News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২১:৫২, ৯ ডিসেম্বর ২০২৫

বিএনপির হাতেই দেশকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষমতা: তারেক রহমান

বিএনপির হাতেই দেশকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষমতা: তারেক রহমান

ছবি: সংগৃহীত

দলের নানাবিধ সরকারি-সামাজিক নীতি ও নির্বাচনী কর্মকৌশল উপস্থাপন করেছেন এবং বর্তমান শাসনদলকে তীব্র সমালোচনা করেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিএনপির। 

মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত “দেশ গড়ার পরিকল্পনা” শীর্ষক আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দলের পরিকল্পনা, কৌশল এবং ইতিহাস সম্পর্কিত একাধিক দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। 

ছাত্রদলের জেলা পর্যায়ের নেতৃত্বসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের হাজারও নেতা-কর্মী অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

তারেক রহমান প্রধানত তিনটি বিষয় জোর দিয়েছেন, (১) বিএনপি সরকারের সময় দুর্নীতির মাত্রা কমেছে এবং বিএনপির “ট্র্যাক রেকর্ড” সফল, (২) দেশ পরিচালনার জন্য “ডিটেইল প্ল্যানিং” কেবল বিএনপির আছে, এবং (৩) নারী-স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে ব্যাপক সু্যোগ ও সামাজিক সেবা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি। 

তিনি দাবি করেন যে, বিএনপির আমলে দুর্নীতি দমন কার্যক্রম শক্তভাবে পরিচালিত হয়েছে এবং অতীতের উল্লেখিত ব্যবস্থাগুলি পুনরায় চালু করা হবে।

তারেক রহমান ঘোষণা করেন যে, বিএনপি ক্ষমতায় এলে প্রায় চার কোটি পরিবারের নারী প্রধানদের জন্য ‘ফ্যামিলি কার্ড’ প্রদানের উদ্যোগ নেবে। 

তিনি বলেন, যেখানে পরিবারের প্রধান নারী, সেগুলোতে ফ্যামিলি কার্ড দেওয়া হবে; সমাজের পিছিয়ে পড়া ও দুস্থ নারীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। 

লক্ষ্য হল নারীকে স্বাবলম্বী মা হিসেবে গড়ে তোলা। একই সঙ্গে অনুষ্ঠানে দলের পরিকল্পনায় স্বাস্থ্য কার্ড, ফার্মার্স কার্ড ও অন্যান্য সামাজিক নিরাপত্তা ও প্রশিক্ষণ-ভিত্তিক উদ্যোগের কথাও বিশদভাবে উপস্থাপিত হয়।

তারেক রহমান বলেন, শুধুমাত্র শিক্ষিত মা নয়, স্বাবলম্বী মা হিসেবে নারীদের গড়ে তোলাই দলের লক্ষ্য। 

তিনি প্রশ্ন তোলেন, দেশের অর্ধেক নারীকে কেন ঘরের মধ্যে রাখব? এবং যোগ করেন, এগুলো বাস্তবায়নের জন্য বিস্তারিত পরিকল্পনা তাদের কাছে রয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থান নেওয়ার ঘোষণাও দেন তিনি, যেকোনো মূল্যে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এ ব্যাপারে কঠোর হতে হবে। 

অনিয়মকারীদের কোনো দলীয় ছাড় থাকবে না; অতীতে দলের কেউ অন্যায় করলে বিএনপি আইনকে কাজে লাগিয়ে বিচার করেছে এবং আগামীতেও একই নীতিই অনুসরণ করবে বলে দাবি করা হয়।

দুর্নীতিবিরোধী নীতির প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, বিএনপির আমলে দুর্নীতির সূচক কমতে থাকে। প্রতিবার বিএনপির সরকার দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরেছে। 

