মিরপুরে অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৬
ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরের শিয়ালবাড়ি এলাকায় একটি পোশাক কারখানা ও কসমিক ফার্মা নামে একটি কেমিক্যাল গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিহতদের অধিকাংশই বিষাক্ত গ্যাসে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। এখনও পর্যন্ত নিহতদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। মরদেহগুলো শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষার প্রয়োজন হবে বলে জানানো হয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে। ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ১১টা ৫৬ মিনিটে। পরে একে একে ১২টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে।
বিকেলে ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম জানান, প্রাথমিকভাবে ৯টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সন্ধ্যায় ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৬ জনে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, মরদেহগুলো গার্মেন্টসের অংশে পাওয়া গেছে। টিনশেড ছাদ বন্ধ থাকায় কর্মীরা বের হতে পারেনি। মরদেহগুলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হচ্ছে। ডিএনএ টেস্ট ছাড়া শনাক্ত সম্ভব নয়।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, পোশাক কারখানাটি সাততলা বিশিষ্ট এবং আগুন লাগে এর চতুর্থ তলায়। পাশেই ছিল কসমিক ফার্মা নামের একটি কেমিক্যাল গোডাউন, যেখানে ব্লিচিং পাউডার, প্লাস্টিক ও হাইড্রোজেন পার অক্সাইডসহ ছয় থেকে সাত ধরনের দাহ্য রাসায়নিক মজুত ছিল। আগুন গার্মেন্টস থেকে ছড়িয়ে পড়ে কেমিক্যাল গোডাউনে। এখনও গোডাউনের ভেতরে আগুন জ্বলছে এবং তা বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করছে।
ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা দুই ও তিন তলা থেকে মরদেহ উদ্ধার করেছি। ধারণা করছি, তারা বিষাক্ত গ্যাস ইনহেল করেই মারা গেছেন। গ্যাসটি এতটাই টক্সিক ছিল যে তাৎক্ষণিক মৃত্যু ঘটাতে পারে। অনেকে বের হয়ে যেতে পারলেও মৃতরা সম্ভবত গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে আর সরতে পারেননি।
আরও পড়ুন: মিরপুরে গার্মেন্টস ও কেমিক্যাল গোডাউনে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ৯
অপারেশন ডিরেক্টর লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমরা যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছাই, তখন দুটি স্থানে আগুন দেখতে পাই—একটি গার্মেন্টসে, অন্যটি কেমিক্যাল গোডাউনে। আগুনের মূল উৎস এখনও নিশ্চিত নয়।
তিনি আরও বলেন, গোডাউনের ভেতরে এখনও আগুন জ্বলছে। আমরা কাউকেই ভিতরে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছি না, এমনকি ফায়ার ফাইটারদেরও না। হিউম্যানলেস টেকনোলজি, ড্রোন এবং লুপ-৬০ গ্রাউন্ড মনিটরের মতো উন্নত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে আগুন নিয়ন্ত্রণ ও সার্চিং কার্যক্রম চলছে।
স্থানীয়রা জানান, কারখানাটি ‘আলম কেমিক্যাল ফ্যাক্টরি’ নামেই পরিচিত। তবে এখন পর্যন্ত মালিক, ম্যানেজার বা কর্মচারীদের কাউকেই খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের ধারণা, কেমিক্যালটির অনুমোদন ছিল না। বিষয়টি তদন্তাধীন।
অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ তিনজনকে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুইজনের পরিচয় পাওয়া গেছে—মো. সুরুজ (৩০) ও মো. মামুন (৩৫)। আবাসিক চিকিৎসক ডা. শাওন বিন রহমান জানান, সুরুজের দুই শতাংশ দেহ দগ্ধ হয়েছে এবং মামুন ইনহালেশন ইনজুরিতে আক্রান্ত। দু’জনকেই অবজারভেশনে রাখা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা সাড়ে ১১টার পর হঠাৎ বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে কেমিক্যাল গোডাউনে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করে। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেন আশপাশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, স্বেচ্ছাসেবক, পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্যরা। উৎসুক জনতার ভিড় সামলাতে সেনাবাহিনীও মোতায়েন করা হয়।
ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুম কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম বলেন, এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ১৬ জনে দাঁড়িয়েছে। কেমিক্যাল গোডাউনের ভেতরে এখনও তল্লাশি চালানো সম্ভব হয়নি। সেখানে আরও মরদেহ থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছি।
এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠনের প্রস্তুতি চলছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। আগুনের উৎস, কেমিক্যালের অনুমোদন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুরো ঘটনার তদন্ত শেষে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








