মেসির জাদুতে ইন্টার মায়ামি প্রথমবার এমএলএস কাপ চ্যাম্পিয়ন
ছবি: সংগৃহীত
নিউ ইয়র্কের চেজ স্টেডিয়ামে শনিবার দিবাগত রাতে অনুষ্ঠিত মেজর লিগ সকার কাপ ফাইনালে কানাডিয়ান ক্লাব ভ্যাঙ্কুভার হোয়াইটক্যাপসকে ৩-১ গোলে পরাজিত করে ইতিহাসে প্রথমবার শিরোপা জিতল ডেভিড বেকহ্যামের মালিকানাধীন ইন্টার মায়ামি। ম্যাচে গোল না পেলেও দুটি অ্যাসিস্টে জয় নিশ্চিত করেছিলেন লিওনেল মেসি। পাশাপাশি স্প্যানিশ মিডফিল্ডার সার্জিও বুস্কেটসও খেললেন ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ, যা স্মরণীয় হয়ে উঠল ট্রফি হাতে শেষ বিদায়ের মাধ্যমে।
ম্যাচের অষ্টম মিনিটে এগিয়ে যায় মায়ামি। রদ্রিগো ডি পল ও মেসির আক্রমণের পর তাদেও আলেন্দের ক্রস ভ্যাঙ্কুভারের ডিফেন্ডার এদিয়ের ওকাম্পোর শরীরে লেগে জালে ঢুকে যায়। ৬০ মিনিটে আলী আহমেদের শটে সমতায় ফেরে ভ্যাঙ্কুভার। তবে ৭১ মিনিটে প্রতিপক্ষের টার্নওভার থেকে বল কাড়েন মেসি এবং নিখুঁত পাসে রদ্রিগো ডি পলকে দিয়ে দলের দ্বিতীয় গোলটি নিশ্চিত করেন। অতিরিক্ত সময়ের ৯৬তম মিনিটে মেসির থ্রু-পাসে আলেন্দে শেষ গোলটি জ্বলে তুলে দেয় মায়ামিকে।
দুই ম্যাচে দুটি ট্রফির প্রতীক্ষা ছিল মেসির জন্য। ইস্টার্ন কনফারেন্স ফাইনালে জয়ের মাধ্যমে প্রথম ট্রফি নিশ্চিত করেছিল মায়ামি। নিউইয়র্ক সিটি এফসিকে ৫-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে তারা এমএলএস কাপের ফাইনালে ওঠে। তাদেও আলেন্দের হ্যাটট্রিক এবং মেসির সহায়তায় মাতেও সিলভেট্টি ও তেলাস্কো সেগোভিয়ার গোল মায়ামিকে বড় ব্যবধান এনে দেয়।
মৌসুমের মাঝেই পেশাদার ফুটবলে অবসর নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন জর্দি আলবা ও সার্জিও বুসকেটস। এমএলএস কাপ ফাইনালই তাদের শেষ ম্যাচ, যেখানে মায়ামি খেলেছে ওয়েস্টার্ন কনফারেন্সের সানদিয়েগো এফসি বা ভ্যাঙ্কুভারের বিজয় দলের সঙ্গে।
আরও পড়ুন: ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপের পূর্ণাঙ্গ ড্র প্রকাশ, যে গ্রুপে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা
ফাইনাল ম্যাচে, মেসি দর্শকদের উল্লাসে সাড়া দিয়ে দলের প্রথম ও শেষ গোলের সুযোগ তৈরি করেন। প্লে-অফে মোট ৯ গোল ও ১৫টি গোল-অ্যাসিস্টে অবদান রেখে রেকর্ড গড়েছেন তিনি। নিয়মিত মৌসুমেও দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর মেসি টানা দুইবার ‘মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার’ নির্বাচিত হন।
মায়ামির জন্য এটি তৃতীয় বড় শিরোপা। ২০২৩ সালে লিগস কাপ, ২০২৪ সালে সাপোর্টার্স শিল্ড এবং এবার প্রথমবারের মতো এমএলএস কাপ জিতে তারা নতুন ইতিহাস গড়ল। মেসি যোগদানের পরই ক্লাবটি শীর্ষে উঠতে সক্ষম হয়েছে।
২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ক্লাবটি মেসির আগমনের আগে কোনো বড় ট্রফি জেতে পারেনি। মেসির উপস্থিতি শুধু খেলা নয়, দলকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, আত্মবিশ্বাস ও লক্ষ্য অর্জনের মানসিকতা দিয়েছে। লিগে ক্রমবর্ধমান সাফল্য এবং সম্প্রতি বড় ট্রফি জয়ের মাধ্যমে মায়ামি এখন মেজর লিগ সকারের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের অংশ।
মেসির ক্যারিয়ারের ৪৮তম শিরোপা এই জয়। তার সংগ্রহে বার্সেলোনার হয়ে ৩৫টি, পিএসজির হয়ে ৩টি, আর্জেন্টিনার হয়ে ৬টি এবং ইন্টার মায়ামির হয়ে ৪টি শিরোপা। বয়স বেড়েছে, কিন্তু প্রতিভা, নেতৃত্ব ও খেলার মনোভাব অম্লান।
ফ্লোরিডার বাতাস আজ অন্যরকম। আতশবাজি, উল্লাস ও আনন্দের কেন্দ্রে একজনই মানুষ—লিওনেল মেসি। যে ক্লাবের স্বপ্ন ও বিশ্বাস ভেঙে পড়েছিল, সেই ক্লাব আজ তার জাদুতে ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে। এমএলএস কাপ জয়ের মধ্য দিয়ে মায়ামি ফুটবলের নতুন ইতিহাসে প্রবেশ করলো, আর মেসি প্রমাণ করলেন—নিরবচ্ছিন্ন নিষ্ঠা, অসাধারণ প্রতিভা ও হৃদয়ের ইচ্ছা বয়সকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








