জুলাই জাতীয় সনদ–২০২৫: প্রধানমন্ত্রী পদে সর্বোচ্চ সীমা ১০ বছর

ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সূচনা হলো এক নতুন অধ্যায়।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকেল ৪টা ৩৭ মিনিটে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাক্ষরিত হয়েছে বহুল আলোচিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ–২০২৫’। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ মোট ২৫টি রাজনৈতিক দল এই ঐতিহাসিক দলিলে স্বাক্ষর করে।
সনদে উল্লেখ করা হয়েছে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশে একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী পদে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। এজন্য সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদসমূহে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনার প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করা হবে বলেও সনদে উল্লেখ রয়েছে।
এ সিদ্ধান্তের পক্ষে রাজনৈতিক ঐকমত্য আরও বিস্তৃত হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, বিএনপি, জামায়াতসহ ৩৩টি রাজনৈতিক দল প্রধানমন্ত্রী পদে মেয়াদসীমা ১০ বছরে নির্ধারণের প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়েছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা এবং গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিরাও। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শুরু হয়, যা ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন হিসেবেও বিবেচিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘জুলাই সনদ দিয়ে বর্বরতা থেকে সভ্যতার পথে বাংলাদেশ’
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্বাক্ষর শেষে বলেন, এই সনদ জনগণের ত্যাগের ফসল। এটি কেবল রাজনৈতিক চুক্তি নয়, বরং নতুন প্রজন্মের জন্য একটি গণতান্ত্রিক অঙ্গীকার।
সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সুশাসন, জবাবদিহিতা, এবং নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার দিকেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
তবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এই ঐতিহাসিক ‘জুলাই জাতীয় সনদ–২০২৫’-এ স্বাক্ষর থেকে বিরত থাকে।
দলটি জানিয়েছে, তারা সনদের কিছু ধারা নিয়ে “অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আরও আলোচনা প্রয়োজন” মনে করে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই সনদ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সাংবিধানিক সংস্কারের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে। এটি শুধু সরকারব্যবস্থার কাঠামো নয়, নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও ক্ষমতার ভারসাম্যের প্রতিশ্রুতিও বহন করছে।
‘জুলাই জাতীয় সনদ–২০২৫’ স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন এক ঐকমত্যের সূচনা হলো। গণঅভ্যুত্থানের চেতনায় রচিত এই সনদকে অনেকেই দেশের “নতুন সামাজিক চুক্তি” হিসেবে দেখছেন, যা ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের পথে এক বড় পদক্ষেপ।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি