News Bangladesh

ফরিদপুর সংবাদদাতা || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৪:০৪, ২৩ অক্টোবর ২০২৫
আপডেট: ১৪:০৫, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

২০ টাকার জন্য বন্ধুর হাতে খুন হয় ১৩ বছরের হানযালা

২০ টাকার জন্য বন্ধুর হাতে খুন হয় ১৩ বছরের হানযালা

মাদরাসাছাত্র আমির হামজা ওরফে হানযালা। ছবি: সংগৃহীত

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় মাত্র ২০ টাকার বিরোধ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশু মাদরাসাছাত্র আমির হামজা ওরফে হানযালাকে (১৩) হত্যা করেছে তারই বন্ধু ও সহপাঠী ফরহাদ রেজা (১৬)।

বুধবার (২২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় আলফাডাঙ্গা থানায় আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মধুখালী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. আজম খান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

গত সোমবার (২০ অক্টোবর) হানযালার বাবা সায়েম উদ্দিন বিশ্বাস ছেলের নিখোঁজের বিষয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন উপপরিদর্শক (এসআই) শহিদুল ইসলাম। তদন্ত চলাকালেই মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) সন্ধ্যার দিকে চান্দড়া মাদরাসার পাশে একটি ডোবায় ভাসমান অবস্থায় একটি বস্তা দেখতে পান স্থানীয়রা।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বস্তাটি উদ্ধার করে খুললে পাওয়া যায় হানযালার অর্ধগলিত মরদেহ। বস্তার ভেতরে ছিল কয়েকটি ইটও।

এএসপি আজম খান জানান, “ঘটনার রাতে আমি মধুখালী থেকে সরেজমিনে তদন্ত করি। পরদিন সকালে চারটি টিমে ভাগ হয়ে তদন্তে নামে পুলিশ। ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে অনুসন্ধান শুরু করতেই প্রকৃত রহস্য বেরিয়ে আসে।”

তিনি বলেন, “ফরহাদ ও হানযালা দুজনই চান্দড়া তা’লিমুল কুরআন মাদ্ররাসা ও এতিমখানার ছাত্র। হানযালার কাছ থেকে ফরহাদ ৫০ টাকা ধার নিয়েছিল। ৩০ টাকা ফেরত দিলেও বাকি ২০ টাকার জন্য তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়। সেই ক্ষোভ থেকেই হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়।”

পুলিশের ভাষ্যমতে, আসরের নামাজের পর ফরহাদ হানযালাকে বলে, “চলো, বাড়ি থেকে টাকা দিয়ে দিচ্ছি।” এরপর তারা মাদরাসার পেছনের ধানক্ষেত হয়ে পাশের বাগানে যায়। সেখানে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ফরহাদ ক্ষিপ্ত হয়ে হানযালার গলা চেপে ধরে হত্যা করে।

হত্যার পর সে মাদরাসায় ফিরে এসে মাগরিবের নামাজ পড়ে, ক্লাস করে এবং স্বাভাবিক আচরণ করে। পরদিন ভোরে বাড়ি গিয়ে একটি বস্তা ও ইট নিয়ে আসে। হানযালার মরদেহ বস্তায় ভরে পাইজামার ফিতা দিয়ে মুখ বেঁধে ডোবায় ফেলে দেয়। এরপর গোসল করে মাদরাসায় ফিরে যায় এবং পরে পালিয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন: ফার্মগেটে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ

চান্দড়া তা’লিমুল কুরআন মাদ্রাসা ও এতিমখানার মোহতামিম মাওলানা আমিনুল্লাহ বলেন, “দুজনই আমাদের মাদ্রাসার ছাত্র। এত অল্প বয়সে এমন ভয়ংকর ঘটনা ঘটবে, তা কল্পনাও করিনি। পুরো মাদ্রাসায় এখন শোকের ছায়া।”

নিহত হানযালা আলফাডাঙ্গা সদর ইউনিয়নের শুকুরহাটা গ্রামের সায়েম উদ্দিন বিশ্বাসের একমাত্র ছেলে। তিন মেয়ের পর একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন তিনি।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাবা সায়েম বিশ্বাস বলেন, “আমার মাসুম বাচ্চাটা কী দোষ করল, যে ওকে এমন নৃশংসভাবে হত্যা করল! আমার একটাই ছেলে ছিল। আমি খুনির ফাঁসি চাই।”

এ ঘটনায় এলাকায় গভীর শোক ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নিষ্পাপ শিশু হানযালার মুখ মনে পড়লেই চোখ ভিজে যাচ্ছে স্বজন ও প্রতিবেশীদের।

নিউজবাংলাদেশ.কম/এনডি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়