News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৫:২৪, ২৪ অক্টোবর ২০২৫

পশ্চিম তীর সংযুক্তিকরণ বিল স্থগিতের নির্দেশ নেতানিয়াহুর

পশ্চিম তীর সংযুক্তিকরণ বিল স্থগিতের নির্দেশ নেতানিয়াহুর

ছবি: সংগৃহীত

বহুমুখী সমালোচনা ও যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর সতর্কবার্তার পর ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের দুটি ভূখণ্ড— জুদেয়া ও সামারিয়া—কে ইসরায়েলের ভূখণ্ড হিসেবে ঘোষণা সংক্রান্ত বিলের কার্যক্রম স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।

নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন লিকুদ পার্টির সংসদ সদস্য ওফির কাৎজ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) ইসরায়েলি দৈনিক ইয়েদিওথ আহরোনোথ-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, পরবর্তী আদেশ না আসা পর্যন্ত জুদেয়া ও সামারিয়াকে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করার বিলটির কার্যক্রম স্থগিত রাখতে।

১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় ইসরায়েল ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের জুদেয়া ও সামারিয়া অঞ্চল দখল করে। সেই থেকে এই ভূখণ্ডগুলো কার্যত ইসরায়েলের দখলেই রয়েছে।

গত বুধবার (২২ অক্টোবর) দেশটির পার্লামেন্ট নেসেট-এ বিলটি উত্থাপন করা হয়। ১২০ আসনের নেসেটে বিলটির পক্ষে ভোট পড়ে ২৫টি, বিপক্ষে ২৪টি, আর ৭১ জন ভোটদানে বিরত থাকেন। বিরতদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু নিজে এবং তার লিকুদ পার্টির কয়েকজন এমপিও ছিলেন।

নেসেটের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো বিল চূড়ান্তভাবে আইনে পরিণত করতে চার ধাপে ভোটাভুটি প্রয়োজন হয়। প্রথম ধাপে অনুমোদনের পর বিলটি পার্লামেন্টারি কমিটিতে পাঠানো হয়, এবং পরবর্তী তিন দফা ভোটের পরই সেটি কার্যকর হয়। তবে নেতানিয়াহুর নতুন নির্দেশে আপাতত বিলটির পরবর্তী ধাপগুলো স্থগিত রাখা হয়েছে।

বিলটি উত্থাপনের পরপরই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। 

আরও পড়ুন: নেতানিয়াহুর আপত্তি সত্ত্বেও নেসেটে পশ্চিম তীর বিল পাস

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপদেষ্টা মার্কো রুবিও বলেন, ইসরায়েল নেসেটে যে বিল পাস করেছে, যুক্তরাষ্ট্র কোনোভাবেই সেটিকে সমর্থন করবে না। আমরা এটিকে গাজায় শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় ধরনের হুমকি হিসেবে দেখছি।

পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও বিষয়টি নিয়ে কঠোর অবস্থান জানান। 

তিনি বলেন, আমার প্রশাসন কখনই ইসরায়েলকে পশ্চিম তীর সংযুক্ত করার অনুমতি দেবে না। যদি এই বিল বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়, তাহলে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা হারাবে।

এর আগে গত জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (ICJ) ঘোষণা দেয় যে ফিলিস্তিনি অঞ্চল দখল আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ। আদালত ইসরায়েলকে পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমের সব বসতি খালি করার নির্দেশও দেয়।

বিলের পক্ষে থাকা ইসরায়েলি এমপিদের একটি অংশ দাবি করেছেন, পশ্চিম তীরের এই অঞ্চলগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় সংযোগ রয়েছে। তাদের বক্তব্য, এই এলাকাগুলো ইসরায়েলের “ঐতিহাসিক ভূমি”র অংশ হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত।

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পশ্চিম তীর সংযুক্তি বাস্তবায়িত হলে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনা চূড়ান্তভাবে শেষ হয়ে যাবে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও ইসরায়েলের এই উদ্যোগের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

লিকুদ পার্টির অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, নেতানিয়াহু আপাতত কূটনৈতিক চাপ সামাল দিতে ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখতে বিলটির অগ্রগতি স্থগিত করেছেন। তবে ভবিষ্যতে নতুন রাজনৈতিক ভারসাম্য তৈরি হলে বিলটি আবারও নেসেটে উত্থাপনের সম্ভাবনা পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি, জিও নিউজ, আলজাজিরা, রয়টার্স।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়