News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১০:০২, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

নেতানিয়াহুর আপত্তি সত্ত্বেও নেসেটে পশ্চিম তীর বিল পাস

নেতানিয়াহুর আপত্তি সত্ত্বেও নেসেটে পশ্চিম তীর বিল পাস

ছবি: সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করার একটি বিতর্কিত বিল ইসরায়েলি পার্লামেন্ট ‘নেসেট’-এ প্রাথমিক অনুমোদন পেয়েছে। বিলটি আইনে পরিণত হলে পশ্চিম তীর কার্যত ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত হবে এবং সেখানে দেশটির পূর্ণ সার্বভৌমত্ব কার্যকর হবে।

বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ১২০ আসনের নেসেটে অনুষ্ঠিত ভোটে ২৫-২৪ ব্যবধানে বিলটির প্রথম ধাপ পাস হয়। 

এখন এটি আইনে পরিণত হতে আরও তিন দফা ভোটে অনুমোদন পেতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও তার দল লিকুদ পার্টি প্রস্তাবটির বিরোধিতা করলেও সরকার-সমর্থক কয়েকজন জোটসঙ্গী এবং কিছু বিরোধী এমপি বিলটির পক্ষে ভোট দেন।

লিকুদ পার্টির প্রবীণ সদস্য ইউলি এডেলস্টাইন প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানের বিপরীতে ভোট দেন, যা বিলটি পাসে নির্ণায়ক ভূমিকা রাখে। দলের অধিকাংশ সদস্য ভোটদানে অংশ নেননি বা বিরত থাকেন।

নেসেটের সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “জুদিয়া ও সামারিয়া (অর্থাৎ পশ্চিম তীর) অঞ্চলে ইসরায়েল রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা” করার লক্ষ্যেই এই বিল উত্থাপন করা হয়েছে। প্রাথমিক অনুমোদনের পর বিলটি আরও আলোচনার জন্য সংসদের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটিতে পাঠানো হবে।

নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন লিকুদ পার্টি এক বিবৃতিতে এই ভোটকে “বিরোধী দলের রাজনৈতিক উসকানি” হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। 

দলটির ভাষায়, এ ধরনের পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্কের ক্ষতি করতে পারে। সার্বভৌমত্ব শুধু কথার মাধ্যমে নয়, বরং বাস্তব পদক্ষেপের মাধ্যমেই অর্জন সম্ভব।

এই ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে এমন সময়ে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক মাস আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, ইসরায়েলকে পশ্চিম তীর সংযুক্তির অনুমতি দেওয়া হবে না। একই সময়ে গাজায় যুদ্ধবিরতি টিকিয়ে রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ইসরায়েল সফর করছেন।

আরও পড়ুন: রাশিয়ার দুই তেল জায়ান্টের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞা

আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজা একটি অভিন্ন ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড, যেখানে ইসরায়েলের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা স্পষ্টভাবে অবৈধ। বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপ কার্যত বহুল আলোচিত দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পথ বন্ধ করে দিতে পারে এবং মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করবে। একই সঙ্গে এটি ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নতুন বিভাজন তৈরি করতে পারে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশটির ওপর কূটনৈতিক চাপ বাড়াবে।

ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, আমরা নেসেটের ফিলিস্তিনি ভূমি সংযুক্তির এই প্রচেষ্টা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজা এক অবিচ্ছেদ্য ভূখণ্ড, যার ওপর ইসরায়েলের কোনো সার্বভৌম অধিকার নেই।

হামাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই বিল দখলদার ইসরায়েলের উপনিবেশবাদী চেহারাকে আরও স্পষ্ট করেছে। পশ্চিম তীর দখলের এই প্রচেষ্টা অবৈধ, অগ্রহণযোগ্য এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রকাশ্য লঙ্ঘন। এটি দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে এবং ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ।

কাতারও এই পদক্ষেপকে “ফিলিস্তিনিদের ঐতিহাসিক অধিকারের প্রকাশ্য লঙ্ঘন এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ” বলে মন্তব্য করেছে।

সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর বসতি স্থাপন ও সম্প্রসারণমূলক কর্মকাণ্ড কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করে রিয়াদ।

জর্ডানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের প্রকাশ্য লঙ্ঘন, দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পথে প্রতিবন্ধকতা এবং ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অধিকারে সরাসরি হস্তক্ষেপ।

বর্তমানে পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে সাত লাখেরও বেশি ইসরায়েলি অবৈধভাবে নির্মিত বসতিতে বসবাস করছে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মতে, এসব বসতি আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অবৈধ এবং অঞ্চলটিতে স্থায়ী শান্তির পথে বড় অন্তরায়।

সূত্র: আল জাজিরা

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়