‘বের হওয়ার পথে তালা, বিষাক্ত ধোঁয়ায় প্রাণ গেল শ্রমিকদের’
ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকার শিয়ালবাড়িতে একটি পোশাক কারখানা ও ‘কসমিক ফার্মা’ নামের কেমিক্যাল গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ১৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
নিহতরা সবাই গার্মেন্টস শ্রমিক। তাদের মরদেহ এতটাই পুড়ে গেছে যে শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, মরদেহ শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭টায় এবং পরে রাতে ঘটনাস্থলের পাশে পৃথক দুটি সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইন্টেইন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক জানান, সার্চ অপারেশন শেষে গার্মেন্টসের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা থেকে ১৬টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, তাদের চেহারাগুলো বোঝা যাচ্ছে না। মরদেহগুলো এতটাই বিকৃত যে ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া শনাক্ত করা সম্ভব নয়।
তিনি আরও জানান, এই গার্মেন্টসটির ছাদটি টিনসেড ও চাঁটাই দিয়ে তৈরি এবং তা বন্ধ ছিল। ছাদের ওপরে গ্রিলের দরজায় দুটি তালা মারা ছিল, যা এখনও তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। ফলে কেউ ওপরে উঠতে পারেনি। নিচে নামারও সুযোগ ছিল না। ধোঁয়ার কারণে তারা আটকে পড়েন এবং বিষাক্ত গ্যাসে অজ্ঞান হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
ঘটনাস্থলে ছয় থেকে সাত ধরনের কেমিক্যাল ছিল বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন: মিরপুরে অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৬
তিনি বলেন, এই কেমিক্যালের বিস্ফোরণে সাদা ধোঁয়া ও টক্সিক গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং শ্রমিকরা বের হতে না পারায় হতাহতের ঘটনা ঘটে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট কাজ করছে। গার্মেন্টস অংশের আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও কেমিক্যাল গোডাউনের আগুন এখনও পুরোপুরি নেভেনি। সেখানে এখনও শিখা ও ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আধুনিক প্রযুক্তি ‘লুপ ৬০’ ড্রোন ও গ্রাউন্ড মনিটর ব্যবহার করা হচ্ছে। ব্যবহৃত উপকরণের মধ্যে রয়েছে পাউডার, পানি, এনজাইম ও হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড।
এ ঘটনায় একজন স্বেচ্ছাসেবক আহত হয়েছেন। তবে ফায়ার সার্ভিসের কোনো সদস্য আহত হননি। আগুনে দগ্ধ তিনজনকে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।
তাদের মধ্যে দুইজনের পরিচয় পাওয়া গেছে— মো. সুরুজ (৩০) ও মো. মামুন (৩৫)।
ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। আগুন নিয়ন্ত্রণ ও উদ্ধার কার্যক্রমে বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরাও অংশ নিয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম আরও জানান, এই গার্মেন্টস বা কেমিক্যাল গোডাউনের কোনো ফায়ার সেফটি প্ল্যান, বৈধ লাইসেন্স বা অনুমোদন ছিল না। আশেপাশের শ্রমিকদের জিজ্ঞাসা করেও গার্মেন্টসটির নাম জানা যায়নি। গার্মেন্টসের মালিককে এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
উদ্ধার করা মরদেহগুলো অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। মরদেহ উদ্ধারের কাজ এখনও চলমান রয়েছে।
নিউজবাংলাদেশের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রতি গভীর শোক ও আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করা হচ্ছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








