News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৪:২৫, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

সংসদ ভবন এলাকায় বিশৃঙ্খলায় জুলাই যোদ্ধারা জড়িত নন: সালাহউদ্দিন

সংসদ ভবন এলাকায় বিশৃঙ্খলায় জুলাই যোদ্ধারা জড়িত নন: সালাহউদ্দিন

ছবি: সংগৃহীত

জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান ঘিরে সংঘটিত বিশৃঙ্খলাকে কেন্দ্র করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, প্রকৃত জুলাই যোদ্ধারা কোনোভাবেই বিশৃঙ্খলায় জড়িত থাকতে পারেন না। এ ঘটনায় কিছু ‘ছাত্র নামধারী’ উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি এবং আওয়ামী ফ্যাসিস্ট গোষ্ঠী অনুপ্রবেশ করে থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

রবিবার (১৯ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ।

তিনি বলেন, দলগুলোর ধারাবাহিক সংগ্রামের ভিত্তিতেই ছাত্র গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। এটি আমাদের জাতীয় জীবনের শক্তি। এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও সংগঠনকে সম্মানিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কোনোভাবেই তারা যাতে বিতর্কিত না হয় সেই চেষ্টা করেছি। বিএনপিকে অভ্যুত্থানের বিপরীতে দাঁড় করানোর কোনো চেষ্টা সফল হবে না।

তিনি আরও বলেন, দেশে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার মধ্যে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমাদের বক্তব্য খণ্ডিত করে অপব্যাখ্যা না দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি, বলেন বিএনপির এই নেতা।

এর আগের দিন শনিবার সকালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ।

তিনি অভিযোগ করেন, জুলাই যোদ্ধা নামে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট বাহিনী গতকাল সংসদ ভবন এলাকায় বিশৃঙ্খলা করেছে।

একইসঙ্গে তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, এখনো জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করা এনসিপি ও চার বাম দল ভবিষ্যতে স্বাক্ষর করবে।

আরও পড়ুন: সংসদ ভবন এলাকায় বিশৃঙ্খলার দায় আ. লীগের নেতাকর্মীদের: সালাহউদ্দিন

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার জানা মতে, এনসিপি এবং তিন বা চারটি বাম দল স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যেতে পারেনি। আমি বলব না যে স্বাক্ষর করেনি। স্বাক্ষর করার সুযোগ আছে। আশা করি ভবিষ্যতে তারা স্বাক্ষর করবে। তাতে করে আগামী নির্বাচনে বড় কোনো প্রভাব পড়বে না।

সহনশীলতা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, হয়তো তাদের কিছু দাবিদাওয়া আছে, সেটা সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করবে। একপর্যায়ে তারা স্বাক্ষর করবে বলে বিশ্বাস করি। আর গণতন্ত্রে সবাই একমত হবে, এমন তো নয়। ভিন্নমত থাকতেই পারে।

জুলাই সনদ স্বাক্ষরের দিন সংঘর্ষের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জুলাই যোদ্ধা নামের একটি সংগঠন ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে, আমাদের সঙ্গেও কথা বলেছে। কমিশনের সহসভাপতি দাবি অনুযায়ী সংশোধন করেছেন। এরপরও অসন্তোষ থাকার কথা নয়।

তিনি আরও বলেন, যেসব বিশৃঙ্খলতা হয়েছে, আমরা খোঁজ নিয়েছি, এটা তদন্তাধীন আছে। দেখা গেছে, এখানে ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ নামে কিছু ছাত্র নামধারী উচ্ছৃঙ্খল লোক ঢুকেছে। সেটা ফ্যাসিস্ট সরকারের ফ্যাসিস্ট বাহিনী বলে মনে করি। আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা বিভিন্ন ফাঁকফোকরে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। এখানে কোনো সঠিক জুলাই বা অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত কোনো সংগঠন বা ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে না।

গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, গতকাল জুলাই সনদে স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে এর যাত্রা শুরু হয়েছে। এটার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক সমাজ এবং রাষ্ট্র বিনির্মাণ হবে। রাষ্ট্রের সব অঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা হবে, সব মৌলিক অধিকার বাস্তবায়ন এবং ভোগ করা সম্ভব হবে।

