News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২০:১২, ৭ অক্টোবর ২০২৫

শিক্ষা ও শিক্ষক উন্নয়নে বিএনপির প্রতিশ্রুতিশীল পরিকল্পনা

শিক্ষা ও শিক্ষক উন্নয়নে বিএনপির প্রতিশ্রুতিশীল পরিকল্পনা

ফাইল ছবি

শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা, চাকরির স্থায়ীকরণ এবং সম্মানজনক অবস্থান নিশ্চিত করতে উচ্চপর্যায়ের কমিশন গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। 

একই সঙ্গে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিক ও কর্মমুখী করার লক্ষ্যে ‘শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠনের পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।

মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষ্যে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট’ আয়োজিত শিক্ষক সমাবেশে এসব কথা বলেন।

সমাবেশে ভিডিও বার্তায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, জনগণের ভোটে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে রাষ্ট্রের সামর্থ্য অনুযায়ী শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বাড়ানো, চাকরি স্থায়ীকরণ এবং জাতীয়করণের বিষয়টি ইতিবাচকভাবে বিবেচনার জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের কমিশন গঠন করা হবে। 

তিনি আরও বলেন, শিক্ষকতা পেশা কখনো উপায়হীন বিকল্প বা সাধারণ চাকরির মতো হতে পারে না। সবচেয়ে মেধাবী মানুষ যেন এই পেশাকে প্রথম অগ্রাধিকার হিসেবে বেছে নিতে পারে, সে জন্য বিএনপি পরিকল্পনা করেছে।

তারেক রহমান প্রচলিত শিক্ষা কারিকুলামকে ঢেলে সাজানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, আমরা প্রচলিত শিক্ষাক্যারিকুলামকে ব্যবহারিক ও কারিগরি শিক্ষাপ্রধান করে ঢেলে সাজাতে চাই। এজন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ‘শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন করা হবে। 

তিনি মনে করেন, নৈতিকতা ও ধর্মীয়-সামাজিক মূল্যবোধের আলোকে কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন এবং শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকীকরণ না করা গেলে বিশ্বে টিকে থাকা কঠিন হবে।

তিনি বলেন, বিশ্ব এখন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের যুগে প্রবেশ করেছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে অর্থ-বিত্তে, মেধা-মননে, জ্ঞানে-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ হতে হবে এবং জ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করার বিষয়ে তারেক রহমান বলেন, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবসে রাষ্ট্রীয় ভবনে আমন্ত্রিত অতিথিদের তালিকায় অবশ্যই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের অন্তত একজন করে শিক্ষককে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। 

আরও পড়ুন: ‘ভারত স্বৈরাচারকে আশ্রয় দিয়ে বিরাগভাজন হলে কিছু করার নেই’

তিনি মনে করেন, রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় শিক্ষকদের উপস্থিতি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

তিনি আরও বলেন, পারিবারিক পাঠশালার গণ্ডি পার হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের সামনে শিক্ষক-শিক্ষিকারাই হচ্ছেন আদর্শ রোল মডেল। শিক্ষকরা যেন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সামনে রোল মডেল হিসেবে উপস্থাপন করতে পারেন, সে জন্য বিএনপি বাস্তবধর্মী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

তারেক রহমান শিক্ষকদের সামাজিক বিপ্লবের হাতিয়ার হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, দুর্নীতিবাজরা বিত্তবান হলে রাষ্ট্র ও সমাজের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়, কিন্তু শিক্ষকদের সম্মান অক্ষুণ্ণ থাকলে সমাজের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পায়। রাষ্ট্র ব্যবস্থায় দুর্নীতি নামক ব্যাধি রয়েছে। সমাজকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হলে শিক্ষকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।

তারেক রহমান জানান, দেশে প্রায় ৯৫ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সম্পূর্ণ এমপিওভুক্ত। তবে শুধু সংখ্যা নয়, শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুণগত মান নিশ্চিত করাই গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সমাবেশে উপস্থিত হাজার হাজার শিক্ষক-কর্মচারীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক সংস্কার, নাগরিক উন্নয়নের জন্য আমরা যত উদ্যোগই গ্রহণ করি না কেন, যদি শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকায়ন এবং শিক্ষকদের আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা ও সম্মান নিশ্চিত করতে না পারি, তবে কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া সম্ভব হবে না। 

তিনি শিক্ষকদের সমর্থন কামনা করে বলেন, একটি জ্ঞান ও মেধাভিত্তিক রাষ্ট্র ও সরকার গঠনে আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি আপনার সমর্থন ও সহযোগিতা চায়।

তারেক রহমান আলবার্ট আইনস্টাইনের একটি উদ্ধৃতি তুলে ধরে বলেন, সৃষ্টিশীল প্রকাশ ও জ্ঞানের মধ্যে আনন্দ জাগ্রত করা হলো শিক্ষকের সর্বপ্রধান শিল্প। একজন শিক্ষক যদি নিজে নিরানন্দ অবস্থায় থাকেন, তবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞানের আনন্দ উদ্দীপ্ত করা সম্ভব নয়। 

তিনি শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা এবং সামাজিক সম্মান নিশ্চিত করার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।

এই সমাবেশে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশের মূল উদ্দেশ্য ছিল স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণ, কিন্ডারগার্টেন শিক্ষাব্যবস্থায় পক্ষপাতিত্ব বাতিল এবং শর্তবিহীন নিবন্ধন প্রক্রিয়ার দাবি জানানো।

তারেক রহমানের বক্তব্যে শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকীকরণ, শিক্ষকদের আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা এবং মর্যাদা সংরক্ষণে বিএনপির অঙ্গীকার স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে, যা দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ইতিবাচক প্রভাব রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়