ভোজ্যতেলের দাম বাড়াতে সরবরাহে সংকটের কারসাজি
ফাইল ছবি
বাজারে চাহিদা অনুযায়ী বোতলজাত সয়াবিন তেল মিলছে না—এ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতাদের মধ্যে। সরবরাহ সংকটের কারণে দোকানিরা ক্রেতার চাহিদা পূরণে হিমশিম খাচ্ছেন। অথচ তেলের দাম এখনো বাড়েনি, বিক্রি হচ্ছে পুরোনো দামে।
চট্টগ্রামের স্থানীয় বাজারে মুদি দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ ধরে বোতলজাত সয়াবিন তেলের ঘাটতি প্রকট আকার ধারণ করেছে। রিফাইনাররা পর্যাপ্ত তেল সরবরাহ না করায় রান্নার অন্যতম প্রধান উপকরণটি একপ্রকার উধাও হয়ে যাচ্ছে বাজার থেকে।
বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন গত ১৩ অক্টোবর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৮৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৯৫ টাকা করার ঘোষণা দেয়। তবে সরকারের অনুমোদন না পাওয়ায় তা কার্যকর হয়নি। বর্তমানে বাজারে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮৯ টাকায়, দুই লিটার ৩৭৮ টাকায় এবং পাঁচ লিটার ৯২০ টাকায়।
কাজিরদেউরি বাজারের সাদিয়া ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মালিক শামসুল ইসলাম জানান, চাহিদা অনুযায়ী তেল পাচ্ছি না। রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের এক ও দুই লিটারের বোতল পাইনি, শুধু পাঁচ লিটারের বোতল এসেছে।
একই অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন জীবন গ্রোসারির মালিক ইসমাইল হোসেনও।
তিনি বলেন, কোম্পানিগুলো বাজারে তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। এক দোকানে এক লিটারের বোতল দিলে, অন্য দোকানে পাঁচ লিটারের বোতল দিচ্ছে না।
সরবরাহ সংকট আরও বাড়তে পারে এমন ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছে। কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা খুচরা বিক্রেতাদের জানাচ্ছেন, সামনে তেলের সরবরাহে সমস্যা হতে পারে।
আরও পড়ুন: রাজধানীর বাজারে উঠছে শীতের সবজি, দাম এখনও চড়া
অ্যাসোসিয়েশনের ঘোষণায় বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৯৫ টাকা, খোলা সয়াবিন ১৭৭ টাকা এবং পাম তেল ১৬৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়। পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিনের দাম নির্ধারণ করা হয় ৯৪৫ টাকা।
অভিযোগ উঠেছে, এই মূল্যবৃদ্ধির অনুমোদন না পাওয়ায় বাজারে তেল সরবরাহ কমিয়ে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
তবে বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বার্ষিক ভোজ্য তেলের চাহিদা প্রায় ২৪ লাখ মেট্রিক টন। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৩ মাস ২০ দিনে (১ জুলাই থেকে ২০ অক্টোবর) দেশে আমদানি হয়েছে ১১ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন পাম ও সয়াবিন তেল। যার প্রায় ৮০ শতাংশ আমদানি করেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলো।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, আমদানি স্বাভাবিক থাকার পরও বাজারে সরবরাহ সংকটের পেছনে রয়েছে পরিকল্পিত কারসাজি।
দোকানিরা বলছেন, সরকারের অনুমোদন না পাওয়ায় দাম বাড়াতে না পেরে কোম্পানিগুলো কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে। ফলে খুচরা ব্যবসায়ীরা চাহিদামতো তেল পাচ্ছেন না।
আন্তর্জাতিক বাজারেও সয়াবিন তেলের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। জুলাই-আগস্টের তুলনায় গত দুই মাসে প্রতি কেজির দাম ১.০৫ থেকে ১.১০ ডলারের মধ্যে ওঠানামা করেছে, যা বড় কোনো পরিবর্তন নয়।
সরবরাহ সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা ফোন রিসিভ করেননি।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








