News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৯:৩১, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পবিরোধী ‘নো কিংস’ আন্দোলনে লাখো মানুষ রাস্তায়

যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পবিরোধী ‘নো কিংস’ আন্দোলনে লাখো মানুষ রাস্তায়

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্য জুড়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে শনিবার (১৮ অক্টোবর) এক বিশাল গণবিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। ‘নো কিংস’ নামে পরিচিত এই দেশব্যাপী আন্দোলনে লাখো মানুষ অংশগ্রহণ করেন এবং একক বার্তায় জানান—“আমেরিকায় কোনো রাজা চলবে না, দেশকে স্বৈরতন্ত্রের দিকে যেতে দেওয়া হবে না।”

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান জানায়, এই আন্দোলন বড় শহর থেকে শুরু করে ছোট কমিউনিটিতেও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। বিক্ষোভকারীরা পোস্টার, ব্যানার এবং স্লোগানের মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। 

গণমাধ্যমের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ‘নো কিংস’ আন্দোলন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। মাত্র ছয় মাস আগে ডেমোক্র্যাটরা হোয়াইট হাউস ও কংগ্রেসের দুই কক্ষে রিপাবলিকানদের শক্ত অবস্থান মোকাবিলায় বিভ্রান্ত ছিল, কিন্তু বর্তমানে তারা সংগঠিত ও আত্মবিশ্বাসী।

ইনডিভিজিবল সংগঠনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এজরা লেভিন এপি-কে বলেন, ডেমোক্র্যাটরা এখন সাহস দেখাচ্ছে। জনগণ রাজনীতির মাঠে ফিরে এসেছে। একটি কর্তৃত্ববাদী শাসনের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো দেশপ্রেমিক জনগণের শক্তি।

শিকাগো:
শিকাগোর গ্রান্ট পার্কের বাটলার ফিল্ডে অন্তত ১০,০০০ মানুষ সমবেত হন। অনেকেই হাতে পোস্টার নিয়ে ফেডারেল অভিবাসন সংস্থা (আইসিই)-এর বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। পরে শিকাগো ট্রিবিউন জানায়, সেখানে উপস্থিত মানুষের সংখ্যা প্রায় ১ লাখের বেশি।

শিকাগোর মেয়র ব্র্যান্ডন জনসন বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন মনে হয় গৃহযুদ্ধের পুনরাবৃত্তি চায়। কিন্তু আমাদের অবস্থান স্পষ্ট—আমরা মাথা নত করব না, ভয় পাব না, আত্মসমর্পণ করব না। আমাদের শহরে সেনা চাই না।

ক্যালিফোর্নিয়ার থাউজ্যান্ড ওকস থেকে আসা অংশগ্রহণকারী এসচবাখ বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের দমননীতি ও বক্তব্যই আমাকে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন করেছে।

আরও পড়ুন: পুতিন ও জেলেনস্কিকে বলেছি এখন রক্তপাত থামানোর সময়: ট্রাম্প

ওয়াশিংটন ডিসি:
রাষ্ট্রপতি ক্যাপিটল ভবনের সামনে দুই লাখের বেশি মানুষ সমবেত হন। মিছিলটি শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়।

পোর্টল্যান্ড:
প্রধান বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ ছিল এবং স্থানীয় পুলিশ সড়ক ও সেতু বন্ধ করে অংশগ্রহণকারীদের সহায়তা করেছে। তবে শহরের দক্ষিণাংশে আইসিই ভবনের সামনে সংঘটিত আরেকটি বিক্ষোভে ফেডারেল কর্মকর্তারা গ্যাস ক্যানিস্টার নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করেন। 

পোর্টল্যান্ড মারকিউরি-এর প্রতিবেদক সুজেট স্মিথ সামাজিক মাধ্যম ব্লুস্কাই-এ লিখেছেন, বিকেল ৫টার আগে ফেডারেল এজেন্টরা বিক্ষোভকারীদের ওপর গ্যাস ছোড়ে।

নিউ মেক্সিকোর সান্তা ফে:
এখানে বিক্ষোভটি রঙিন উৎসবের রূপ নেয়। অংশগ্রহণকারীরা ইউনিকর্ন, মুরগি ও ব্যাঙের পোশাকে হাজির হন। 

স্থানীয় বাসিন্দা এমি অ্যাডলার বলেন, সবকিছুই হাস্যকর হয়ে উঠেছে। আমরা এই অযৌক্তিকতার বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ করছি।

এই ‘নো কিংস’ আন্দোলন ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফেরার পর অনুষ্ঠিত তৃতীয় বৃহৎ গণসমাবেশ। চলতি সময়ে সরকারি অচলাবস্থার কারণে বহু ফেডারেল কর্মসূচি ও সেবা বন্ধ রয়েছে। বিক্ষোভকারীদের মতে, এটি কেবল প্রশাসনিক অচলাবস্থা নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক ভারসাম্যকে বিপন্ন করে একক ক্ষমতার দিকে অগ্রসর হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

রিপাবলিকান পার্টি আন্দোলনগুলোকে আখ্যা দিয়েছে “হেইট আমেরিকা” বা ‘আমেরিকাবিদ্বেষী’ সমাবেশ হিসেবে। 

অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেকে রাজা বা একনায়ক বলে আখ্যা দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, আমি কোনো রাজা নই।

ডেমোক্র্যাট দলের শীর্ষ নেতা চাক শুমার এবং স্বাধীন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সও এই বিক্ষোভে অংশ নেন। অংশগ্রহণকারীরা দাবি করেছেন, এটি ট্রাম্প প্রশাসনের কর্তৃত্ববাদী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে জনগণের শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া।

যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ইউরোপের বিভিন্ন শহরেও সংহতি বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। মাদ্রিদ, প্যারিস, বার্লিন, লিসবন, রোম ও হেলসিঙ্কি-তে বসবাসরত মার্কিন নাগরিকরা এই বিক্ষোভে অংশ নেন।
মাদ্রিদে Democrats Abroad আয়োজিত বিক্ষোভে শতাধিক মার্কিন নাগরিক ট্রাম্পবিরোধী স্লোগান তোলেন। 

হেলসিঙ্কিতে এক বিক্ষোভকারী বলেন, আমার ইউরোপীয় বন্ধুরা এখন আর যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করতে চান না। তারা নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। ট্রাম্প প্রশাসনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ফ্রান্সের প্যারিসে কয়েক শত মার্কিন নাগরিক ‘নো কিংস’ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানাতে সমবেত হন। 

মার্কিন স্বাধীনতার প্রতীক ‘স্ট্যাচু অফ লিবার্টি’র পোশাক পরা প্রবাসী বেলিন্ডা মুলিনিক্স বলেন, পরিবার থেকে মানুষদের আলাদা করা, শিশুদের শৃঙ্খলিত করা—আইসের এই নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ড আমাকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়