দুদকের দৃষ্টিতে অভিযুক্ত টিউলিপ

ফাইল ছবি
ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি ও যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন।
সোমবার (১৬ জুন) সকালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দুদক চেয়ারম্যান ড. মো. আবদুল মোমেন এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ফ্ল্যাট জালিয়াতিসহ মোট তিনটি দুর্নীতির অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে রয়েছে ঢাকার অভিজাত এলাকায় ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের কাছ থেকে ‘ঘুষ’ হিসেবে একটি ফ্ল্যাট গ্রহণ করার অভিযোগ, মৎস্য খামার সংক্রান্ত অনিয়ম, আয়কর নথিতে হঠাৎ ১০ থেকে ৩০ ভরি সোনার প্রবৃদ্ধিসহ নানা আর্থিক অসঙ্গতি।
চেয়ারম্যান মোমেন আরও বলেন, তিনি (টিউলিপ) যতই বলুন তিনি ব্রিটিশ নাগরিক, আমাদের নথিপত্র অনুযায়ী তিনি বাংলাদেশের নাগরিক। বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে আমরা তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য। যদি তিনি নির্দোষ হন, তাহলে প্রশ্ন উঠেছে—তার মন্ত্রিত্ব কেন গেলো? তিনি নিজেই কেন পদত্যাগ করলেন? এবং কেন তার আইনজীবী আমাদের কাছে চিঠি পাঠালেন?
টিউলিপ সিদ্দিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রথমবার তলব করা হয় ১৪ মে ২০২৫। ওই দিন দুদকের উপসহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন একটি চিঠির মাধ্যমে তাকে হাজির হতে অনুরোধ জানান। একই মামলার অন্যান্য অভিযুক্ত রাজউকের সাবেক সহকারী আইন উপদেষ্টা শাহ খসরুজ্জামান ও সর্দার মোশাররফ হোসেনকেও পৃথক চিঠিতে তলব করা হয়। তবে কেউই দুদকের ডাকে সাড়া দেননি।
পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে ১৫ জুন ২০২৫ তারিখে দ্বিতীয় দফা তলবি নোটিশ পাঠানো হয় টিউলিপের পাঁচটি সম্ভাব্য ঠিকানায়।
আরও পড়ুন: সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোতাহারের কোটি টাকার গাড়িসহ ২ জন আটক
এগুলো হলো মোহাম্মদপুর জনতা হাউজিং সোসাইটি, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, গুলশান-১, গুলশান-২ এবং সংশ্লিষ্ট গুলশান ও ধানমন্ডি থানার মাধ্যমে এই নোটিশগুলো পাঠানো হয়।
তাকে আগামী ২২ জুন ২০২৫, সকাল ১০টায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে অনুরোধ করা হয়েছে।
দুদক চেয়ারম্যান এদিন আরও বলেন, টিউলিপ সিদ্দিক ছাড়াও যুক্তরাজ্যে বসবাসরত একাধিক বাংলাদেশি প্রভাবশালী ব্যক্তি ও পরিবারের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার ও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান চলছে।
এদের মধ্যে রয়েছেন:
১. সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান জাবেদ: যুক্তরাজ্যে তার নামে থাকা ১ হাজার ২৫ কোটি টাকার সম্পদ ইতোমধ্যেই জব্দ করা হয়েছে এবং তা দেশে ফেরত আনার চেষ্টা চলছে।
২. সাবেক হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম ও তার স্বামী: তাদের বিরুদ্ধে ২ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।
৩. বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের দুই পুত্র, সাফিয়াত ও সাদাত: যুক্তরাজ্যে তাদের নামে থাকা সম্পদ জব্দের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থায় চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে।
টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত একটি আন্তর্জাতিক মাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠছে, কারণ তিনি শুধু বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য নন, একইসঙ্গে তিনি যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির নির্বাচিত সংসদ সদস্যও। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো শুধু বাংলাদেশের আইনি প্রক্রিয়াই নয়, যুক্তরাজ্যকেও প্রভাবিত করতে পারে। দুদকের পরবর্তী পদক্ষেপ এবং ব্রিটিশ প্রশাসনের অবস্থান এখন আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের নজরে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি