সাগর-রুনি মামলায় ‘শেষবারের মতো’ সময় হাইকোর্টের

ফাইল ছবি
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত শেষ করতে উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্সকে আরও ছয় মাস সময় দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে আদালত জানিয়েছেন, এটি হবে ‘শেষবারের মতো’ সময় বৃদ্ধি।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) রাষ্ট্রপক্ষের সময় বৃদ্ধির আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি ফাতেমা আনোয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ, তার সঙ্গে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মুশফিকুর রহিম। অন্যদিকে রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ ও অ্যাডভোকেট শিশির মনির।
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ জানান, তদন্ত অনেক দূর এগিয়েছে, কিন্তু এখনো কিছু ব্যক্তিকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এজন্য সময় প্রয়োজন। শুনানি শেষে আদালত ছয় মাস সময় বৃদ্ধি করে বলেন, এই সময়ই হবে শেষবারের মতো, এর মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতেই হবে।
এর আগে গত ২২ এপ্রিল এই মামলার তদন্তে ছয় মাস সময় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এরও আগে গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর আদালত র্যাবকে তদন্ত থেকে সরিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ দেন। পরদিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চার সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করে, যার আহ্বায়ক করা হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান ও পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শককে। কমিটির বাকি সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন পুলিশ সদর দপ্তর, সিআইডি ও র্যাব থেকে অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (অ্যাডিশনাল ডিআইজি) পদমর্যাদার একজন করে প্রতিনিধি।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনাকে হাজিরের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি নির্মমভাবে খুন হন। পরদিন (১২ ফেব্রুয়ারি) রুনির ভাই নওশের আলম রোমান বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। প্রথমে মামলাটি তদন্ত করে থানা পুলিশ, পরে দায়িত্ব পায় ডিবি। একই বছরের এপ্রিল মাসে হাইকোর্টের নির্দেশে মামলাটি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব) হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু ১৩ বছরেও র্যাব কোনো চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি।
মামলার আসামি আটজন—রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মাসুম মিন্টু, কামরুল ইসলাম ওরফে অরুন, আবু সাঈদ, পলাশ রুদ্র পাল, এনায়েত আহমেদ এবং তাদের বন্ধু তানভীর রহমান খান। এর মধ্যে তানভীর রহমান ও পলাশ রুদ্র পাল জামিনে রয়েছেন, বাকিরা কারাগারে। দীর্ঘ ১৩ বছরে মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পিছিয়েছে ১২১ বার। সর্বশেষ ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেছে আগামী ৩০ নভেম্বর।
২০১২ সালে সাংবাদিক দম্পতির হত্যাকাণ্ডের পর মানবাধিকার সংগঠন ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ’ (এইচআরপিবি) জনস্বার্থে রিট দায়ের করে। সে সময় আদালত রুল জারি করে জানতে চান কেন হত্যাকারীদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে না।
রিটের পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, আমরা চাই মামলার তদন্ত সঠিকভাবে শেষ হোক এবং আসামিদের বিচারের মুখোমুখি করা হোক। কিন্তু এত বছরেও তদন্তের কোনো চূড়ান্ত অগ্রগতি হয়নি।
হত্যাকাণ্ডের পর থেকে সাংবাদিক সমাজ ও সাধারণ মানুষ ধারাবাহিকভাবে এই মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির দাবি জানিয়ে আসছে। তবে এক দশকেরও বেশি সময় পার হলেও এখনো কোনো প্রতিবেদন বা অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল হয়নি। সর্বশেষ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, টাস্কফোর্সের হাতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে এখন রয়েছে আরও ছয় মাস সময়, যা আদালতের ভাষায়—“শেষবারের মতো।”
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি