News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৯:১৮, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

রাশিয়ার দুই তেল জায়ান্টের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞা

রাশিয়ার দুই তেল জায়ান্টের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞা

ফাইল ছবি

ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে শান্তি আলোচনায় মস্কোর অনীহা ও অস্পষ্ট অবস্থানকে দায়ী করে রাশিয়ার দুটি বৃহত্তম তেল কোম্পানি—রসনেফট ও লুকঅয়েলের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। 

বুধবার (২২ অক্টোবর) দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এই পদক্ষেপের ঘোষণা দেয়।

মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, এখন হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করার এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার সময়। 

তিনি আরও জানান, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধ শেষ করার প্রচেষ্টাকে সমর্থন জানাতে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ প্রয়োজনে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।

বেসেন্ট বলেন, রাশিয়ার প্রধান অর্থকরী জ্বালানি খাতকে লক্ষ্য করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যাতে ক্রেমলিনের যুদ্ধযন্ত্রের জন্য অর্থ জোগাড়ের সক্ষমতা কমে যায়।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়, রসনেফট ও লুকঅয়েলের ৩৪টি সহযোগী প্রতিষ্ঠানও নিষেধাজ্ঞার আওতায় এসেছে।

নিষেধাজ্ঞার এই ঘোষণা আসে এমন একদিন পর, যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বুদাপেস্টে নির্ধারিত বৈঠকটি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেন।

ট্রাম্প বলেন, প্রতিবার ভ্লাদিমিরের সঙ্গে কথা ভালো হয়, কিন্তু এর কোনো ফল হয় না—একদমই হয় না।

তিনি আরও জানান, ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে পুতিনের সঙ্গে ভালো ফোনালাপ হয়েছিল, তবে “এখন কোনো ইতিবাচক ফলাফল সম্ভব নয়।”

হোয়াইট হাউসে ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, পুতিন শান্তির ব্যাপারে আন্তরিক নন, কিন্তু নতুন নিষেধাজ্ঞা হয়তো তাকে আলোচনায় ফিরিয়ে আনবে বলে আশা করছি।

তিনি এই পদক্ষেপকে “অসাধারণ নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজ” হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, রাশিয়া যদি যুদ্ধ বন্ধে রাজি হয়, তবে দ্রুতই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা যেতে পারে।

রুটেও মার্কিন পদক্ষেপের প্রশংসা করে বলেন, এটি পুতিনের ওপর আরও চাপ তৈরি করছে। চাপ দিতে হয়, আর আজ সেটিই করা হয়েছে।

একই দিনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলো রাশিয়ার ওপর ১৯তম নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজের অনুমোদন দেয়, যার মধ্যে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি সীমিত করার প্রস্তাবও রয়েছে।

আরও পড়ুন: হয় চুক্তি নয়তো ১৫৫% শুল্ক, চীনকে হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের

ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লায়েনের প্রস্তাব অনুযায়ী, নতুন তালিকায় চীনের চারটি তেল কোম্পানি ও কিছু ভারতীয় প্রতিষ্ঠানকেও অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে, যারা পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেনের অভিযোগে অভিযুক্ত।

এর আগে গত ১৫ অক্টোবর রসনেফট ও লুকঅয়েলের ওপর একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাজ্য। প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সরকার তখন জানায়, রাশিয়ার জ্বালানি খাতকে লক্ষ্য করেই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যাতে “ক্রেমলিনের যুদ্ধ-অর্থনীতি দুর্বল হয়।”

নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার কিছু ঘণ্টা আগেই রাশিয়া এক বৃহৎ পারমাণবিক মহড়া চালায়। প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, রুশ সেনাপ্রধান জেনারেল ভ্যালেরি গেরাসিমভ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে মহড়ার অগ্রগতি জানাচ্ছেন।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা স্থল, সাবমেরিন ও বিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে—এর মধ্যে এমন দূরপাল্লার অস্ত্রও রয়েছে যা যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানতে সক্ষম।

এ ছাড়া রাশিয়ার ‘টু-২২এম৩’ দূরপাল্লার বোমারু বিমান বাল্টিক সাগরের আকাশে চক্কর দিয়েছে। এ সময় বিদেশি, সম্ভবত ন্যাটোর যুদ্ধবিমান সেগুলোর গতিবিধি অনুসরণ করেছে।

মস্কো জানিয়েছে, তারা ইউক্রেন সংঘাতের একটি দীর্ঘমেয়াদি শান্তিপূর্ণ সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ট্রাম্প প্রশাসনের “সত্যিকারের আগ্রহ” ও “সংঘাতের মূল কারণ বুঝতে চাওয়ার প্রচেষ্টা”-র প্রশংসা করেছে।

তবে ক্রেমলিন কিয়েভ ও তার পশ্চিমা মিত্রদের অভিযুক্ত করেছে “আলোচনায় অনাগ্রহ” ও “সংঘাত দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা”-র জন্য।

গত সপ্তাহে ফোনালাপে ট্রাম্প ও পুতিন হাঙ্গেরিতে এক অনির্ধারিত তারিখে বৈঠকে সম্মত হয়েছিলেন, যা সংঘাত নিরসনের পথে অগ্রগতি আনতে পারত। 
কিন্তু পরে ট্রাম্প জানান, এখনই নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের সঠিক সময় নয়।

তবে রাশিয়ার সাম্প্রতিক সামরিক পদক্ষেপ এবং ইউক্রেনে বোমাবর্ষণের ঘটনায় অন্তত সাতজন নিহত হওয়ার পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়।

ট্রাম্প বলেন, আমার মনে হয়েছে সময় হয়ে গেছে। আমরা অনেক অপেক্ষা করেছি।

ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপ ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিতে এক বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। কয়েক সপ্তাহ আগেও হোয়াইট হাউস মস্কোর সঙ্গে সমঝোতামূলক কূটনীতি বজায় রাখার চেষ্টা করছিল। কিন্তু বুধবারের নিষেধাজ্ঞা সেই নীতির মোড় ঘুরিয়ে দিল।

এদিকে, রাশিয়ার জ্বালানি খাতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণার পর বৈশ্বিক তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি প্রায় ২ ডলার বেড়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এটি শুধু মস্কোর ওপর অর্থনৈতিক চাপ নয়, বরং ট্রাম্প প্রশাসনের একপ্রকার সতর্কবার্তা—“শান্তি আলোচনায় অগ্রগতি না হলে আরও কঠোর ব্যবস্থা আসবে।”

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়