সেপ্টেম্বরেই পদত্যাগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল ২ উপদেষ্টাকে
ফাইল ছবি
অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পদত্যাগ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর আলোচনা চলছে। গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে তাদের পদত্যাগের পরামর্শ দেওয়া হলেও তারা আরও সময় চেয়েছেন বলে জানা গেছে।
সূত্র বলছে, নির্বাচন ঘিরে নানা সমীকরণে এখনই পদত্যাগের সিদ্ধান্তে পৌঁছাননি তারা।
সরকারের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, মাহফুজ আলম এখন পর্যন্ত আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহ দেখাননি এবং সরকারে থেকেই দায়িত্ব পালন করতে চান।
অন্যদিকে আসিফ মাহমুদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে পদত্যাগ করতে পারেন। যদিও এ বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আসিফ মাহমুদ বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই আমি পদত্যাগ করব।
অপরদিকে মাহফুজ আলম ২৮ সেপ্টেম্বর এক অনুষ্ঠানে বলেন, দুই মাস ধরে আমি অনিশ্চয়তায় আছি—আমি কখন নেমে যাই, জানি না।
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। বর্তমানে উপদেষ্টা পরিষদে প্রধান উপদেষ্টাসহ ২৩ জন সদস্য রয়েছেন, যাদের মধ্যে দুইজন ছাত্র প্রতিনিধি—মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ।
নির্বাচন ঘিরে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে সম্প্রতি প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে তারা এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় অংশ নেওয়া কয়েকটি দলও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে।
রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন রয়েছে, উপদেষ্টা পরিষদে শিগগির বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর চাপের মুখে ‘বিতর্কিত’ ও ‘দলীয়’ উপদেষ্টাদের সরানোর চিন্তাভাবনা চলছে।
আরও পড়ুন: নির্বাচনে আ. লীগের অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই: প্রেস সচিব
ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারে শপথ নেওয়া মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়েও চলছে জোর আলোচনা।
আসিফ মাহমুদ আগেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, তবে দলীয় নাকি স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেননি।
মাহফুজ আলমের ভাই মাহবুব আলম সম্প্রতি এনসিপির এক সভায় বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনে প্রার্থী হতে পারেন মাহফুজ আলম।
তবে মাহফুজ আলম নিজে এখনো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান জানাননি।
গত মাসের শেষ দিকে এক সংলাপে তিনি বলেন, গত দুই মাস ধরে আমি অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি যে আমি কখন নেমে যাই। মানে আমি কখন নামব আমি জানি না।
আসিফ মাহমুদের এনসিপিতে যোগ দেওয়ার গুঞ্জন ছড়ালেও দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর পদত্যাগের খবরকে এনসিপি অস্বীকার করেছে।
দলীয় বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পদত্যাগের বিষয়টি কিংবা দল থেকে অব্যাহতি নেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। এনসিপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, আসিফ মাহমুদ এনসিপিতে যোগ দেওয়ার পরিবর্তে অন্য একটি দলের সঙ্গে আলোচনা করে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা ভাবছেন।
নাহিদ ইসলাম, যিনি গণ-অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন, পরে পদত্যাগ করে এনসিপিতে যোগ দেন। তার পদত্যাগের পর শিক্ষার্থী উপদেষ্টাদের প্রভাব কমে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ পদত্যাগ করলে সরকারের সঙ্গে এনসিপির সম্পর্কেও ফাটল ধরতে পারে।
এনসিপির পক্ষ থেকে দুই ছাত্র প্রতিনিধি উপদেষ্টার পদত্যাগ চাওয়ার বিষয়টিকে পরিকল্পিত বলে মনে করা হচ্ছে।
সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, দুই উপদেষ্টাকে দলীয় হিসেবে দেখানোর প্রবণতা যদি থাকে, তাহলে অনেক উপদেষ্টাই আছেন যাদের রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড আছে। যারা কোনো একটা দলকে সরকারের ভেতরে থেকে সমর্থন করে যাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, কেবল পূর্বতন রাজনৈতিক পরিচয় বা সখ্যতার বিষয়কে দলীয় হিসেবে বিবেচনা করা হলে সরকার ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অনেকেই বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে গভীর সখ্যতা রেখে চলেন। ফলে তাদের জায়গাটাও পুনর্গঠন করা দরকার।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাব্বির আহমেদ মনে করেন, ক্ষমতার চেয়ারে থাকার লাভ তো অন্যরকম। যত দিন আপনি ক্ষমতার চেয়ারে তত দিন আপনি প্রভাব-প্রতিপত্তি এনজয় করতে পারবেন। তবে নির্বাচনের নিরপেক্ষতার স্বার্থে শিক্ষার্থী উপদেষ্টাদের ‘চলে যেতে হবে’ বলেই মত তার।
তিনি আরও বলেন, আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলম পদত্যাগ করলেও সরকারের সঙ্গে এনসিপির সম্পর্ক খারাপ হবে না। এই শিক্ষার্থীরা অধ্যাপক ইউনূসকে ক্ষমতায় বসিয়েছেন। আর এনসিপি গঠনের ক্ষেত্রেও তার নিজস্ব আগ্রহ কাজ করেছে। ফলে কেবল পদত্যাগ করলেই এনসিপির পেছন থেকে মেন্টর হিসেবে অধ্যাপক ইউনূস চলে যাবেন সেটা ভাবার এখনই সময় আসেনি।
নির্বাচনের আগে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের পদত্যাগের বিষয়টি রাজনৈতিক সমীকরণে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। যদি তারা পদত্যাগ করেন এবং গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউই সরকারে না থাকেন, তবে সার্বিক পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ হারানোর আশঙ্কা করছেন আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিরা।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