আরও পড়ুন: বেগম রোকেয়া ছিলেন নারী জাগরণের আলোক দিশারি: তারেক রহমান

তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার পথে কাজ করা হয়েছিল এবং বেগম খালেদা জিয়ার ২০০১–২০০৬ সালের শাসনামলে দুর্নীতির দাগ থেকে দেশকে বের করা শুরু হয়েছিল। দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠার কথাও তিনি উল্লেখ করেন এবং আপৎকালীনানুসারে সেই ধরনের প্রতিষ্ঠা পুনর্বাহিত করার প্রতিশ্রুতি দেন। বর্তমান শাসনদলকে (“ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা” হিসেবে উল্লেখ) উল্লেখ করে তিনি আইন পরিবর্তনের মাধ্যমে দুর্নীতি দমন ব্যবস্থাকে দুর্বল করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন এবং বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে এসব নিয়ম ফিরিয়ে আনা হবে।

তারেক রহমান দলের ইতিহাস ও স্বাধীনতা-হেফাজতের কাহিনী তুলে ধরে বলেন, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিএনপির সুস্পষ্ট ট্র্যাক রেকর্ড রয়েছে। 

তিনি উল্লেখ করেন, প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ভারতকে তাড়িয়ে তালপট্টি দ্বীপকে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে এনেছিলেন এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পানির ন্যায্য হিস্যা দাবি করার উদ্যোগে বিএনপিই অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল। 

এছাড়া ১৯৭৫ সালের ঘটনাবলীর প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে বলেন, যদি সিপাহী জনতার বিপ্লবের সময় জিয়াউর রহমান নির্দেশনা না নিতেন তা হলে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হতে পারত।

দলের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম ও জনসংযোগ কৌশল সম্পর্কে তিনি বলেন, ব্যক্তি নয় - দল বড়; তাই সবার আগে দলকে শক্তিশালী করতে হবে। জনগণের কাছে গেলে, দলকে টিম করে মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে; পরিকল্পনাগুলো লিফলেট আকারে ছাপিয়ে দেওয়া হবে। 

তিনি কণ্ঠস্থভাবে বলেন, দেশ গড়ার পরিকল্পনাগুলোর প্রত্যেকটি শব্দ জনগণের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে - মা-বোন, তরুণ প্রজন্ম, ইমাম-মুয়াজ্জিন সবার কাছে।

তিনি বলেন, যদি এই পরিকল্পনার ৪০ শতাংশও বাস্তবায়ন করা যায় তবে দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে এবং জনগণ বিএনপির পাশে এসে দাঁড়াবে। 

দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান জনগণের দরজায় পৌঁছাতে এবং তথ্য-প্রমাণ প্রদান করে বিএনপির অতীত সাফল্য তুলে ধরতে বলেন, দুর্নীতি দমন, খাদ্য উৎপাদন, মেয়েদের শিক্ষা, কর্মসংস্থান, ইন্টারনেট সুবিধা - এসব বিএনপিই করেছে।

অনুষ্ঠানটির আয়োজক বিএনপি; আলোচনা-শ্রেণি ও কর্মশালা ধারাবাহিকভাবে আগামী ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। অনুষ্ঠানে সাধারণত যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ওলামা দলসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন অংশগ্রহণ করবে; পরে এক নির্দিষ্ট দিনে (বুদ্ধিজীবী দিবস বা বিজয় দিবসের বাইরে) সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে বলে জানানো হয়। অনুষ্ঠানের বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী উপস্থিত ছিলেন; যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল সঞ্চালনা করেন।

তারেক রহমানের ভাষণে দলের ঐতিহাসিক বৃহৎ দাবি, সামাজিক-অর্থনৈতিক কর্মসূচি ও নির্বাচনী কৌশল একযোগে তুলে ধরা হয়েছে। তিনি দলের নেতাকর্মীদের প্রতি ফরচিত্র দিয়েছেন মাঠে সক্রিয় থেকে পরিকল্পনাগুলো জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়ার আহ্বান। আগামী কর্মশালা ও সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এসব পরিকল্পনার আরও বিশদ ও আওতাভুক্ত কৌশল প্রকাশিত হবে বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়