রবিবারের সংবাদ সম্মেলনে সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, জুলাই যোদ্ধাদের ফ্যাসিবাদের দোসর বলে আমার যে বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে, সেটি কাটছাঁট করে আংশিকভাবে প্রচার করা হয়েছে। বক্তব্য কাটিং করে প্রচার না করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানাই।

তিনি বলেন, আমার বক্তব্যের মাধ্যমে জুলাই যোদ্ধাদের সম্মানিত করার চেষ্টা করেছি। ঐক্যের মধ্যে কলঙ্কের দাগ লাগুক তা আমরা চাই না। তাই বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে।

তিনি জানান, জামায়াতের আমিরও এই বিষয়ে একই স্ট্যাটাস দিয়েছেন, সেটাকে আমি সমর্থন করি। গতকালের বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। আমার একটি বক্তব্য টেনে সংবাদ সম্মেলন করে একটি রাজনৈতিক দল আমাকে ক্ষমা চাইতে বলেছে। আমি এটাকে স্বাগত জানাই। আমার বক্তব্যকে ঘিরে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করা হয়েছে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, শুক্রবার জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জুলাই যোদ্ধাদের বিশৃঙ্খলা হয়েছে, যেখানে কিছু উশৃঙ্খল ব্যক্তি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। আমি বক্তব্য শেষে বলেছি, জুলাই যোদ্ধারা এসবের সাথে জড়িত ছিল বলে আমি বিশ্বাস করি না। আমি বলেছি, যাতে জুলাই যোদ্ধাদেরকেও ছোট করে কথা বলতে না পারে, যাতে কেউ তাদের সম্মানহানি করতে না পারে।

তিনি আরও যোগ করেন, জুলাই যোদ্ধাদের আমরা সবসময় সম্মান করি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা অংশগ্রহণ করেছেন, তারা আমাদের শক্তি। তারা যাতে কোনোভাবেই সমালোচিত না হন, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

গণভোট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রয়োজনে আবারও আলোচনা হতে পারে। সবকিছু বিবেচনায় সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করবে বলে প্রত্যাশা করি।

এর আগে একই দিন দুপুরে গুলশানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, যারা জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে বলেন, তাদের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার ঘাটতি রয়েছে।

এ মন্তব্যের প্রেক্ষিতে জানা যায়, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম শনিবার সালাহউদ্দিনের বক্তব্যের সমালোচনা করে তাকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে আহ্বান জানান।

সালাহউদ্দিন বলেন, আমার বক্তব্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আমি স্পষ্ট করে বলেছি, প্রকৃত জুলাই যোদ্ধারা কোনো বিশৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না, থাকতে পারেনও না। তাহলে তারা কেন সেই ঘটনার দায় নিজেরা নিচ্ছেন?

তিনি আরও বলেন, অনেকে নিজেদের গণঅভ্যুত্থানের শক্তি হিসেবে পরিচয় দেন, কিন্তু রাজনৈতিক পরিপক্বতার অভাবে এমন মন্তব্য করেন, যা দায়িত্বজ্ঞানহীন। তাদের রাজনৈতিক শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা অর্জনের প্রয়োজন।

বিএনপির এই নেতা অভিযোগ করেন, বর্তমানে অপতত্ত্ব ও অপব্যাখ্যা ছড়ানোর প্রবণতা বেড়ে গেছে। কেউ কেউ তথ্য না জেনেই মন্তব্য করছেন। একদল আমাকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে বলেছে, কিন্তু আমি যে কথা বলেছি, তাতে ক্ষমা চাওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।

তিনি জানান, জুলাই যোদ্ধাদের একটি সংগঠনের প্রতিনিধিরা শনিবার সকালে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামার পঞ্চম দফায় কিছু সংশোধন আনা হয়।

তার ভাষায়, আমার বক্তব্যের উদ্দেশ্য ছিল স্পষ্ট—জুলাই যোদ্ধাদের ভাবমূর্তি রক্ষা করা, কলঙ্কিত করা নয়। প্রকৃত যোদ্ধারা বিশৃঙ্খলা নয়, গণতন্ত্র রক্ষার প্রতীক।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়