News Bangladesh

আসাদুল হক খোকন, নিউজ এডিটর || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২০:১১, ৭ এপ্রিল ২০২৫
আপডেট: ১৪:৪৯, ৮ এপ্রিল ২০২৫

বাংলাদেশে কি আদৌ কোনো ইসরায়েলি পণ্য আছে!

বাংলাদেশে কি আদৌ কোনো ইসরায়েলি পণ্য আছে!

ছবি: নিউজবাংলাদেশ

গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যার প্রতিবাদ এবং ফিলিস্তিনের মানুষের প্রতি সংহতি জানিয়ে বাংলাদেশে ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের আহ্বান জানানো হয়েছে। এর প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমেও। সেখানে নেটিজেনদের একটি বড় অংশ ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের পক্ষে সরব অবস্থান নিয়ে নানা পোস্ট শেয়ার করছেন।

বাংলাদেশ সরকারও অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর অব্যাহত গণহত্যা এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলমান ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল করেছে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের এসব কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে একাত্মতা জানিয়েছে নানান শ্রেণিপেশার মানুষ।

তারা যে সব পণ্য ইসরায়েলি বলে বর্জন করতে বলছেন, সেগুলো হলো- কোকাকোলা, পেপসি, সেভেন আপ, স্প্রাইট, ফান্টা, মেরিন্ড, অকুয়াফিনা, কিনলে, বাটা, ক্লিয়ার, ডাভ, সার্ফ এক্সেল, রিন, হুইল, ভেসলিন, পন্ডস, গ্লো এন্ড লাভলি, জনসন,মেগি, তাজা, লাক্স, লাইফবয়, এক্স, ট্যাং, বিকুল প্রভৃতি।

এর আগে ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে সারাদেশে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে ‘নো ওয়ার্ক নো ক্লাস’ কর্মসূচি পালন করছে এসব শিক্ষার্থী। 

পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পালনের লক্ষ্যে সোমবার (৭ এপ্রিল) সকাল থেকেই রাজধানীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সামনে জড়ো হন তারা।

এরই ধারাবাহিকতায় বের হওয়া বিক্ষোভ মিছিল থেকে কোমল পানীয় কোকাকোলা বিক্রির অভিযোগ এনে সিলেটে কেএফসিতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। পাশাপাশি থাকা আন্তর্জাতিক জুতার ব্র্যান্ড বাটাতেও হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো- কোকাকোলা বা বাটা কি আদৌ ইসরায়েলি পণ্য? এছাড়া অন্য আরো যেসব পণ্য ইসরায়েলি বলে বর্জন করার আহ্বান জানানো হয়েছে সেগুলোও কি আদৌ ইসরায়েলি পণ্য?

এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে জেনে নেওয়া যাক ইসরায়েলের সঙ্গে বাংলাদেশের আদৌ কোনো বাণিজ্যিক সম্পর্ক আছে কিনা? মোটা দাগে এর উত্তর হলো- ফিলিস্তিনি ভূমিতে সামরিক দখলদারিত্বের কারণে ইসরায়েলের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য (প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ) সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং ইসরায়েলের সাথে কোন কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই।

এমনকি ঢাকা বা বাংলাদেশের অন্য কোনও অঞ্চলে ইসরায়েলি পণ্যের জন্য কোনও সরকারি দোকান বা বিতরণ চ্যানেল রয়েছে এমন কোনও ইঙ্গিতও নেই।

পরোক্ষ বাণিজ্য

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও, কিছু ইসরায়েলি পণ্য তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে, যেমন অন্যান্য দেশের মাধ্যমে অথবা অনানুষ্ঠানিক আমদানির মাধ্যমে কিছু পণ্য দেশে প্রবেশ করে।

ইসরায়েলি পণ্য

বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্য বা সম্ভাব্য বাণিজ্যের প্রেক্ষাপটে উল্লেখ করা কিছু ইসরায়েলি পণ্যের মধ্যে রয়েছে- প্লাস্টিক পণ্য, বাণিজ্যিক শিল্পকারখানায় বিশেষ করে গার্মেন্ট কারাখানায় রংয়ের ফিনিশিং এজেন্ট, থেরাপিউটিক যন্ত্রপাতি, বস্ত্র, পাদুকা এবং মাথার পোশাক (ক্যাপ জাতীয়), প্রাণীর চামড়া ও নজরদারি সরঞ্জাম বা  (Surveillance equipment).

কিন্তু যেসব পণ্য ইসরায়েলি আখ্যা দিয়ে বয়কট এবং আজ যে কেএফসি, বাটা, কোক-ফান্টা ভাঙ্গচুর করা হলো- বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্য বা সম্ভাব্য বাণিজ্যের তালিকায় তাদের অস্তিত্ব নেই।

পরোক্ষ বাণিজ্যের উদাহরণ

এ বিষয়ে ২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ সালে প্রকাশিত কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরার এক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, বাংলাদেশ ইসরায়েলি তৈরি নজরদারি সরঞ্জাম কিনেছে যা একই সাথে শত শত মানুষের মোবাইল ফোন পর্যবেক্ষণ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।

আল জাজিরার তদন্তকারী ইউনিটের প্রাপ্ত নথি এবং বিবৃতিতে দেখা গেছে যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ২০১৮ সালে ব্যাংকক-ভিত্তিক একজন মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে ইসরায়েলি সরঞ্জাম কিনেছিল এবং বাংলাদেশি সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ইসরায়েলি গোয়েন্দা বিশেষজ্ঞদের দ্বারা হাঙ্গেরিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল।

অধিগ্রহণ করা চুক্তিতে শর্ত রয়েছে যে বিক্রয়ের উভয় পক্ষকে একটি অ-প্রকাশিত চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে হবে। এতে সরঞ্জামের উৎপত্তিস্থল হাঙ্গেরি হিসাবেও তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, যদিও আল জাজিরার গোপন রেকর্ডিংয়ে দেখা গেছে যে মধ্যস্থতাকারী স্পষ্টভাবে বলছেন যে সরঞ্জামগুলি ইসরায়েল থেকে এসেছে।

এতে বলা হয়, “ঠিকাদার কোনওভাবেই বলেনি যে, বাংলাদেশের মানুষ যেন জানতে না পারে যে এই পণ্যটি ইসরায়েল থেকে এসেছে।’’

বাংলাদেশের ইসরায়েলের সাথে কোন কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই এবং এর সাথে বাণিজ্য নিষিদ্ধ। বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যার দেশ হিসেবে এখানে ফিলিস্তিনি ভূমিতে সামরিক দখলদারিত্বের কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশের নাগরিকদের সেখানে ভ্রমণের অনুমতি নেই। 

সুতরাং বাংলাদেশে ইসরায়েলের ব্যবসার কোনো সুযোগ নেই। এবং যে সব পণ্য ইসরায়েলি বলে বয়কটের কথা বলা হচ্ছে সেগুলো যে ইসরায়েলি তার পক্ষে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়