লকডাউন’ কর্মসূচিতে সারাদেশে একদিনে ১২ যানবাহনে আগুন
ফাইল ছবি
কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা আওয়ামী লীগের অনলাইনে ঘোষিত ‘লকডাউন’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বুধবার (১২ নভেম্বর) থেকে বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সকাল পর্যন্ত ১২টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্তব্যরত কর্মকর্তা রাশেদুল খালিদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, বুধবার বেলা ১১টার দিকে রমনা থানার সামনে পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন লাগে। পুলিশ দাবি করেছে, গাড়িতে কোনো দুর্বৃত্ত আগুন দেয়নি; যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে আগুন লেগেছে। দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বরে সনি সিনেমা হলের সামনে একটি বাসে দুর্বৃত্তরা আগুন দেয়। সন্ধ্যা ৬টা ৩৮ মিনিটে ধোলাইপাড়ে আরও একটি বাসে আগুনের ঘটনা ঘটে। ঢাকায় আগুনের ঘটনা আরও দুই জায়গায় ঘটে—কমলাপুর রেলস্টেশনের পাশে লেগুনা এবং পল্লবীর ট্রাস্ট পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসে।
ঢাকার বাইরের জেলায় ও অন্যান্য স্থানে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বাসাইল উপজেলার বাঐখোলা এলাকায় চলন্ত বাসে দুর্বৃত্তরা আগুন দেয়, তবে কোনো হতাহত হয়নি। টাঙ্গাইলের বারই খোলা, গজারিয়া মুন্সিগঞ্জের আকিজ পেপার মিলের সামনে, গোপালগঞ্জ গণপূর্ত অফিসের পাশে, শরিয়তপুরের নাওডোবা গোল চত্বরে, মাদারীপুরের শিবচরে চিনিবোঝাই ট্রাক ও পিকআপ-জিপে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে গ্রামীণ ব্যাংকে পেট্রল ঢেলে আগুন দেওয়া হয়; এতে আসবাব ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র পুড়ে যায়, তবে টাকার ভল্টে কোনো ক্ষতি হয়নি।
আরও পড়ুন: লকডাউন আতঙ্কে রাজধানীতে সীমিত গণপরিবহন, তুলনামূলক শান্ত পরিস্থিতি
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণও ঘটেছে। ঢাকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি, মিরপুরের পল্লবী, কারওয়ানবাজার সার্ক ফোয়ারা মোড়, মৌচাক ফরচুন টাওয়ার ও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি আনসার সদস্যকে লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। ১–১১ নভেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর ১৫টি স্থানে মোট ২৭টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
ট্রেন ও রেলপথেও হামলার ঘটনা ঘটে। সিলেট-আখাউড়া রেলপথের ভানুগাছ-শ্রীমঙ্গল স্টেশনের মধ্যবর্তী মৌলভীবাজার কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতরে রেললাইনের স্লিপার ফেলে ঢাকাগামী কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনে বড় দুর্ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করা হয়। তেজগাঁও রেলস্টেশনের পরিত্যক্ত লাইনে একটি ট্রেনের কোচেও আগুন দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
ফুলবাড়িয়ায় দাঁড়িয়ে থাকা বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় চালক জুলহাস মিয়া নিহত হন। এই ঘটনায় ফুলবাড়িয়ার স্থানীয় আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নরসিংদীর মাধবদী থানার কাঁঠালিয়া ইউনিয়নের মোবারককে ভুলতা বিশনন্দী আঞ্চলিক মহাসড়কের পায়রা চত্বরের ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আটক করা হয়। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের আরও ৪৪ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
রাজধানী ও আশেপাশের জেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। শাহবাগে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, হাইকোর্ট এলাকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এলাকা ও মিন্টু রোডে বিজিবি সদস্যরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছেন। কাকরাইলসহ ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন রয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও এই পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে। ঢাকার মোহাম্মদপুরের প্রিপারেটরি স্কুলের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। ইংরেজি মাধ্যমের ইউরোপীয়ান স্ট্যান্ডার্ড স্কুল, সানবীম স্কুল, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও শান্তা-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির সকল ক্লাস অনলাইনে অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল সার্ভিস ও বাস সার্ভিসও বন্ধ রাখা হয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ যে, সারাদেশে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায়কে কেন্দ্র করে ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিরাপত্তা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে এবং সাধারণ মানুষের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে সকল ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








