News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৯:৩৪, ২০ জুলাই ২০২৫

গাজায় ১১৬ জন নিহত, অনাহারে নবজাতকের মৃত্যু

গাজায় ১১৬ জন নিহত, অনাহারে নবজাতকের মৃত্যু

ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েলি বাহিনীর ধারাবাহিক ও ভয়াবহ হামলায় ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৩৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত একটি বিতর্কিত ত্রাণকেন্দ্রের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে, যারা খাবারের জন্য সেখানে জড়ো হয়েছিলেন। 

একইসঙ্গে, গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালে মাত্র ৩৫ দিন বয়সী এক নবজাতক শিশুর মৃত্যু হয়েছে অপুষ্টিজনিত কারণে—যা বর্তমান দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির একটি মর্মান্তিক প্রতিচ্ছবি।

রবিবার (২০ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

শনিবার (১৯ জুলাই) স্থানীয় সময় সকাল থেকেই গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ ও খান ইউনিস এলাকায় শত শত মানুষ জড়ো হন ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)’ নামে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত এক বিতরণকেন্দ্রের সামনে। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বাহিনী ওই জায়গায় হঠাৎ করে গুলি চালানো শুরু করে। মুহূর্তের মধ্যে রক্তাক্ত হয়ে পড়ে সহায়তা প্রার্থীদের ভিড়। আল-জাজিরা ও দ্য গার্ডিয়ানসহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে।

মোহাম্মদ আল-খালিদি নামে একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, তারা ট্যাংক ও জিপ নিয়ে আসে, আর মানুষ পালাতে চেষ্টা করতেই শুরু করে নির্বিচারে গুলি। এটা ছিল ঠাণ্ডা মাথার গণহত্যা।

হিউম্যান রাইটস মনিটর-এর তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় সপ্তাহে এই জিএইচএফ-এর চারটি সহায়তা বিতরণকেন্দ্রের আশপাশে ইসরায়েলি গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ৬৭৪ জন। এসব কেন্দ্র নিয়েও জাতিসংঘের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে, যেখানে অনেকে এগুলোকে ‘নিরাপদ আশ্রয়’ নয়, বরং ‘মরণফাঁদ’ বলে বর্ণনা করেছেন।

একইদিন, গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালে প্রাণ হারায় একটি মাত্র ৩৫ দিন বয়সী শিশু, যার মৃত্যুর কারণ—চরম অপুষ্টি। 

হাসপাতালটির পরিচালক ডা. মুহাম্মদ আবু সালমিয়া বলেন, শুধু শনিবারই আমাদের হাসপাতালে অনাহারে অন্তত দু’জন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে একটি শিশুও রয়েছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে উপত্যকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে রেকর্ডসংখ্যক অপুষ্টিতে ভোগা শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক। প্রায় ১৭ হাজার শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে বলে জানানো হয়েছে। 

আরও পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে নিহত ৪১

জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) সতর্ক করে বলেছে, গাজায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় এর দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে।

নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের প্রধান ইয়ান এগেল্যান্ড জানান, গত ১৪২ দিনে একটি সহায়তা ট্রাকও গাজায় প্রবেশ করাতে পারিনি। ইউরোপীয় নেতারা যেভাবে সহায়তা প্রবাহ নিয়ে আশাবাদী বক্তব্য দিচ্ছেন, তা বাস্তবের সঙ্গে সম্পূর্ণ বিপরীত।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, মিশর সীমান্তে গাজার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানি মজুত থাকলেও ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞা তা কার্যত অবরুদ্ধ করে রেখেছে। 

সংস্থাটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছে, সীমান্ত খুলুন, অবরোধ তুলে নিন এবং আমাদের কাজ করতে দিন।

আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট ফেডারেশনের মহাসচিব জগন চাপাগাইন বলেন, গাজায় এখনকার দুর্দশা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে মারাত্মক মানবিক সংকটগুলোর একটি।

শুধু গাজার দক্ষিণাঞ্চলে নয়, শনিবার দিনভর তাল আল-হাওয়া, বন্দর এলাকা এবং শহরের কেন্দ্রীয় অংশে আইডিএফ ড্রোন ও বিমান হামলা চালায়। তাতে আরও অনেক হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া, মাছ ধরার সময় তিনজন ফিলিস্তিনি জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে ইসরায়েলি নৌবাহিনী। পশ্চিম তীরের রামাল্লা সংলগ্ন গ্রামগুলোতেও অভিযান চালিয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর টিয়ার গ্যাস ছোড়া হয়।

হামাসের সশস্ত্র শাখার মুখপাত্র আবু ওবাইদা শনিবার রাতে এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ইসরায়েল যদি গণহত্যা বন্ধ না করে, তাহলে আমরা প্রতিরোধ আরও তীব্র করব। ইসরায়েলি সেনাদের হত্যা ও বন্দি করার জন্য নতুন অভিযান শুরু হয়েছে।

একদিকে ইসরায়েলের লাগাতার হামলা, অন্যদিকে মানবিক সহায়তার প্রবেশে কঠোর নিষেধাজ্ঞা—এই দ্বিমুখী চাপের মধ্যে গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। শিশুদের মৃত্যু, খাদ্য সংকট এবং চিকিৎসাসেবার অবনতির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর আহ্বান উপেক্ষিত থাকায় বিশ্বের সামনে এক নির্মম মানবিক বিপর্যয় উদ্ভাসিত হচ্ছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়