মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান অমর
ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর সেনাকুঞ্জে আজ অনুষ্ঠিত সশস্ত্র বাহিনী দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের আহ্বান জানিয়েছেন, যেন আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নির্বিঘ্ন ও উৎসবমুখরভাবে অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গণতান্ত্রিক এবং নিয়মতান্ত্রিক নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্যপূর্ণ বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী তাদের পেশাগত দক্ষতা ও দেশপ্রেমের সমন্বয়ে দেশের জন্য ত্যাগ ও তৎপরতার ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ রাখবে। নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে।
উক্ত অনুষ্ঠানে ইউনূস মুক্তিযুদ্ধের শহীদ, যুদ্ধাহত ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংস আক্রমণের পর চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তার ধারাবাহিকতায় ২১ নভেম্বর সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর যৌথ অভিযান শুরু হয়, যা স্বাধীনতার পথে একটি মাইলফলক হিসেবে গণ্য হয়।
প্রধান উপদেষ্টা স্মরণ করেন, যদি বিজয় অর্জন না হতো, তাহলে সেই বীর সেনাদের মৃত্যুদণ্ড অনিবার্য হত এবং তাদের পরিবারের সকল সদস্যের জীবন বিপন্ন হতো। ২১ নভেম্বরের যৌথ অভিযানের ফলশ্রুতিতে ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।
ইউনূস বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলায় সশস্ত্র বাহিনী সর্বদাই জনগণের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছে। ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং চলমান দেশ পুনর্গঠন ও সংস্কারেও বাহিনী জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে অব্যাহতভাবে আস্থার প্রতিদান দিচ্ছে।
আরও পড়ুন: সেনানিবাসে খালেদা জিয়া ও ড. ইউনূসের সৌজন্য সাক্ষাৎ
তিনি আরও উল্লেখ করেন, গত ৩৭ বছরে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা ৪৩টি দেশে ৬৩টি মিশন সম্পন্ন করেছে। বর্তমানে বিশ্বের ১০টি মিশনে আমাদের শান্তিরক্ষীরা নিয়োজিত। বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা বিশ্বে অন্যতম বৃহৎ নারী শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবেও পরিচিত।
চীফ এডভাইসার ইউনূস বলেন, একটি শান্তিপ্রিয় জাতি হিসেবে বাংলাদেশ সব বন্ধুরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্মানজনক সহাবস্থানে বিশ্বাসী। তবে যেকোনো আগ্রাসী বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সশস্ত্র বাহিনী সর্বদা প্রস্তুত এবং সংকল্পবদ্ধ থাকতে হবে।
তিনি জানান, সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর আধুনিকায়ন, উন্নত প্রশিক্ষণ এবং যুগোপযোগী প্রযুক্তি সংযোজনের প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বক্তব্যের শুরুতে প্রধান উপদেষ্টা গতকাল অনুষ্ঠিত ভূমিকম্পে নিহত ও আহতদের প্রতি শোক প্রকাশ করেন। এরপর স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের এবং ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের স্মরণ করেন।
ইউনূস বলেন, মুক্তিকামী সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর অকুতোভয় বীর সেনানীরা জীবনের পরোয়া না করে এদেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন। তাদের ত্যাগ আমাদের জন্য দেশ পুনর্গঠনের নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
প্রধান উপদেষ্টা মনে করিয়ে দেন, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর জন্ম ১৯৭১ সালের রণক্ষেত্রে। ২১ নভেম্বরের যৌথ অভিযান মুক্তিযুদ্ধের মাইলফলক হিসেবে আজও গৌরবের সঙ্গে স্মরণ করা হয়।
তিনি আরও বলেন, দেশ ও জনগণের নিরাপত্তা রক্ষার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দায়িত্বশীল ভূমিকা অব্যাহত রাখতে হবে।
ইউনূস সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তাদের দক্ষতা, পেশাগত প্রশিক্ষণ ও আধুনিক সরঞ্জাম নিশ্চিত করতে আমাদের আরও প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে, যেন দেশের সার্বভৌমত্ব ও আন্তর্জাতিক মর্যাদা রক্ষা করা যায়।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








