News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৬:০২, ২৯ আগস্ট ২০২৫

আদালতের রায়ে ক্ষমতাচ্যুত থাই প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন

আদালতের রায়ে ক্ষমতাচ্যুত থাই প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন

ছবি: সংগৃহীত

থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক অঙ্গনে আবারও নাটকীয় মোড় নিল। দীর্ঘদিনের ক্ষমতাকেন্দ্রিক লড়াই, সামরিক বাহিনী ও রাজতন্ত্রের প্রভাবের মধ্যে এবার আদালতের রায়ে ক্ষমতাচ্যুত হলেন প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা। তরুণ এই নেত্রীকে কেন্দ্র করে যে আশার সঞ্চার হয়েছিল, তা হঠাৎ করেই অনিশ্চয়তায় নিমজ্জিত হলো।

শুক্রবার (২৯ আগস্ট) থাইল্যান্ডের সাংবিধানিক আদালত নয় বিচারকের সমন্বয়ে দেওয়া রায়ে ঘোষণা করে যে, পেতংতার্ন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের সময় নৈতিক মান রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। আদালতের ভাষায়, তাঁর কর্মকাণ্ড দেশের মর্যাদা ও সামরিক বাহিনীর ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

এই রায়ের ফলে মাত্র ৩৯ বছর বয়সে তিনি ২০০৮ সালের পর পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী হলেন, যিনি আদালতের রায়ে ক্ষমতাচ্যুত হলেন।

ঘটনার সূচনা হয় জুন মাসে। সে সময় সীমান্ত এলাকায় থাই ও কম্বোডিয়ার সেনাদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন কম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন।

ফোনালাপে তাকে হুন সেনকে ‘চাচা’ সম্বোধন করতে এবং এক জ্যেষ্ঠ থাই সেনা কর্মকর্তাকে ‘প্রতিপক্ষ’ হিসেবে উল্লেখ করতে শোনা যায়। হুন সেনই পরে ফোনালাপটি ফাঁস করেন, যা দেশজুড়ে তীব্র সমালোচনার জন্ম দেয়। আদালত মনে করে, একজন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে এটি নৈতিকতাবর্জিত আচরণ।

আরও পড়ুন: ইসরায়েলি হামলায় নিহত ইয়েমেনের হুথি প্রধানমন্ত্রী আল-রাহাবি

পেতংতার্ন অবশ্য পরে প্রকাশ্যে ক্ষমা চান এবং এটিকে “আলোচনার কৌশল” হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। কিন্তু ক্ষুব্ধ সেনেটররা আদালতে আবেদন করেন, আর তার ফলেই আসে এই রায়।

পেতংতার্ন হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার কন্যা। থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে সিনাওয়াত্রা পরিবার সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং একইসঙ্গে বিতর্কিত নাম। আদালতের এই রায় তাই শুধু একজন ব্যক্তির রাজনৈতিক পতন নয়, বরং গোটা পরিবারটির জন্য বড় ধাক্কা।

থাকসিন নিজেও বর্তমানে একটি দুর্নীতি মামলার রায়ে সাজাপ্রাপ্ত অবস্থায় হাসপাতালের প্রিজন ওয়ার্ডে আছেন। কয়েক দিন আগেই তিনি রাজতন্ত্র অবমাননার মামলায় খালাস পান। মেয়ের ক্ষমতাচ্যুতি তার নিজের রাজনৈতিক অবস্থানকেও প্রভাবিত করতে পারে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।

সমালোচকরা দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছেন যে থাইল্যান্ডের বিচার বিভাগ প্রায়শই রাজতন্ত্র ও সামরিক বাহিনীর স্বার্থ রক্ষা করে। আদালতের রায়ে বারবার প্রধানমন্ত্রী অপসারণের নজির সেই অভিযোগকে আরও জোরালো করেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনা গণতন্ত্র ও আইনের শাসন নিয়ে জনগণের আস্থা আরও নড়বড়ে করে দেবে।

আদালতের রায়ের পর অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সহকারী প্রধানমন্ত্রী ফুমথম উইচাযাচাই। মন্ত্রিসভা আপাতত কার্যনির্বাহী ক্ষমতায় দায়িত্ব পালন করবে।

সংসদে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হবে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন চৈকাসেম নিতমজিরি, অনুতিন চার্নভিরাকুল, পিরাপান সালিরথাভিভাগা, বিরোধীদলীয় নেতা জুরিন লাকসনওইসিট, এমনকি সাবেক সামরিক শাসক প্রায়ূৎ চান-ওচা।

রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে থাই অর্থনীতি নতুন করে চাপে পড়েছে। পেতংতার্ন নির্বাচনী প্রচারণায় যে সব অর্থনৈতিক সংস্কার ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা এখন অনিশ্চয়তায় ঝুলে গেল। ব্যবসায়ী মহল ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা নতুন করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রার অপসারণ থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে আরেকটি মোড় এনে দিল। আদালতের এই সিদ্ধান্ত দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে অস্থির করেছে, একই সঙ্গে শক্তিশালী সিনাওয়াত্রা পরিবারের অবস্থানকেও দুর্বল করেছে।

এখন সবার দৃষ্টি সংসদের দিকে—সেখানেই ঠিক হবে থাইল্যান্ডের পরবর্তী নেতা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ভবিষ্যৎ।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়