব্যানারটি মাঠে নিয়ে আসে। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উয়েফা সভাপতি আলেক্সান্ডার সেফেরিনের পাশে দাঁড়ানো দুই ফিলিস্তিনি শিশু মোহামেদ (৯) এবং তালা (১২) গাজার বর্তমান মানবিক সংকটের প্রতীক হয়ে ওঠে।
উয়েফার এই পদক্ষেপ এসেছে সম্প্রতি ফিলিস্তিনি কিংবদন্তি ফুটবলার সুলেইমান আল-ওবেইদের মৃত্যুর ঘটনায় সংস্থাটির নীরবতা এবং দুর্বল প্রতিক্রিয়ার তীব্র সমালোচনার পর।
‘ফিলিস্তিনি পেলে’ নামে পরিচিত ৪১ বছর বয়সী আল-ওবেইদ দক্ষিণ গাজায় মানবিক সহায়তার জন্য অপেক্ষা করার সময় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত হন।
তার মৃত্যুর পর উয়েফা এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি সংক্ষিপ্ত শোকবার্তা প্রকাশ করে, যেখানে বলা হয়, আল-ওবেইদ ছিলেন ‘একজন প্রতিভা, যিনি অন্ধকারতম সময়েও অসংখ্য শিশুকে আশা জুগিয়েছেন।’ তবে সেই পোস্টে তার মৃত্যুর কারণ বা প্রেক্ষাপট উল্লেখ না করায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে সংস্থাটি।
লিভারপুলের তারকা ফুটবলার মোহামেদ সালাহ উয়েফার ওই পোস্টের জবাবে সরাসরি প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, ‘আপনারা কি বলতে পারেন তিনি কীভাবে, কোথায় এবং কেন মারা গেছেন?’
সালাহর এই প্রতিবাদ নেটিজেনদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে এবং উয়েফার ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ অবস্থানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে তোলে।
আরও পড়ুন: হামজার দুর্দান্ত গোলেও টাইব্রেকারে হেরে বিদায় লেস্টারের
ফুটবল প্যালেস্টাইন-এর প্রতিষ্ঠাতা বাসিল মিকদাদি আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে উয়েফার নীরবতার সমালোচনা করে বলেন, আল-ওবেইদ এই গণহত্যায় নিহত প্রথম ফিলিস্তিনি ফুটবলার নন। এখন পর্যন্ত ৪০০-এর বেশি ক্রীড়াবিদ নিহত হয়েছেন, তবে আল-ওবেইদ ছিলেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত মুখ।
তিনি আরও বলেন, গাজার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ফুটবল কর্তৃপক্ষগুলোর 'সম্পূর্ণ নীরবতা' খুবই হতাশাজনক।
এই সমালোচনার মুখে উয়েফা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে এবং যুদ্ধবিরোধী বার্তা নিয়ে মাঠে নামে।
একই সঙ্গে, উয়েফা ফাউন্ডেশন ফর চিলড্রেন ঘোষণা দিয়েছে যে, তারা গাজার শিশুদের জরুরি মানবিক সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা মেডসাঁ দ্য মন্ড (Doctors of the World), ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স এবং হ্যান্ডিক্যাপ ইন্টারন্যাশনাল-এর সঙ্গে অংশীদারিত্বে নতুন প্রকল্প শুরু করছে।
উয়েফা জানিয়েছে, তারা আফগানিস্তান, লেবানন, সুদান, সিরিয়া, ইয়েমেন এবং ইউক্রেনসহ বিভিন্ন সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলের শিশুদের জন্যও সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
সংস্থাটির পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলা হয়েছে, বার্তাটি যথেষ্ট জোরালো এবং স্পষ্ট। এটি একটি ব্যানার, একটি আহ্বান।
এই সকল আলোচনার মধ্যেই উয়েফা সুপার কাপের ফাইনালটি অনুষ্ঠিত হয়। নির্ধারিত সময়ে পিএসজি ও টটেনহ্যামের মধ্যকার ম্যাচটি ২-২ গোলে শেষ হয়। এরপর খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে, যেখানে ৪-৩ ব্যবধানে জিতে শিরোপা উৎসব করে ফরাসি জায়ান্ট পিএসজি।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








