News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২০:৩৯, ৩ অক্টোবর ২০২৫

১১ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্স উপসর্গ

১১ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্স উপসর্গ

ছবি: সংগৃহীত

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ ও রংপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অ্যানথ্রাক্সের নতুন প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের কিশামত সদর গ্রামে ১১ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৫ জন বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। 

অন্যদিকে রংপুরের কাউনিয়া, মিঠাপুকুর ও পীরগাছা উপজেলায়ও ১১ জন অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন।

কিশামত সদর গ্রামের ইউপি সদস্য মো. হাফিজার রহমান জানান, গত সোমবার ওই গ্রামের বাসিন্দা মাহবুর রহমানের একটি রোগাক্রান্ত গরু স্থানীয়রা জবাই করে মাংস কাটাকাটি করে নিয়ে যান। এতে অন্তত ১১ জন অংশ নেন। 

চারদিন পর বৃহস্পতিবার ওই ১১ জনের শরীরের বিভিন্ন অংশে ফোসকা ও মাংসে পচন ধরতে শুরু করে। বিশেষ করে হাত, নাক, মুখ ও চোখে উপসর্গগুলো দেখা দেয়।

আক্রান্তদের মধ্যে মোজা মিয়া, মোজাফফর মিয়া, শফিকুল ইসলাম ও মাহবুর রহমান বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। বর্তমানে তারা গাইবান্ধা রাবেয়া ক্লিনিক অ্যান্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. মোজাম্মেল হক জানান, “উপজেলার বেশ কিছু এলাকায় অ্যানথ্রাক্সের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। পৌরসভায় ইতোমধ্যে দুটি গরু মারা গেছে। সাহাবাজ এলাকায় প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় সেখানে টিকা প্রদান সম্পন্ন হয়েছে। আমাদের হাতে বর্তমানে ১৩ হাজার টিকা রয়েছে। আরও টিকার চাহিদা পাঠানো হয়েছে। টিকা পেলে দ্রুত গরু-ছাগলের মধ্যে প্রয়োগ করা হবে।”

তিনি আরও বলেন, রোগাক্রান্ত গরু-ছাগলের মাংস খেলে মানুষ আক্রান্ত হয় না। তবে আক্রান্ত পশুর পরিচর্যা করলে অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. দিবাকর বসাক বলেন, বেলকা ইউনিয়ন থেকে ৪-৫ জন অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে এসেছিল। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে গাইবান্ধা ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। আক্রান্ত পশু পরিচর্যা করার মাধ্যমেই মানুষের শরীরে এ রোগ ছড়াতে পারে।

আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ২৬৩, মৃত্যু নেই

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পাশের পীরগাছা উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে অ্যানথ্রাক্সের প্রকোপ থাকায় এর প্রভাব সুন্দরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ঘাঘট ও তিস্তা নদীবেষ্টিত বামনডাঙ্গা, সর্বানন্দ, তারাপুর, বেলকা ও পৌরসভা এলাকায় এর বিস্তার ঘটেছে। ইতোমধ্যে সর্বানন্দ, বামনডাঙ্গা, তারাপুর ও পৌরসভায় অ্যানথ্রাক্স টিকা প্রদান করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা সতর্ক করেছেন—অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গরু-ছাগল কোনো অবস্থাতেই জবাই করা যাবে না।

রংপুরের কাউনিয়া, মিঠাপুকুর ও পীরগাছা উপজেলায় ১১ জনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হওয়ায় আশেপাশের এলাকায় জনমনে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আতঙ্ক নয়, সচেতনতা জরুরি।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) তথ্যমতে, অ্যানথ্রাক্স একটি মারাত্মক প্রাণিবাহিত (জুনোটিক) রোগ, যা বাংলাদেশে বিশেষত উত্তরাঞ্চলে মানুষ ও পশুর জন্য গুরুতর হুমকি। তৃণভোজী প্রাণীরা মূলত এ রোগে আক্রান্ত হয় এবং আক্রান্ত পশুর সংস্পর্শে আসা, দূষিত চামড়া, পশম, হাড় অথবা কাঁচা বা অপর্যাপ্তভাবে রান্না করা মাংস খাওয়ার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ঘটতে পারে।

অ্যানথ্রাক্সের ইনকিউবেশন পিরিয়ড ১ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত হতে পারে। যদিও মানুষের মধ্যে এ সংক্রমণ তুলনামূলকভাবে কম, কিন্তু দেরিতে রোগ নির্ণয় হলে তা মারাত্মক হতে পারে।

আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আহমেদ নওশের আলম বলেন, অসুস্থ গরু বা ছাগল জবাই করলে অ্যানথ্রাক্স ছড়াতে পারে। তাই সবার প্রতি আমাদের পরামর্শ হলো, অসুস্থ পশু জবাই করবেন না এবং সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন। এটা ভয়ের নয়, বরং সতর্কতার বিষয়।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও আইইডিসিআরের সাবেক উপদেষ্টা ড. এম. মুশতাক হোসেন বলেন, অ্যানথ্রাক্স থেকে নিরাপদ থাকতে হলে অসুস্থ পশুকে জবাই করা যাবে না। অসুস্থ গরু বা ছাগলের চিকিৎসা করতে হবে। যদি মারা যায় তবে গভীর গর্ত খুঁড়ে মাটিচাপা দিতে হবে। কোনো অবস্থাতেই মৃত পশুকে খাল বা জলাশয়ে ফেলা যাবে না।

অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গের মধ্যে রয়েছে জ্বর, ক্ষতের মতো দেখতে গোলাকার ফুসকুড়ি ও চুলকানি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যান্টিবায়োটিক ও লোশনের মাধ্যমে এর চিকিৎসা পাওয়া যায়।

আইইডিসিআর জানিয়েছে, রংপুরে এবারই প্রথম অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হলো। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর আক্রান্ত এলাকায় পশুদের টিকা দিচ্ছে।

আইইডিসিআরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে অ্যানথ্রাক্স একটি এন্ডেমিক রোগ। ২০১০ সাল থেকে প্রায় প্রতিবছরই এর বিচ্ছিন্ন প্রাদুর্ভাবের খবর পাওয়া যায়। পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ২০১৯ সালে আইইডিসিআর সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মেহেরপুর, টাঙ্গাইল ও রাজশাহীর মোট ৯টি উপজেলায় সক্রিয় অ্যানথ্রাক্স নজরদারি কার্যক্রম চালু করে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় প্রতি বছর এ রোগ ফিরে আসার মূল কারণ হলো আক্রান্ত পশুর সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব। তারা জোর দিয়েছেন—অসুস্থ গবাদিপশু জবাই না করে চিকিৎসা ও সঠিক পদ্ধতিতে নিঃশেষ করার ওপর।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়