News Bangladesh

স্টাফ রিপোর্টার || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৭:২৯, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

টাইফয়েড টিকা সম্পূর্ণ নিরাপদ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত

টাইফয়েড টিকা সম্পূর্ণ নিরাপদ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত

ছবি: সংগৃহীত

টাইফয়েড টিকা সম্পূর্ণ নিরাপদ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত এবং সৌদি আরব হালাল সেন্টার কর্তৃক হালাল হিসেবে প্রত্যয়িত বলে একটি সভা থেকে জানানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ইপিআই, ইউনিসেফ বাংলাদেশ এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের যৌথ আয়োজনে টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচির সাফল্য এবং শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত সভায় এ কথা বলা হয়।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী) অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান। তিনি বলেন, বিশ্ব বিখ্যাত সাইন্টিস্টদের দ্বারা স্বীকৃত এবং সমস্ত বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় এ টিকাটি মান নির্ধারিত ও কার্যকারিতায় পরীক্ষিত। ইতোমধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে টিকাটি ব্যবহৃত হয়েছে, যা নিরাপদ ও কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের উচিত প্রতিটি শিশুকে টাইফয়েড টিকা দেওয়া।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর, ইউনিসেফ বাংলাদেশের ডেপুটি রিপ্রেজেন্টেটিভ দীপিকা শর্মা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টিম লিড (আইভিডি) ডা. সুধির যশি প্রমুখ।

সভায় টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচির অগ্রগতি এবং শক্তিশালীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ উপস্থাপন করেন ইপিআই অ্যান্ড সারভিলেন্স উপ পরিচালক ডা. মোহাম্মদ শাহরিয়ার সাজ্জাদ।

সভায় বিষয়ভিত্তিক প্রেজেন্টেশন তুলে ধরেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও গ্যাভি সিএসও স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ার ডা. নিজাম উদ্দিন আহমেদ এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশের হেলথ ম্যানেজার ডা. রিয়াদ মাহমুদ। সভা সঞ্চালনা ও স্বাগত বক্তব্য দেন ইউনিসেফ বাংলাদেশ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন পরিচালিত প্রকল্পের পলিসি অ্যাডভাইজার অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম।

সভা থেকে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার টিকাদান কর্মসূচিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণে টিকাদান কার্যক্রমের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। বর্তমান সরকার সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ‘টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন-২০২৫’ এর আওতায় নয় মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী সব শিশুকে টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিভি) প্রদান করছে।

ডেঙ্গুতে মৃত্যু ২, নতুন আক্রান্ত ৭৬২

এ ক্যাম্পেইনের আওতায় মাদ্রাসা, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত সব ছাত্র-ছাত্রী (প্লে/নার্সারি, কিন্ডারগার্টেন থেকে ৯ম শ্রেণি/সমমান শ্রেণি পর্যন্ত) এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে থাকা কমিউনিটির নয় মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সীসহ প্রায় চার কোটি ৯০ লাখ শিশুকে এক ডোজ টিসিভি (টিসিভি) টিকা দেওয়ার লক্ষ্য মাত্রা ঠিক করা হয়। তবে, ডিএইচআইএস২ মাইক্রোপ্ল্যান অনুযায়ী লক্ষ্যমাত্রা ৪৩,৭৯৬,৪৫৩ হয়েছে। গত ১২ অক্টোবর ২০২৫ থেকে এ টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে যা ১৩ নভেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত চলমান থাকবে। অদ্যাবধি ১ কোটি ৫০ লাখ ৫৪ হাজার ৬৫ জন শিশুকে এ টিকা প্রদান করা হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ৯০ লাখ মানুষ টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয় এবং তাদের মধ্যে এক লাখ ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে। গ্লোবাল বারডেন অব ডিজিজ ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী, ওই বছর বাংলাদেশে টাইফয়েড জ্বরে চার লাখ ৭৮ হাজার জন আক্রান্ত হয়েছিল এবং আট হাজার মৃত্যু ঘটেছিল। এদের মধ্যে ৬৮ শতাংশই ছিল শিশু। বাংলাদেশে নয় মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুরাই টাইফয়েড জ্বরে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।

সমীক্ষা অনুযায়ী ২০২১ সালে বাংলাদেশে আট হাজার মানুষ টাইফয়েড জ্বরে মৃত্যুবরণ করেছে, তার মধ্যে প্রায় ছয় হাজার জন ১৫ বছরের কম বয়সী শিশু। দূষিত পানি ও অস্বাস্থ্যকর খাবারের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া, এ রোগের কারণ Salmonella Typhi ব্যাকটেরিয়া। অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসা বিলম্ব বা ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণুর কারণে রোগটি জটিল হয়ে পড়ে। অথচ একটি মাত্র টিকা একজন মানুষকে দীর্ঘমেয়াদে এ বিপজ্জনক রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে।

সাম্প্রতিক সময়ে এ টিকা নিয়ে কিছু কিছু স্থানে বিভ্রান্তি দেখা যাচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন টিকা নিলে শিশু অসুস্থ হয়ে পড়বে, জ্বর হবে বা অন্য কোনো জটিলতা দেখা দেবে। আবার কেউ কেউ জানতে চাইছেন, এ টিকা কতটা নিরাপদ, কারা নিতে পারবে, এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী, আগে নেওয়া টিকার সঙ্গে কোনো সংঘাত আছে কি না, কিংবা এটি কি কোভিড বা অন্য টিকার সঙ্গে একসাথে নেওয়া যায় কি না।

বিশেষজ্ঞদের মতে এসব শঙ্কা বা প্রশ্নের কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। টাইফয়েড টিকা সম্পূর্ণ নিরাপদ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত এবং সৌদি আরব হালাল সেন্টার কর্তৃক হালাল হিসেবে প্রত্যয়িত হয়েছে। এটি শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং টাইফয়েড জ্বরের গুরুতর জটিলতা থেকে সুরক্ষা দেয়, এটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি এবং টাইফয়েডের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। বাংলাদেশ ৭ম দেশ হিসেবে (লাইবেরিয়া, মালাউই, নেপাল, পাকিস্তান, সামোয়া এবং জিম্বাবুয়ে) টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে। বাংলাদেশের সব সরকারি টিকাদান কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক, স্কুলভিত্তিক টিকাদান ক্যাম্প এবং শহর ও গ্রামীণ এলাকার নির্ধারিত অস্থায়ী টিকা বুথে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীরা এ টিকা প্রদান করছেন। প্রতিটি টিকাদান স্থানে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ও টিকা সংরক্ষণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। টাইফয়েড টিকা শুধু একটি ইনজেকশন নয়, এটি একটি সুরক্ষা, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিরাপদ রাখার অঙ্গীকার। তাই আমাদের যার যার অবস্থান থেকে এ ক্যাম্পেইন সফল করতে এগিয়ে আসতে হবে, সচেতনতা ও সঠিক তথ্য প্রচার করার মাধ্যমে আমাদের সন্তানদের সুরক্ষিত রাখতে হবে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/এনডি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়