শাহজালাল কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ড, ক্ষয়ক্ষতি যাচাইয়ে ২ কমিটি

ছবি: সংগৃহীত
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও কারণ অনুসন্ধানে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুর সোয়া ২টার দিকে বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের কুরিয়ার গোডাউনে আকস্মিকভাবে আগুন লাগে।
ফায়ার সার্ভিসের সাত ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে, তবে এতে বিপুল পরিমাণ আমদানি-রপ্তানি পণ্য, বিশেষ করে কুরিয়ার ও কনসাইনমেন্ট মালামাল পুড়ে যায় বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, এই অগ্নিকাণ্ডে কয়েকশ’ কোটি টাকার পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) রাতে এক সরকারি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের যুগ্মসচিব মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটওয়ারীকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন উপসচিব পঙ্কজ বড়ুয়া।
কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন ১. মু. রইচ উদ্দিন খান, প্রথম সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), ২. মো. তারেক হাসান, প্রথম সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), ৩. মুহাম্মদ কামরুল হাসান, যুগ্ম কমিশনার, ঢাকা কাস্টম হাউস।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কমিটিকে অগ্নিকাণ্ডের সার্বিক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে দ্রুততম সময়ে সরকারের কাছে বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, অগ্নিকাণ্ডের কারণে বিমানবন্দরের আমদানি–রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিশেষ ব্যবস্থায় ঢাকা কাস্টম হাউসের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার উদ্যোগ নিয়েছে।
অন্যদিকে, একই ঘটনায় তদন্ত ও দায়-দায়িত্ব নিরূপণের জন্য ছয় সদস্যের আরেকটি কমিটি গঠন করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রশাসন ও মানব সম্পদ পরিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও মানবসম্পদ) মো. নওসাদ হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, বিমানের চিফ (ফ্লাইট সেফটি) কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। এছাড়া বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি কমিটির সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত আছেন।
আরও পড়ুন: সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আগুন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে: বেবিচক
কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন মহাব্যবস্থাপক (কর্পোরেট সেফটি অ্যান্ড কোয়ালিটি), চিফ ইঞ্জিনিয়ার (কোয়ালিটি অ্যাস্যুরেন্স), উপ-মহাব্যবস্থাপক (সিকিউরিটি), উপ-মহাব্যবস্থাপক (কার্গো–রপ্তানি), উপ-ব্যবস্থাপক (ইনস্যুরেন্স)।
বিমানের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কমিটি অগ্নিকাণ্ডের কারণ শনাক্ত করা, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ, দায়-দায়িত্ব নিরূপণ এবং ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সুপারিশ তৈরি করবে। কমিটিকে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় শনিবার রাত ৯টার পর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় যে, ফায়ার সার্ভিসের সাত ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ঘটনাস্থলে একাধিক ফায়ার ইউনিট, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও কাস্টম কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে উদ্ধার ও সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, কুরিয়ার গোডাউনের একাংশ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় এবং দ্রুত তা আশপাশের গুদামে ছড়িয়ে পড়ে। তবে আগুন লাগার প্রকৃত কারণ নির্ধারণে বিমানের তদন্ত কমিটি ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের কমিটি যৌথভাবে কাজ করবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
দেশের সবচেয়ে ব্যস্ত এই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ থেকে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ আমদানি-রপ্তানি পণ্য স্থানান্তর হয়। অগ্নিকাণ্ডের ফলে একাধিক আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিসের কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত হয়ে পড়েছে। সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নির্ধারণে কয়েকদিন সময় লাগবে।
দুইটি পৃথক তদন্ত কমিটি আগামী সপ্তাহের মধ্যেই প্রাথমিক প্রতিবেদন দাখিল করবে বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি