‘১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয়, ১৭ কোটি মানুষের খাদ্যের যোগান দিচ্ছি’
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ একটি ছোট ভূখণ্ডের দেশ হলেও আয়তনে প্রায় ইতালির অর্ধেক এবং ১৭ কোটি মানুষের খাদ্যের চাহিদা পূরণ করছে। পাশাপাশি, মিয়ানমারের সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা ১৩ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার কাজও করছে।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় রোমে অনুষ্ঠিত বিশ্ব খাদ্য ফোরামের সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে ভাষণ দেওয়ার সময় এই তথ্যগুলি তুলে ধরেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমরা ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি, যা আমাদের প্রধান খাদ্যশস্য। বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ ধান, শাকসবজি এবং মিঠাপানির মাছ উৎপাদনকারী দেশগুলোর একটি। আমাদের কৃষকেরা ফসল চাষের ঘনত্ব ২১৪ শতাংশে উন্নীত করেছেন। এছাড়াও আমরা ১৩৩টি জলবায়ু-সহনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করেছি।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, আমরা কৃষক মেকানাইজেশনে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি দিয়েছি এবং শক্তিশালী খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছি। শিশুদের খর্বতা কমেছে, খাদ্যতালিকা বৈচিত্র্যময় হয়েছে, এবং মাটি, পানি ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষার মাধ্যমে কৃষি আরও সবুজ হয়েছে।
অধ্যাপক ইউনূস আনন্দের সঙ্গে জানান, ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশন কর্তৃক ২০১৬ সালে গঠিত ‘নোবেল পিস লরিয়েটস অ্যালায়েন্স ফর ফুড সিকিউরিটি অ্যান্ড পিস’-এর একজন সদস্য হিসেবে আমি এটি এখন ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আমি আশা করি এটি আরও নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করবে।
আরও পড়ুন: তরুণ কৃষি উদ্যোক্তাদের জন্য সামাজিক ব্যবসা তহবিল গঠনের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
প্রধান উপদেষ্টা সাম্প্রতিক বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে আমরা জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করবো, যা ন্যায়বিচার ও জনগণের ক্ষমতায়নের প্রতি আমাদের অঙ্গীকারের প্রতিফলন। গত বছর বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে তাদের শক্তি পুনরুদ্ধার করেছে—গণতন্ত্র, শান্তি ও মানবাধিকারের জন্য। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল তরুণ প্রজন্ম, যারা সাহস ও আশায় ভরা। তাদের দাবি ছিল সহজ: ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দাও এবং ন্যায়, অন্তর্ভুক্তি ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে একটি সমাজ গড়ে তোলো। আজ সেই তরুণরাই আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠনের কাজে যুক্ত এবং একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ছে, যেখানে শাসনব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে মানুষ রয়েছে।
এর পাশাপাশি অধ্যাপক ইউনূস ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্ব গড়ার জন্য ছয়টি প্রস্তাব উপস্থাপন করেন:
১. ক্ষুধা ও সংঘাতের চক্র ভাঙতে হবে; যুদ্ধ বন্ধ করে সংলাপ শুরু করতে হবে এবং সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে খাদ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।
২. এসডিজি অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি পূরণ, জলবায়ু কর্মে আন্তরিকতা এবং দুর্বল জনগোষ্ঠীর স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে হবে।
৩. সরবরাহ চেইন স্থিতিশীল ও ধাক্কা মোকাবিলায় সক্ষম করার জন্য আঞ্চলিক খাদ্য ব্যাংক গঠন করতে হবে।
৪. বিশেষ করে তরুণ ও নারী উদ্যোক্তা, কৃষি ও প্রযুক্তি খাতে স্থানীয় উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে উপযুক্ত অর্থায়ন ও অবকাঠামো সহ।
৫. বৈশ্বিক বাণিজ্য যেন খাদ্য নিরাপত্তাকে সমর্থন করে, বাধা না দেয়; এজন্য রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা বন্ধ করতে হবে।
৬. গ্লোবাল সাউথ ও গ্রামীণ তরুণদের জন্য, ছেলে-মেয়ে উভয়ের জন্য প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
এই সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে অধ্যাপক ইউনূসের বক্তব্যে বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি মেকানাইজেশন, জলবায়ু-সহনশীল উদ্ভাবন এবং আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের সাফল্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হয়েছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








