ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্তদের নির্বাচনী ও সরকারি পদে অযোগ্য ঘোষণা

ছবি: সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) কারও বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল হলে তিনি আর সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না এবং ভবিষ্যতেও নির্বাচনে অংশগ্রহণের যোগ্যতা হারাবেন।
একই সঙ্গে তিনি স্থানীয় সরকার বা সরকারি কোনো পদেও নিযুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন না—এমন বিধান যুক্ত করে সরকার সোমবার (৬ অক্টোবর) একটি অধ্যাদেশ জারি করেছে।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (তৃতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ (অধ্যাদেশ নং-৫৩) অনুযায়ী, ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন-এ ‘২০সি’ নামে একটি নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে। এই ধারা অভিযুক্তদের নির্বাচনী ও সরকারি দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে অযোগ্য ঘোষণা করছে।
ধারা ২০সি অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠিত হলে তিনি নিম্নলিখিত চারটি ক্ষেত্রে অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন:
- জাতীয় সংসদ সদস্য: নির্বাচিত হওয়া বা দায়িত্ব পালন করা যাবে না
- স্থানীয় সরকার: চেয়ারম্যান, মেয়র, কমিশনার, প্রশাসকসহ কোনো পদে নির্বাচন বা নিয়োগ অযোগ্য
- সরকারি চাকরি: প্রজাতন্ত্রের অধীনস্থ কোনো চাকরিতে নিয়োগ পাওয়া যাবে না
- অন্যান্য সরকারি পদ: যে কোনো ধরনের সরকারি পদে অধিষ্ঠিত থাকা যাবে না
তবে, যদি অভিযুক্ত ব্যক্তি ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পান বা আদালতে খালাসপ্রাপ্ত হন, তাহলে তার ওপর এই অযোগ্যতা আর কার্যকর থাকবে না—এমনটি উপধারা (২)-এ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগের বিচার কার্যক্রমে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এই সংশোধনের মূল লক্ষ্য হলো, যাতে আন্তর্জাতিক অপরাধে অভিযুক্ত কেউ বিচারাধীন অবস্থায় রাষ্ট্রের কোনো দায়িত্বে থাকতে না পারেন। ভবিষ্যতেও যেন বিতর্কিত ব্যক্তিরা রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হতে না পারেন, সেজন্য এই সংশোধন আনা হয়েছে।
গত ১০ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
এছাড়া জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফসহ আরও কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ দাখিল করা হয়েছে। সংশোধিত অধ্যাদেশ জারির ফলে এখন থেকে এসব ব্যক্তি নির্বাচনে অযোগ্য বিবেচিত হবেন।
এর আগে, গত ৪ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বৈঠক-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট ১৯৭৩-এ নতুন সেকশন যুক্ত করা হয়েছে। সেকশন ৯-এর ১-এর অধীনে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দাখিল হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সংসদ সদস্য, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি বা সরকারি পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার যোগ্যতা হারাবেন।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরকে জেরা করছেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী। গতকালও দিনভর জেরা করা হয়।
মামলায় ২৫ কার্যদিবসে মোট ৫৪ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।
আশুলিয়ায় ৬ জনের মরদেহ পোড়ানোর মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলামসহ ১৬ আসামির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল-২ এ ৮ম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।
এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধ সংক্রান্ত বিচার-প্রক্রিয়ায় আরও কঠোর অবস্থান গ্রহণের ইঙ্গিত দিয়েছে সরকার, যা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি