বিষাক্ত কুয়াশায় ঢেকে গেল দিল্লি

ছবি: সংগৃহীত
দীপাবলির আলো নিভতেই ঘন ও বিষাক্ত কুয়াশায় ঢেকে গেছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি।
সোমবার (২০ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৭টায় রাজধানীর বায়ু মান সূচক (একিউআই) ছিল ৩৩৫, যা ‘অতি খারাপ’ পর্যায়ে পড়ে।
আনন্দ বিহারে সূচক ৪১৭ পৌঁছেছে, যা ‘গুরুতর’ (Severe) স্তরে পড়েছে।
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ (সিপিসিবি)-এর তথ্য অনুযায়ী, রবিবার রাতেই ৩৮টি মনিটরিং স্টেশনের মধ্যে ২৪টির বাতাস ‘অতি খারাপ’ মানের ছিল।
নয়াদিল্লির অন্যান্য অঞ্চলে রবিবার সন্ধ্যায় দূষণের মাত্রা ছিল—ওয়াজিরপুর ৩৬৪, বিবেক বিহার ৩৫১, দ্বারকা ৩৩৫, আর কে পুরম ৩২৩। সিরি ফোর্ট, দিলশাদ গার্ডেন ও জাহাঙ্গীরপুরিতে একিউআই ৩১৮; পাঞ্জাবি বাগে ৩১৩, নেহরু নগরে ৩১০, অশোক বিহারে ৩০৫ এবং বাওয়ানায় ৩০৪। নয়ডা সেক্টর ১-এ একিউআই ৩৪৪, ভিজয় নগরে ৩৪৮, গাজিয়াবাদের নয়ডা এলাকায় ৩৪১ এবং গুরগাঁওয়ে ২৮৩।
শীতের সময় ঠাণ্ডা বাতাস দূষণকণা ভূমির কাছাকাছি আটকে রাখে। ফলে ফসলের খড় পোড়ানো, যানবাহন ও কারখানার ধোঁয়া মিশে এক প্রাণঘাতী বাতাস তৈরি হয়। তবে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে দীপাবলির আতশবাজির কারণে। উৎসবের রাতের পরই সূক্ষ্ম ধূলিকণা (পিএম২.৫) প্রতি ঘনমিটারে ২৪৮ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত পৌঁছেছে, যা শ্বাসযন্ত্রে প্রবেশ করে রক্তপ্রবাহে মিশতে পারে এবং ক্যানসারসহ গুরুতর রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
আরও পড়ুন: হংকংয়ে রানওয়ে থেকে সাগরে ছিটকে পড়ল বিমান, নিহত ২
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এই মাসের শুরুতে দীপাবলিতে আতশবাজি নিষিদ্ধের সার্বিক নিষেধাজ্ঞা আংশিক শিথিল করে কম দূষণকারী ‘গ্রিন ফায়ারক্র্যাকার’ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল। তবে বাস্তবে এই নিষেধাজ্ঞা অনেকাংশে উপেক্ষিত হয়েছে।
নয়াদিল্লির আকাশে এবার প্রথমবারের মতো ‘ক্লাউড সিডিং’ বা কৃত্রিম বৃষ্টি পরীক্ষা চালানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় লবণ বা অন্যান্য রাসায়নিক মেঘে ছিটিয়ে বৃষ্টি নামিয়ে বাতাস পরিষ্কার করার চেষ্টা করা হবে। পাশাপাশি সরকার ডিজেল চালিত জেনারেটরের ব্যবহার কমিয়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নিয়েছে।
ব্রিটিশ মেডিক্যাল সাময়িকী দ্য ল্যানসেট প্ল্যানেটারি হেলথের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০০৯ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ভারতে বায়ুদূষণের কারণে প্রায় ৩৮ লাখ মানুষ মারা গেছে। জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফ সতর্ক করেছে, দূষিত বাতাস শিশুদের তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বাড়িয়ে দেয়।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা দীপাবলির শুভেচ্ছা জানিয়ে আহ্বান জানিয়েছেন, সবাই যেন আদালতের নির্দেশ মেনে কেবল গ্রিন ক্র্যাকার ফাটান এবং সম্ভব হলে প্রদীপ, রংগোলি ও মিষ্টি দিয়ে উৎসব পালন করুন। এ বছরের দীপাবলি দিল্লির জন্য ঐতিহাসিক—একদিকে পরিবেশবান্ধব আতসবাজির অনুমতি, অন্যদিকে স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো আয়োজিত ‘দিব্য দীপোৎসব’ নতুন ভারতের সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণের প্রতীক।
শনিবার আয়োজিত দীপোৎসবে কর্তব্যপথ জুড়ে জ্বলেছে ১.৫১ লক্ষ প্রদীপ এবং আকাশে উড়েছে রামায়ণ-ভিত্তিক ড্রোন শো, যা রাজধানীর ইতিহাসে নতুন অধ্যায় রচনা করেছে।
সূত্র: এএফপি, আইকিউএয়ার, সিপিসিবি, দ্য ল্যানসেট প্ল্যানেটারি হেলথ, ইউনিসেফ, ভারতীয় আবহাওয়া দফতর (আইএমডি), সিএকিউএম
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি