News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৯:১২, ৩১ জুলাই ২০২৫

গাজায় একদিনে নিহত ১০৪, মোট প্রাণহানি ছাড়াল ৬০ হাজার

গাজায় একদিনে নিহত ১০৪, মোট প্রাণহানি ছাড়াল ৬০ হাজার

ছবি: সংগৃহীত

জাতিসংঘ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও ইসরায়েল জানায়, হামাসকে সম্পূর্ণ নির্মূল এবং জিম্মিদের মুক্ত না করা পর্যন্ত অভিযান চলবে।

গাজার উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর সর্বশেষ বিমান হামলায় একদিনে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১০৪ জন ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন আরও ৩৯৯ জন। 

বুধবার (৩০ জুলাই) সন্ধ্যায় গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। 

এ নিয়ে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি অভিযানে মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬০,১৩৮ জনে এবং আহতের সংখ্যা ১,৪৬,২০০ জনে।

উল্লেখযোগ্যভাবে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আইডিএফ (ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সেস) গাজায় প্রথম অভিযান শুরু করে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, যেদিন গাজার নিয়ন্ত্রক হামাস সশস্ত্রভাবে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে অতর্কিত আক্রমণ চালায়। সেই হামলায় ১,২০০ ইসরায়েলি নাগরিক নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাসের যোদ্ধারা।

এর জবাবে ইসরায়েল গাজার ওপর সর্বাত্মক আক্রমণ শুরু করে, যা গত ১৫ মাসে নজিরবিহীন মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। যুদ্ধবিরতির দাবি ও আন্তর্জাতিক চাপ বিবেচনায় রেখে ইসরায়েল ২০২৫ সালের ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয়, যা স্থায়ী হয়নি। যুদ্ধবিরতির মাত্র দুই মাস পর ১৮ মার্চ থেকে দ্বিতীয় দফায় ইসরায়েল নতুন করে গাজায় অভিযান শুরু করে।

দ্বিতীয় দফার চার মাসে—১৮ মার্চ থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত—৮,৯৭০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন এবং ৩৪,২২৮ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। 

এ সময় ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করে, তারা হামাসের অবশিষ্ট নেতৃত্বকে টার্গেট করছে এবং জিম্মিদের উদ্ধারের জন্য বিশেষ সামরিক অভিযান চালানো হচ্ছে।

আরও পড়ুন: গাজায় আরও ৮০ ফিলিস্তিনি নিহত, অনাহারে প্রাণ গেল আরও ১৪ জনের

হামাসের হাতে যে ২৫১ জন জিম্মি ধরা পড়েছিলেন, তাদের মধ্যে গোপন গোয়েন্দা তথ্য ও চিহ্নিত ভিডিও ফুটেজ অনুযায়ী কমপক্ষে ৩৫ জন জীবিত আছেন বলে জানিয়েছে আইডিএফ। 

ইসরায়েলি বাহিনী বলছে, উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং প্রয়োজন হলে আরও বিস্তৃত স্থল অভিযান চালানো হবে।

গাজায় এই সহিংসতার প্রতিক্রিয়ায় জাতিসংঘ এবং বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ তুলেছে। ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) ইতোমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা মামলায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার বিচার চলছে। ২০২৫ সালের জুনে দেওয়া অন্তর্বর্তী রায়ে আইসিজে ইসরায়েলকে ‘নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা’র নির্দেশ দিলেও সামরিক অভিযান বন্ধের নির্দিষ্ট আদেশ দেয়নি, যা নিয়ে বিতর্ক চলছে।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক বিবৃতিতে বলেন, গাজায় মানবিক অবস্থা নজিরবিহীন সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে। শিশু, নারী ও সাধারণ মানুষ প্রতিদিন মারা যাচ্ছে। যুদ্ধ নয়, এখন দরকার শান্তি ও সমাধান।

তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জাতির উদ্দেশে সম্প্রতি দেওয়া এক ভাষণে বলেন, হামাসের সামরিক ও রাজনৈতিক কাঠামো পুরোপুরি ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে। আমরা আমাদের নাগরিকদের জন্য নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করবো, এবং আমাদের জিম্মিদের ঘরে ফিরিয়ে আনার আগ পর্যন্ত থামবো না।

নেতানিয়াহু আরও বলেন, যে যাই বলুক, ইসরায়েল আত্মরক্ষার অধিকার থেকে পিছপা হবে না। আন্তর্জাতিক চাপ নয়, জাতীয় নিরাপত্তাই আমাদের একমাত্র বিবেচ্য।

গাজার স্বাস্থ্য ও ত্রাণ সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলমান অভিযানে গাজার ৭০% অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে, হাসপাতাল ও বিদ্যালয়গুলোর বড় অংশ বোমার আঘাতে ভেঙে পড়েছে। খাবার, পানি, বিদ্যুৎ ও চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, বর্তমানে গাজার ২২টির মধ্যে মাত্র ৪টি হাসপাতাল আংশিকভাবে চালু আছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়