News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২১:২৯, ২৪ অক্টোবর ২০২৫

জাতিসংঘ মহাসচিব দৌড়ে আলোচনায় ড. ইউনূস

জাতিসংঘ মহাসচিব দৌড়ে আলোচনায় ড. ইউনূস

ছবি: সংগৃহীত

জাতিসংঘের বর্তমান মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মেয়াদ ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার আগেই পরবর্তী মহাসচিব কে হবেন তা নিয়ে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গনে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে তিনজন প্রার্থীর নাম প্রকাশ্যে এলেও, নোবেলজয়ী ও বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছে। 

যদিও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় একে ‘রিউমার’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে তার নাম আলোচনায় আসা অস্বাভাবিক নয়।

জাতিসংঘ মহাসচিব পদের জন্য প্রার্থী নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া চলতি বছরের শেষ দিকে শুরু হবে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশন থেকেই এ নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে। জাতিসংঘের চার্টার্ডের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশের ভিত্তিতে সাধারণ পরিষদ মহাসচিব নিয়োগ দিয়ে থাকে।

মহাসচিব পদে এখন পর্যন্ত জোরালোভাবে প্রকাশ্যে আসা তিন প্রার্থী হলেন:

  • মিশেল ব্যাশেলে: চিলির সাবেক প্রেসিডেন্ট ও জাতিসংঘের সাবেক মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
  • রাফায়েল মারিয়ানো গ্রসি: আর্জেন্টিনার নাগরিক ও আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক।
  • রেবেকা গ্রিনস্প্যান: কোস্টারিকার সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বর্তমানে জাতিসংঘ বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার (আঙ্কটাড) মহাসচিব। কোস্টারিকা সরকার তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন দিয়েছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জাতিসংঘের ৮০ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম একজন নারী মহাসচিব নির্বাচিত হওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। প্রকাশিত তিন প্রার্থীর মধ্যে দুজনই নারী।

নোবেল বিজয়ী ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম ‘সম্ভাব্য প্রার্থী’ হিসেবে দেশের অভ্যন্তরীণ ও স্থানীয় পর্যায়ে আলোচনায় রয়েছে। 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রায় ছয় মাস আগে থেকেই স্থানীয় পর্যায়ে তার নাম আলোচনায় এসেছে এবং তিনি বৈশ্বিক একটি পদের জন্য যথাযথ ব্যক্তিত্ব হওয়ায় এই আলোচনা ‘অস্বাভাবিক নয়’। আন্তর্জাতিক পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতার নিরিখে তার মহাসচিব হওয়াটা 'খুবই কাঙ্ক্ষিত' বলেও সূত্রগুলো মন্তব্য করেছে।

তবে, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এই আলোচনাকে ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব পদে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম আলোচনায় থাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, এটা পুরোটাই রিউমার, এটার কোনো ভিত্তি নেই।

আরও পড়ুন: প্রধান উপদেষ্টার সৌদি সফর বাতিল

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানিয়েছে, বিষয়টি সরকারি পর্যায়ের কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনায় এখনো ওঠেনি। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কারো সঙ্গে তার প্রার্থিতা নিয়ে জাতিসংঘের কোনো সূত্রের যোগাযোগ ঘটে থাকতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে। এছাড়া, জাতিসংঘের সর্বশেষ সাধারণ পরিষদের সভায় গুতেরেসের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ হয়েছে, তবে সেই সাক্ষাতে মহাসচিব পদ নিয়ে আলোচনা হয়েছিল কিনা, তা নিশ্চিত না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এ ধরনের তথ্য শোনা যাচ্ছে। তবে আমরা অফিশিয়ালি কিছু জানি না বা ওনার (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) নাম ফ্লোট করার ব্যাপারে আমাদেরকে বলা হয়নি।

জাতিসংঘ মহাসচিব নির্বাচনের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ভারসাম্যের বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র ও সাবেক রাষ্ট্রদূতদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এশিয়া থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার বান কি মুন (২০০৭-২০১৬) মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন, এরপর পদটি ইউরোপের দেশ পর্তুগালে (আন্তোনিও গুতেরেস) গেছে।

জাতিসংঘের নিয়মিত ব্যবস্থায় এখন মহাসচিব পাওয়ার সুযোগটি আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার। সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, জাতিসংঘের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী গ্রুপভিত্তিকভাবে মহাসচিব কে হবেন সেই সিদ্ধান্ত হয়। সেই গ্রুপ থেকেই মনোনয়ন আসে। এবারের মনোনয়নের ক্ষেত্রে যদি এটা আফ্রিকা বা লাতিন আমেরিকার জন্য নির্ধারিত থাকে তাহলে অন্য কোনো অঞ্চল থেকে মহাসচিব হওয়ার সম্ভাবনা কম।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলোও জানিয়েছে, এখন আবার এশিয়া থেকে মহাসচিব নির্বাচিত হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। 

একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মন্তব্য করেন, এশিয়া থেকে এখন কারো নাম প্রস্তাব করার কথা না।

প্রচলিত রীতির বাইরে যাওয়ার গুঞ্জন: তবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কখনো কখনো জাতিসংঘ প্রয়োজন অনুযায়ী প্রচলিত রীতির বাইরেও গিয়ে থাকে।

মিশেল ব্যাশেলে, মারিয়ানো গ্রসি ও রেবেকা গ্রিনস্প্যান ছাড়াও ‘রিউমারড পটেনশিয়াল ক্যান্ডিডেটস’ হিসেবে আরো বেশ কয়েকজনের নাম আলোচনায় রয়েছে:

  • আলিসিয়া বার্সেনা: মেক্সিকোর সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমান পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদবিষয়ক মন্ত্রী।
  • জেসিন্ডা আরডার্ন: নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী।
  • ডাভিড চোকেউয়াঙ্কা: বলিভিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট।
  • মারিয়া ফার্নান্দা এস্পিনোসা গারসেস: জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাবেক নারী সভাপতি।
  • ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা: ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সমর্থনপুষ্ট, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
  • ভুক ইয়েরেমিচ: ২০১৬ সালের নির্বাচনে গুতেরেসের প্রতিদ্বন্দ্বী, সার্বিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
  • আমিনা মোহামেদ: জাতিসংঘের বর্তমান ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল ও নাইজেরিয়ার নাগরিক।
  • মিয়া মটলি: বার্বাডোস এর প্রধানমন্ত্রী।

এই সকল প্রার্থীর নাম ও আঞ্চলিক বিবেচনা মাথায় রেখে বৈশ্বিক কূটনৈতিক অঙ্গনে পরবর্তী মহাসচিব নির্বাচন নিয়ে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়